শুরু হচ্ছে নারী-শিশুদের অবস্থার ওপর পরিবারিক জরিপ
দেশের শিশু ও নারীদের অবস্থার ওপর সবচেয়ে বড় পারিবারিক জরিপ শুরু করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস)। ইউনিসেফের সহায়তায় জরিপটি পরিচালনা করবে বিবিএস। এই জরিপের মাধ্যমে নারী-শিশুর রক্তে সীসার মাত্রা ও রক্তশূন্যতাসহ একাধিক তথ্য জানা যাবে।
আজ মঙ্গলবার (১১ জুন) বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) ও ইউনিসেফ বাংলাদেশে মাল্টিপল ইন্ডিকেটর ক্লাস্টার সার্ভে (এমআইসিএস), রাউন্ড ৭ (২০২৪-২০২৫) চালুর আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিয়েছে। এমআইসিএস হলো এক ধরনের পারিবারিক জরিপ, যার মাধ্যমে শিশু ও নারী সম্পর্কিত প্রয়োজনীয় উপাত্ত সংগ্রহের মাধ্যমে তাদের বাস্তব পরিস্থিতি সম্পর্কে বাস্তব ধারণা লাভ করা যায়। এই প্রাপ্ত তথ্য-উপাত্ত তাদের উপযোগী নীতিমালা তৈরি, পরিকল্পনা গ্রহণ ও কর্মসূচি প্রণয়নে সহায়তা করে।
বিবিএস জানায়, এবারের জরিপে কিছু নতুন বৈশিষ্ট্য রয়েছে, যেমন- এই এমআইসিএসের মাধ্যমে বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো রক্তে সীসার মাত্রা (বিএলএল), ভারী ধাতুর মাত্রা, মাইক্রোনিউট্রিয়েন্টসের মাত্রা এবং রক্তশূন্যতা বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করা হবে। আমাদের চারপাশে সীসাসহ ভারী উপাদানের উপস্থিতি শিশুর স্বাস্থ্যের উপর মারাত্মক ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। তবে পরিবেশগত এই ঝুঁকি সময়মতো নির্ণয় ও মোকাবিলার মাধ্যমে পাঁচ বছরের কম বয়সী প্রতি তিনটি শিশু-মৃত্যুর একটি প্রতিরোধ করা সম্ভব। তাই এই জরিপ খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
সংস্থাটি জানায়, এমআইসিএস পরিচালনায় বিবিএস ও ইউনিসেফ কয়েক দশক ধরে একসঙ্গে কাজ করছে। বাংলাদেশে প্রথম এমআইসিএস পরিচালিত হয় ৩০ বছর আগে। এই জরিপগুলো দেশের নারী ও শিশুর জীবনযাত্রার মানোন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে। এই উপাত্ত ভাণ্ডার শিশুদের অধিকার রক্ষায় পরিবর্তনকারী নিয়ামক হিসেবে কাজ করে। পাশাপাশি ইউনিসেফের, নীতিনির্ধারকদের, সরকারের ও অংশীজনের কাজেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী মো. শহীদুজ্জামান সরকার বলেন, আমি বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো এবং ইউনিসেফকে অভিনন্দন জানাই মাল্টিপল ইন্ডিকেটর ক্লাস্টার জরিপ শুরু করার জন্য, যা আমাদের দেশে শিশু এবং সুবিধাবঞ্চিত নারীদের চাহিদার বিষয়ে সঠিক তথ্য সরবরাহ করবে। এই জরিপের ফলাফল আমাদের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার তথ্যের ঘাটতি পূরণ করতে এবং সময়োপযোগী তথ্যের মাধ্যমে কার্যকর পরিকল্পনা এবং বাস্তবায়ন সক্ষম করবে।
এই জরিপে স্বাস্থ্য, পুষ্টি, পানি, স্যানিটেশন, শিক্ষা ও শিশু সুরক্ষা বিষয়ে প্রায় ২০০টি সূচক অন্তর্ভুক্ত থাকবে। ২০৩০ সালের মধ্যে জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনের অগ্রগতি পর্যবেক্ষণ ও অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা ২০২০-২০২৫ মূল্যায়নে এই জরিপের উপাত্ত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
বিবিএস জানায়, ১৯৯০-এর দশকে ইউনিসেফ প্রথম এমআইসিএসের সূচনা করে। গত তিন দশক ধরে ইউনিসেফের সহযোগিতায় বিবিএস সফলভাবে এমআইসিএসের বেশ কয়েকটি রাউন্ড পরিচালনা করেছে। ২০১৯ সালে এমআইসিএস ৬৪ হাজার পরিবারের জরিপ করেছে এবং শিশু ও নারীদের জন্য ১৪৪টি সূচক তৈরি করেছে, যার মধ্যে ২৯টি সরাসরি রয়েছে।
বাংলাদেশে ইউনিসেফের রিপ্রেজেন্টেটিভ শেলডন ইয়েট বলেন, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর সঙ্গে মাল্টিপল ইন্ডিকেটর ক্লাস্টার সার্ভের পরবর্তী ধাপে কাজ করতে পেরে ইউনিসেফ গর্বিত। এই জরিপ প্রতিটি শিশুর প্রয়োজন ও তাদের অধিকার রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে। দেশের প্রধান দুই সিটি করপোরেশন ঢাকা উত্তর ও ঢাকা দক্ষিণসহ সারা দেশে এই জরিপ পরিচালিত হবে। তা ছাড়া, রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জনসংখ্যা ও তাদের আর্থ-সামাজিক পরিস্থিতি উপাত্ত এই জরিপে সংগ্রহ করে একটি আলাদা প্রতিবেদন তৈরি করা হবে।
প্রসঙ্গত, বিশ্বের সবচেয়ে সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের কাছে পৌঁছাতে বিশ্বের কঠিনতম কিছু স্থানে কাজ করে ইউনিসেফ। ১৯০টিরও বেশি দেশ ও অঞ্চলে সর্বত্র সব শিশুর জন্য আরও ভালো একটি পৃথিবী গড়ে তুলতে কাজ করছে ইউনিসেফ।