সেন্টমার্টিন দ্বীপ ইস্যুতে সরকারের আচরণ দাসসুলভ : মির্জা ফখরুল
সেন্ট মার্টিন দ্বীপের সাম্প্রতিক ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, সরকারের নিশ্চুপ ভূমিকা নতজানু পররাষ্ট্রনীতির প্রকাশ। সেন্টমার্টিন দ্বীপ ইস্যুতে সরকারের আচরণ দাসসুলভ।
আজ শনিবার (১৫ জুন) এক আলোচনা সভায় বিএনপির মহাসচিব এই মন্তব্য করেন। জাতীয় প্রেসক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে বিএনপি সমর্থিত ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন ও ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের উদ্যোগে ‘১৬ জুন সংবাদপত্রের কালো দিবস’ উপলক্ষে এই আলোচনা সভা হয়। কালো দিবস ও বর্তমান প্রেক্ষাপট নিয়ে মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন বিএফইউজের মহাসচিব কাদের গনি চৌধুরী।
১৯৭৫ সালের ১৬ জুন চারটি পত্রিকা রেখে বাকিগুলো বন্ধ করে দেয় তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার। এজন্য সাংবাদিকদের একটি অংশ দিনটিকে কালো দিবস হিসেবে পালন করে আসছে।
মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘‘পত্রিকায় খবরে এসেছে, সেন্টমার্টিন দ্বীপ নিয়ে সংকট, সেখানে আতঙ্ক…… কি দুঃখজনক? মানে এটাকে কি বলব? কত ব্যর্থতা এই সরকারের যে আমার একটা দ্বীপ সেই দ্বীপে আমরা যেতে পারছি না, সেই দ্বীপে অন্যদেশ থেকে গেলেই গুলি করে মেরে ফেলা হচ্ছে। অথচ এখন পর্যন্ত সরকার কোনো রকমের কোনো বক্তব্য পর্যন্ত দেয়নি। হোম মিনিস্টার সাহেব বললেন, এখনো এমন কোনো অবস্থা হয়নি যে, এটাতে আমরা স্টেটমেন্ট দেব বা কিছু বলব। এই যে নতজানু… মিয়ানমারের মতো দেশকেও কিছু বলা যাবে না। এটা কতটা দাসসুলভ মনোভাব হতে পারে…. একটা কথা মনে পড়ে যে, দাস্য সুখে হাস্য মুখে। সুখ তো হাস্য সুখ, মুক্ত হাসি।”
‘‘সীমান্তে লোক মারছে একটা কথা বলে না, পানি দেয় না একটা কথা বলে না। আর সেন্ট মার্টিনে খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে। সেখানে কয়েক লাখ মানুষ বিপদগ্রস্ত হয়ে পড়েছে। অথচ এ নিয়ে সরকারের কোন মাথাব্যথা নেই।”
সাংবাদিকদের ঐক্যের আহ্বান
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘সাংবাদিকরা এক প্লাটফর্মে আসুন। আমি সবার কথা বলছি না, আমি গণতন্ত্রে যারা বিশ্বাস করেন, তারা যদি একই জায়গায় আসেন তাহলে কিন্তু আমার মনে হয় আপনারা অনেক বেশি শক্তিশালী হবেন। এখানে আমরা বিভক্তি দেখতে পাই। এই বিভক্তিটাকে এড়িয়ে দেখেন যারা সিনিয়র আছেন তারা চেষ্টা করেন, তরুণরা যারা আছেন তারা চেষ্টা করেন, এবার অন্তুত চেষ্টা করে যেন আমরা এক হই। এই লড়াইটা কিন্তু সহজ লড়াই নয়। ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে লড়াই, গণতান্ত্রিক সংগ্রাম খুবই কষ্টকর লড়াই। এই লড়াইটা একদিনে উল্টে যাবে, একদিনে পাল্টে যাবে তা হবে না…। এর মধ্যে মাঝে মাঝে নেমে যাবে… আবার উঠতে হবে সেভাবে কাজটা আমাদের করতে হবে।”
বিএনপির মহাসচিব আরও বলেন, ‘‘ঐক্যবদ্ধ হয়ে মানুষকে জাগিয়ে তুলতে হবে। মানুষ ছাড়া গণতান্ত্রিক লড়াই হবে না। রাতারাতি দুই-চারটা বোমটোম ফুটিয়ে দিয়ে দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে পারব না। বাংলাদেশে সমস্ত মানুষ যেদিন নেমে আসবে যেটা অতীতে আমাদের এদেশে হয়েছে, সেই কাজগুলো আমাদের করতে হবে, মানুষকে নামিয়ে আনতে হবে, মানুষকে জাগিয়ে তুলতে হবে, সব জায়গায় যেতে হবে। তরুণ-যুবকদের সক্রিয় করতে হবে।”
