জাতীয় সংসদের অধিবেশনে যা হলো আজ
টানা ছয় দিন বিরতির পর দ্বাদশ জাতীয় সংসদের বাজেট অধিবেশন আজ বৃহস্পতিবার (২০ জুন) বিকেল ৪টায় শুরু হয়। ঈদের আগে ১৩ জুন মুলতবি করা হয় অধিবেশন। এর আগে গত ৫ জুন স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে এই অধিবেশন শুরু হয়। পরদিন ৬ জুন নতুন ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত বাজেট সংসদে উত্থাপন করা হয়। সংসদে বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনা গত ১১ জুন থেকে শুরু হয়। শুক্রবার বাদে প্রতিদিন সকাল ১১টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত এবং সন্ধ্যা ৭টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত অধিবেশন চলবে। সরকার ও বিরোধী দলের সদস্যদের দীর্ঘ আলোচনা শেষে আগামী ৩০ জুন বাজেট পাস হবে।
আজ স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে একাধিক মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রী এবং সংসদ সদস্যরা বক্তব্য দেন, প্রশ্ন উত্থাপন করেন, সংশ্লিষ্টরা তার জবাব দেন। ঢাকা-৮ আসনের সংসদ সদস্য আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিমের প্রশ্নের জবাবে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, চলতি অর্থবছরে বিদ্যুৎ খাতে ৩১ হাজার ৮৩৩ কোটি ভর্তুকি দেওয়া হয়েছে।একই অর্থবছরে এলএনজি খাতে সরকার সাড়ে ৫ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দেওয়া হয়েছে।
বাহাউদ্দিন নাছিমের প্রশ্নের জবাবে নসরুল হামিদ বলেন, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে আড়াই হাজার কোটি টাকা, ২০১৯-২০ অর্থবছরে সাড়ে তিন হাজার কোটি, ২০২০-২১ অর্থবছরে দুই হাজার চারশ’ কোটি, ২০২১-২২ অর্থবছরে ছয় হাজার কোটি, ২০২২-২৩ অর্থবছরে ছয় হাজার ৩১৫ কোটি ও ২০২৩-২৪ অর্থবছরে সাড়ে ৫ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দেওয়া হয়েছে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে সাড়ে ছয় হাজার কোটি টাকা ভর্তুকির দরকার হবে বলে প্রতিমন্ত্রী জানান।
প্রতিমন্ত্রী জানান, ১৯৯৯-২০০০ থেকে ২০১৩-১৪ অর্থবছর পর্যন্ত বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি) ক্রমাগত লোকসানের সম্মুখীন হয়। ওই সময় সরকারকে উল্লেখযোগ্য অঙ্কের ভর্তুকি দিতে হয়। তবে, জ্বালানি তেলের দাম আন্তর্জাতিক বাজারে কমে যাওয়ার ফলে নভেম্বর ২০১৪ থেকে ২০২২-২৩ অর্থবছর পর্যন্ত সরকারকে জ্বালানি তেলে কোনও ভর্তুকি দিতে হয়নি। ২০২১-২২ অর্থবছরে ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের ফলে সৃষ্ট বৈশ্বিক পরিস্থিতির কারণে আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ায় বিপিসি দুই হাজার ৭০৫ কোটি ৬৪ লাখ টাকা লোকসান দেয়।
সরকার বর্তমানে ডাইনামিক প্রাইসিং ফর্মুলায় জ্বালানি তেলের মূল্য নির্ধারণ করে জানিয়ে নসরুল হামিদ বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে মিল রেখে দেশে জ্বালানি তেলের মূল্য সমন্বয় করায় এ খাতে কোনও ভর্তুকি দিতে হচ্ছে না।
চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরে সরকারের বাজেটে বিদ্যুৎ খাতে ভর্তুকির পরিমাণ ৩৫ হাজার কোটি টাকা উল্লেখ করে নসরুল হামিদ বলেন, ভর্তুকির অর্থের মধ্যে ৩১ হাজার ৮৩৩ কোটি টাকা প্রদান করা হয়েছে। এর মধ্যে ১১ হাজার ৭০০ কোটি নগদ ও ২০ হাজার ১৩৩ কোটি বন্ডের মাধ্যমে সমন্বয় করা হয়েছে।
