সুনামগঞ্জে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি, বাড়ছে পানিবন্দি মানুষের সংখ্যা
সুনামগঞ্জে আগামী ৪৮ ঘণ্টায় আরও ভারী বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস দেওয়ায় মানুষের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। যত সময় যাচ্ছে বন্যা পরিস্থিতি ততো অবনতি হচ্ছে। জেলাজুরে বাড়ছে পানিবন্দি মানুষের সংখ্যা।
সুনামগঞ্জের সরকারি এসসি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে আশ্রয় নেওয়া হাছন নগর এলাকার রুবিনা বেগম (৪৫) জানান, গতকাল মঙ্গলবার বিকেল পর্যন্ত ঘরের ভেতরে থাকার চেষ্টা করেছেন। গবাদি পশু, হাঁস-মোরগ রেখে ঘর থেকে বের হতে চাননি। কিন্তু বিকেলে ঘরের মধ্যে গলা পর্যন্ত পানি হয়ে গেলে আর টেকা সম্ভব হয়নি। তাই পরিবারের সবাইকে নিয়ে আশ্রয়কেন্দ্রে উঠেছেন।
একই এলাকার আরেক গৃহিণী বুহিনা (৩০) জানান, গত তিন দিন ধরে বসত ঘরে পানি উঠেছে। নাওয়া-খাওয়া না থাকায় প্রাণে বাঁচতে স্কুলের আশ্রয়কেন্দ্রে উঠেছেন।
গত ২৪ ঘণ্টায় সুরমা নদীর পানি ৪০ সেন্টিমিটার কমে এখন বিপদসীমার ৪০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে নতুন করে সুনামগঞ্জ পৌরশহরের নতুনপাড়া, হাছন নগর, মল্লিকপুর, ওয়েজখালী, হাজিপাড়া, বাঁধনপাড়া, কালীপুরে ঘরের ভেতর হাঁটু থেকে কোমর পানি, কোথাও বুক পানি হয়ে আছে।
সুনামগঞ্জের ১২ উপজেলার মধ্যে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত ছাতক ও দোয়ারাবাজার উপজেলা। ছাতকের সব ইউনিয়নে বন্যা দেখা দেওয়ায় পাঁচ লাখ মানুষ পানিবন্দি। এই উপজেলার একমাত্র সড়ক পানির নিচে থাকায় সারা দেশের সঙ্গে সড়ক পথে সব যোগাযোগ বন্ধ। একইভাবে দোয়ারাবাজার উপজেলার সব ইউনিয়নের মানুষ বন্যার পানিতে ভোগান্তিতে পড়েছেন। সুনামগঞ্জ, বিশ্বম্ভপুর ও তাহিরপুরের একমাত্র সড়কেও কয়েক ফুট পানি।
সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মামুন হাওলাদার জানান, আগামী ৪৮ ঘণ্টায় আরও ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস রয়েছে। বৃষ্টি হলে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হবে। সুরমা নদীর পানি কমছে। তবে হাওর এলাকার পানি বাড়ছে।
মামুন হাওলাদার বলেন, লাগাতার ভারী বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে সুনামগঞ্জের সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। এতে জেলার পানি বন্দি মানুষের সংখ্যা ক্রমেই বেড়ে চলেছে। মানুষজন আশ্রয়কেন্দ্রে চলে যাচ্ছেন। সুনামগঞ্জ জেলার প্রায় উপজেলার রাস্তাঘাট, বসতবাড়ি সব কিছু পানির নিচে তলিয়ে গেছে।