বেনজীরের বেনজীর কাজ
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘জাতির জন্য এর চেয়ে ঘন অমানিষা আর কখনো আসেনি। সব দিক দিয়ে আমাদের সমস্ত আশা-আকাঙ্খা সব দিক থেকে বিপন্ন করে দেওয়া হয়েছে। তারমধ্যে সংবাদকর্মী যারা আছেন যারা সাহস করে কাজ করছেন, তাদেরকে আমি কৃতজ্ঞতা জানাতে চাই, ধন্যবাদ জানাতে চাই।”
‘‘এই যে বেনজীরের বেনজীর কাজ এটা তো যেভাবেই হোক গণমাধ্যমে আপনারাই তুলে নিয়ে এসেছেন… আপনারাই বের করেছেন। এর মধ্যে কিন্তু অনেক কিছু বের হচ্ছে। আমি আজকেই একটি পত্রিকায় দেখলাম… সাবেক সেনাপ্রধান আজিজ (আজিজ আহমেদ) ঘটনাগুলো কিছু কিছু বের হয়ে আসছে…. যে ঘটনাগুলো ঘটিয়েছে এখন সে কিন্তু কর্মক্ষেত্রের বাইরে। তার ভাইদেরকে পাসপোর্ট পাইয়ে দেওয়ার জন্য সে পুরোপুরি জালিয়াতির আশ্রয় নিয়েছে। এটা ভাবা যায় না, সেনাবাহিনীর একজন সাবেক প্রধান তিনি এরকম জালিয়াতি করবেন? আমরা চিন্তা করতে পারি না, পুলিশ প্রধান সে এরকম ভয়াবহভাবে ডাকাতি করে গোটা দেশে একটা সাম্রাজ্য গড়ে তুলবে… তার দুর্নীতি চিন্তা করা যায় না। কিন্তু এরা সেটাকে সম্ভব করেছে।”
মির্জা ফখরুল আরও বলেন, ‘‘আমি কাল একটা টেলিভিশনে… সংবাদ প্রচারের আগে শেখ মুজিবু্র রহমানের কিছু বাণী প্রচার করা হয়। উনি (শেখ মুজিবুর রহমান) বলছেন, যারা সম্পদ লুণ্ঠন করে, সম্পদ পাচার করে নিয়ে যায়, তাদের এদেশের মাটিতে কোনো জায়গা নেই। আমি বলি, আজকে যারা ক্ষমতায় আছে তারা কি এটা একবারও শুনছে, দেখছে?”
‘‘কারা সম্পদ লুণ্ঠন করছে, কারা সম্পদ পাচার করছে… এটা দেশের প্রত্যেকটা মানুষ জানে। আপনারা (সাংবাদিকরা) হয়ত সব কিছু লিখতে পারেন না। আমরা কিছু কথা বলার চেষ্টা করি…. যেমন কয়েকদিন আগে বলেছি যে, নগদ টাকা পাচার করছে কীভাবে? প্রতিটি টাকায় তাদের পাঁচ পয়সা করে কমিশন আছে… এই কমিশনের টাকা কোথায় যায়? আমি এই সম্পর্কে কোনো উত্তর পাইনি।”
প্রতিরোধ করতে হবে
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘এখানে অনেকে শিক্ষা ব্যবস্থাকে ধ্বংসের কথা বলেছেন। শিক্ষা ব্যবস্থা ধ্বংস করবেই… এটা তো ওদের রাজনৈতিক লক্ষ্য। ওরা তো আপনাকে নির্ভরশীল করে দিতেই চায় না। আপনার কৃষ্টি, আপনার ধর্মবোধ, আপনার রাষ্ট্র চেতনা সব কিছু পরিবর্তন করতে চায় তারা। সেই জায়গায় আমাদেরকেই প্রতিরোধ করতে হবে, আমাদের দাঁড়াতে হবে। ছাত্রদের-তরুণদের অন্য্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে হবে। নানা প্রতিকূলতার মধ্যে আমাদেরকে বেরুতে হবে। এর মধ্যেই আমাদেরকে প্রতিবাদের চেষ্টা করতে হবে।”
ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টসহ নানা কালাকানুনের প্রতিকূলতার মধ্যে কাজ করার জন্য গণমাধ্যমের সাংবাদিকদের ধন্যবাদও জানান বিএনপির মহাসচিব। সাংবাদিকদের বেকারত্বের কঠিন সময় অতিক্রান্ত করছে উল্লেখ করে তাদের কষ্টের সাথে সহমর্মিতা প্রকাশ করেন মির্জা ফখরুল।
টেলিভিশনের ‘টক শো’তে সাংবাদিকদের কেউ কেউ তথ্য-উপাত্ত দিয়ে কথা বলেন সেজন্য তাদেরকেও ধন্যবাদ জানিয়ে আরও জোরালোভাবে সোচ্চার হওয়ার পরামর্শও দেন বিএনপি মহাসচিব।