নোয়াখালী-২ আসনের মোরশেদ আলমের প্রশ্নের জবাবে প্রতিমন্ত্রী জানান, অনুমোদনপ্রাপ্ত এলপিজি প্লান্টের সংখ্যা ৭৮টি। এর মধ্যে প্রাথমিক অনুমোদনপ্রাপ্ত ৫২টি, চূড়ান্ত অনুমোদনপ্রাপ্ত ২৪টি ও বিপিসির সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ ২টি।
মামুনুর রশীদ কিরণের প্রশ্নের জবাবে নসরুল হামিদ বলেন, ৬টি বিদ্যুৎ বিতরণকারী সংস্থা বা কোম্পানির মোট গ্রাহক ৪ কোটি ৭১ লাখ। প্রতিমন্ত্রী বলেন, বিদ্যুৎ বিল যাতে যথাযথ হয়, সে বিষয়ে বহুবিদ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। কারিগরি ও অকারিগরি কারণে অনেক সময় ভুতুড়ে বিলের ঘটনা ঘটতে পারে। ভুতুড়ে/অস্বাভাবিক বিল রোধকল্পে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে প্রি-পেইড/স্মার্ট প্রি-পেইড মিটার স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য মোহাম্মদ হুছামুদ্দীন চৌধুরীর প্রশ্নের জবাবে নসরুল হামিদ বলেন, দেশজুড়ে তীব্র তাপপ্রবাহের কারণে বিদ্যুতের ব্যবহার বাড়ায় গ্রামাঞ্চলে কিছু কিছু এলাকায় চাহিদার তুলনায় কম পাওয়ায় সীমিত আকারে লোডশেডিং হয়েছে।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, চাহিদার তুলনায় প্রাপ্তি কম হলে সাধারণত লোডশেডিং হয়। দেশজুড়ে তীব্র তাপপ্রবাহের কারণে বিদ্যুতের ব্যবহার বাড়ায় গ্রামাঞ্চলের কিছু কিছু এলাকায় সীমিত আকারে লোডশেডিং হয়েছে। এছাড়া রক্ষণাবেক্ষণ কাজে প্রয়োজনীয় সময়ের জন্য লোডশেডিং করা হয়। সরকার শহর ও গ্রামে সমতার ভিত্তিতে বিদ্যুৎ সরবরাহে সচেষ্ট রয়েছে। সেচ মৌসুমে গ্রামাঞ্চলে বিদ্যুৎ সরবরাহে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। তিন বলেন, অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ এবং বকেয়া পাওনা থাকলে নিয়ম অনুযায়ী বৈদ্যুতিক সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়। ভুতুড়ে বিলের সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পাওয়া গেলে যাচাইপূর্বক প্রতিকার এবং প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়া হয়।
স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য মো. সোহরাব উদ্দিনের অপর এক প্রশ্নের জবাবে বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী জানান, ২০০৯ সালের জানুয়ারি থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত ২৫ হাজার ৭৯৬ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হয়েছে। ফলে বিদ্যুতের স্থাপিত ক্ষমতা ক্যাপটিভ ও নবায়নযোগ্য জ্বালানিসহ ৩০ হাজার ৭৩৮ মেগাওয়াটে উন্নীত হয়েছে। দেশে চাহিদার চেয়েও স্থাপিত বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা বেশি। তবে কোভিড-১৯ মহামারি পরবর্তীতে ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ ও বৈশ্বিক জ্বালানি সংকটের কারণে পরিপূর্ণ সক্ষমতায় বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব হচ্ছে না। এর ফলে উৎপাদন সক্ষমতা থাকলেও কিছু কিছু স্থানে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহে সাময়িক অসুবিধা হচ্ছে। এছাড়া অত্যধিক গরম ও কোথাও কোথাও তাপপ্রবাহে চাহিদা বাড়ায় নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যাহত হচ্ছে।
