জাতীয়তাবাদী শক্তিকে ক্রমাগত হুমকি কখনোই সুখময় হবে না : রিজভী
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাম্প্রতিক বক্তব্যের তীব্র সমালোচনা করে দলটির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ বলেছেন, ‘জাতীয়তাবাদী শক্তির বিরুদ্ধে ক্রমাগত হুমকি কখনোই রাজনীতির ময়দান শান্ত, নিরাপদ ও সুখময় হয়ে উঠবে না। অগ্রদূত ও অগ্রগণ্য নেতা হিসেবে তারেক রহমান গণতন্ত্র ফেরানোর আন্দোলনে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। তার বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রীর মানহানিকর ও কুরুচিপূর্ণ হুমকির তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।’
আজ বৃহস্পতিবার (১৩ জুন) দুপুরে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন রিজভী।
গতকাল বুধবার জাতীয় সংসদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে আওয়ামী লীগের জনসভায় স্বাধীনতাবিরোধী বিএনপি-জামায়াত জোটের নেতৃত্বে পরিকল্পিতভাবে গ্রেনেড হামলা করা হয়। এ হামলার মামলায় তারেক রহমান ওরফে তারেক জিয়াসহ সাজাপ্রাপ্ত ১৫ জন আসামি বর্তমানে পলাতক রয়েছে। বিদেশে পলাতক আসামি মাওলানা তাজউদ্দীন, মো. হারিছ চৌধুরী ও রাতুল আহম্মেদ বাবু ওরফে রাতুল বাবুদের বিরুদ্ধে ইন্টারপোলের রেড নোটিশ জারি করা আছে।
প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘বেনজীর কাণ্ড, জেনারেল আজিজ কাণ্ড, লাখ লাখ কোটি টাকা পাচার কাণ্ড, অস্বাভাবিক ঋণখেলাপী কাণ্ড, মন্দ ঋণে ব্যাংক ধসে যাওয়া কাণ্ডে পৃষ্ঠপোষক আপনি। তাই আপনার সরকারের মুখ ঢাকতেই আবারও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানকে নিয়ে বিষোদগার শুরু করেছেন।’
রিজভী বলেন, ‘গতকাল জাতীয় সংসদে প্রশ্নোত্তর পর্বে শেখ হাসিনা ২১ আগস্টের বোমা হামলার মামলায় তারেক রহমানসহ ১৫ জন পলাতক রয়েছে বলে উল্লেখ করে জানিয়েছেন, এখন নাকি তাদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চালাবেন। বোমা হামলায় তারেক রহমানসহ বিএনপির অন্যান্য নেতাদের ফরমায়েশি রায়ে যে সাজা দেওয়া হয়েছে, সেটি যে সাজানো মামলায় ফরমায়েশি সাজা, তা আজ সর্বজনবিদিত। রাষ্ট্রের সব প্রতিষ্ঠানকে কব্জায় নিয়ে এই সাজা যে প্রতিহিংসা পূরণের সাজা, সেটি আজ বিশ্ব গণমাধ্যমেও প্রকাশিত হয়েছে। অহেতুক ক্রোধ ডামি সরকারের প্রধানমন্ত্রীকে আচ্ছন্ন করে রেখেছে। ভারত থেকে ফিরে এসে তাকে যেন মনে হচ্ছে, তিনি শক্তি সঞ্চয় করে এসেছেন। তিনি এখন যে শ্লাঘা বোধ করছেন, তার মধ্যে সঞ্চিত আছে ভারতের আশ্রয়। তারেক রহমানের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রীর প্রতিহিংসামূলক বক্তব্যে কানফাটানো আওয়াজে প্রায়শই শোনা যায়। যখন তিনি সম্পূর্ণরূপে দিশেহারা হয়ে পড়েন, তখনই তার ক্রোধ মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে।’
আসন্ন অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট প্রসঙ্গে বিএনপির এই মুখপাত্র বলেন, ‘বর্তমান ডামি সরকারের ডামি বাজেটে সাধারণ করদাতা ও উদ্যোক্তাদের সুবিধা দেওয়া হয়নি। গরিবদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ সহায়তা হচ্ছে সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীতে বরাদ্দ টাকা বৃদ্ধি করা হয়নি। প্রধানমন্ত্রী আপনার সরকার লুটেরা ও টাকা পাচারকারীদের প্রতিনিধি। আপনার সরকারের মুখ ঢাকতেই আবারও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানকে নিয়ে বিষোদগার শুরু করেছেন। ডিক্টেটর (স্বৈরশাসক) হিসেবে আপনার হুকুম পৃথিবীর সর্বত্র তামিল হবে না জেনে মাঝে মাঝেই বিষাক্ত গরল উদগীরণ করেন।’
রিজভী বলেন, ‘শেখ হাসিনা দেশের অর্থনীতির কাঠামো ভেঙে ফেলেছেন। শেখ হাসিনার নানা অঙ্গীকার আজও সূর্যের আলো দেখেনি। ডলার সংকট, জাতীয় রিজার্ভ তলানীতে চলে আসা, ব্যাংকগুলোর খালি হয়ে যাওয়ার, আইন বহির্ভূতভাবে ক্ষমতা ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিরা বিপুল অর্থবিত্তের মালিক হয়েছেন। যারা একদিন নিঃস্ব, নিঃসম্বল ও মুষিক ছিলেন তারা আজ আওয়ামী শাসকগোষ্ঠীর সহযোগিততায় ঐরাবতে পরিণত হয়েছেন। দেশে অস্থিরতার কুঝ্ব টিকায় এতটাই ঘন হয়ে উঠেছে, তিনি এখন সেগুলো সামাল দিতে না পেরে তারেক রহমানের বিরুদ্ধে হুমকি দিচ্ছেন।’
রুহুল কবির রিজভী আরও বলেন, ‘আমরা সুষ্পষ্টভাবে বলতে চাই—জাতীয়তাবাদী শক্তির বিরুদ্ধে ক্রমাগত হুমকি কখনোই রাজনীতির ময়দান শান্ত, নিরাপদ ও সুখময় হয়ে উঠবে না। দেশের জনগণ বাকশাল-২ এর অনন্ত শৃঙ্খল থেকে মুক্তির জন্য রুদ্ধশ্বাস অপেক্ষা করছেন। এই মুক্তির আদর্শই হচ্ছে গণতন্ত্র। আজ অগ্রদূত ও অগ্রগণ্য নেতা হিসেবে তারেক রহমান গণতন্ত্র ফেরানোর আন্দোলনে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। তার বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রীর এহেন মানহানিকর ও কুরুচিপূর্ণ হুমকির তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।’
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব হাবিব-উন-নবী খান সোহেল, স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক মীর সরাফৎ আলী সপু, সাংস্কৃতিক বিষয়ক সম্পাদক চিত্রনায়ক আশরাফ উদ্দীন উজ্জ্বলসহ অন্যান্যরা উপস্থিত ছিলেন।