বর্তমানে নবায়নযোগ্য উৎস থেকে ১৩১২ দশমিক ৭৬ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদিত হচ্ছে উল্লেখ করে আমাতুল কিবরিয়া কেয়া চৌধুরীর প্রশ্নের জবাবে প্রতিমন্ত্রী জানান, নবায়নযোগ্য উৎস থেকে চলমান ও প্রক্রিয়াধীন প্রকল্পগুলোতে উৎপাদিতব্য বিদ্যুতের পরিমাণ দাঁড়াবে ১২ হাজার ৫৪৭ দশমিক ২২ মেগাওয়াট। ২০৩০ সালের মধ্যে এগুলো জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হবে।
স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য মুহাম্মদ সাইফুল ইসলামের প্রশ্নের জবাবে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী বলেন, ২০২৫ সালের মধ্যে ৫০টি বিভিন্ন ধরনের কূপ খননের কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। এর সফল বাস্তবায়নে গড়ে দৈনিক ৬১৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস জাতীয় গ্রিডে যুক্ত করা সম্ভব হবে। এর মধ্যে ১১টির খনন ও ওয়ার্কওভার কার্যক্রম সমাপ্ত হয়েছে। যার মাধ্যমে দৈনিক ১২৬ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের উৎপাদন নিশ্চিত করা হয়েছে। দৈনিক ৩৩ মিলিয়ন ঘনফুট হারে গ্যাস জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হচ্ছে।
এই সংসদ সদস্যের অপর এক প্রশ্নের জবাবে প্রতিমন্ত্রী জানান, দেশে আবিষ্কৃত ২৯টি গ্যাসক্ষেত্রের মধ্যে ২০টি উৎপাদনরত, পাঁচটি পরিত্যক্ত এবং চারটির উৎপাদন কার্যক্রম চলমান।
আওয়ামী লীগের সদস্য এম. আবদুল লতিফের প্রশ্নের জবাবে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ জানান, বর্তমানে গ্যাসের চাহিদা প্রায় দৈনিক তিন হাজার ৮০০ থেকে চার হাজার মিলিয়ন ঘনফুট, যার বিপরীতে দেশীয় উৎপাদন ও এলএনজি আমদানি করে তিন হাজার থেকে তিন হাজার ১০০ এমএমসিএফডি গ্যাস সরবরাহ করা হচ্ছে। চাহিদা ও সরবরাহে ঘাটতি থাকায় পরিকল্পিত শিল্পাঞ্চলে এবং বিদ্যুৎ ও সার খাতে অগ্রাধিকার বিবেচনায় গ্যাস সংযোগ চালু রয়েছে।
অপরদিকে, ভোলা-৩ আসনের নুরুন্নবী চৌধুরীর প্রশ্নের জবাবে শিল্পমন্ত্রী নুরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন বলেন, শিল্প মন্ত্রণালয়ের নিয়ন্ত্রণাধীন বন্ধ/রুগ্ন শিল্পের সংখ্যা ৩৯৭টি। এর মধ্যে বিসিকের নিয়ন্ত্রণাধীন রুগ্ন/বন্ধ শিল্প ৩৮২টি, বিসিআইসির নিয়ন্ত্রণাধীন বন্ধ কারখানা পাঁচটি, বিএসএসআইসির নিয়ন্ত্রণাধীন স্থগিত চিনিকল ৬টি, বিএসইসির নিয়ন্ত্রণাধীন বন্ধ কারখানা চারটি।
এমপি আব্দুল কাদের আজাদের এক প্রশ্নের জবাবে নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন জানান, বর্তমান সরকার আন্তর্জাতিক ও বহুজাতিক কোম্পানিকে বাংলাদেশে বিনিয়োগে আকৃষ্ট করাসহ বিনিয়োগ সুবিধা বৃদ্ধির লক্ষ্যে ২০০৯ থেকে ২০২৩ সময়কাল পর্যন্ত বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে এবং সাফল্যও এসেছে। তিনি জানান, বিসিকের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির আওতায় ২০২৩-২৪ অর্থবছরে পাঁচটি শিল্পনগরী, তিনটি শিল্পপার্ক ও দুটি অন্যান্যসহ মোট ১০টি প্রকল্প বাস্তবায়নাধীন রয়েছে। প্রকল্পগুলো বাস্তবায়িত হলে তিন হাজার ৮১১টি শিল্প প্লটে সম্ভাব্য তিন হাজার ৫৬৫টি শিল্প ইউনিট স্থাপিত হবে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে আরএডিপিতে সবুজপাতাভুক্ত ১১টি প্রকল্প রয়েছে। প্রকল্পগুলো অনুমোদিত ও বাস্তবায়িত হলে দেশে শিল্পায়ন ত্বরান্বিত হবে এবং বেকার জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে।
মন্ত্রী জানান, বিনিয়োগে উৎসাহিতকরণের লক্ষ্যে বিসিক কর্তৃক ১২২টি শিল্প প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে ১৬৭টি শিল্প প্লট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। বিসিক উদ্যোক্তাদের বিনিয়োগে উৎসাহিত করার লক্ষ্যে হোসিয়ারি শিল্পনগরী, পঞ্চবটি, নারায়ণগঞ্জ; জামদানি শিল্পনগরী, তারাবো, নারায়ণগঞ্জ; চামড়া শিল্পনগরী, সাভার, ঢাকা; এপিআই শিল্পপার্ক, গজারিয়া, মুন্সীগঞ্জ এবং বিসিক বৈদ্যুতিক পণ্য উৎপাদন ও হালকা প্রকৌশল শিল্পনগরী, মুন্সীগঞ্জ শীর্ষক বিশেষায়িত শিল্পনগরী/শিল্পপার্ক বাস্তবায়িত হয়েছে। তিনি আরও জানান, চামড়া শিল্পনগরী প্রকল্পটি ১৯৯ দশমিক ৪০ একর জমিতে ঢাকার সাভারে বাস্তবায়িত হয়েছে। কমন ইনফ্লুয়েন্স প্লান্ট (সিইটিপি) সুবিধাসহ পরিবেশবান্ধব চামড়া শিল্পনগরীতে হাজারীবাগ ও দেশের বিভিন্ন স্থানে অবস্থিত ট্যানারি কারখানাগুলো স্থানান্তর করা হয়েছে। শিল্পনগরীর ২০৫টি শিল্পপ্লটে ১৬২টি ট্যানারি কারখানা স্থাপিত হয়েছে।
স্বতন্ত্র এমপি আব্দুল্লাহ নাহিদ নিগারের প্রশ্নের জবাবে শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন বলেন, বিসিকের দেশব্যাপী বাস্তবায়িত ৮২টি শিল্পনগরীর মোট ১২ হাজার ৩৬০টি শিল্পপ্লটের মধ্যে ১১ হাজার ২৬২টি শিল্পপ্লটে বেসরকারি উদ্যোক্তা কর্তৃক ছয় হাজার ১৯৬টি শিল্প প্রতিষ্ঠান স্থাপিত হয়েছে। এসব শিল্পনগরীর কারখানায় গত বছরের জুন পর্যন্ত বিনিয়োগ হয়েছে ৪৫ হাজার ৩৯৫ কোটি টাকা প্রায়।
এছাড়া, শরীয়তপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য এ কে এম এনামুল হক শামীম বলেন, খালেদা জিয়ারা আর যতই চক্রান্ত আর ষড়যন্ত্র করুক না কেন, বাংলার মানুষ কিন্তু ভোলেনি। তারা ক্ষমতায় ছিল, তখন গ্রামে ও গঞ্জে স্লোগান উঠেছিল—মা ও পুতে মিল্লা দেশ খাইলো গিল্লা।
শামীম আরও বলেন, ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে ঘাতকেরা সপরিবারে হত্যা করে। তারা ভেবেছিল, বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ করার আর কোন লোক থাকবে না।
এনামুল হক শামীম বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তিনি সততায়, মনবতায় সেরা ও সেরাদের সেরা। আগে বাংলাদেশের মানুষ বলত, আওয়ামী লীগের জন্য শেখ হাসিনা অপরিহার্য। আর এখন প্রতিটি গ্রামে গ্রামে শোনা যায়, বাংলাদেশে মানুষের জন্য বঙ্গবন্ধুকন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অপরিহার্য।
এমপি শামীম বলেন, খালেদা জিয়ার আমলে ‘তারা দুর্নীতিতে পরপর পাঁচ বার চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল। তারা দুর্নীতিতে অনার্স আর মানিলন্ডারিং এ মাস্টার্স।’
এই সংসদ সদস্য আরও বলেন, শিক্ষাগত যোগ্যতা সম্পন্ন খুনি তারেক জিয়া লন্ডনে বসে যতই ষড়যন্ত্র আর চক্রান্ত করুক না কেনো জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশকে কেউ ব্যাহত করতে পারবে না।
সংসদ সদস্য ও সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বলেছেন, কালো টাকাকে শতকরা ১৫টাকা কর দিয়ে সাদা করার ঘোষণায় যারা সৎ করদাতা তারা হতাশ হয়েছেন। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী উন্নয়নের গতিপ্রকৃতি গত ১৬ বছর ধরে যেভাবে ধরে রেখেছেন তা বিশ্বের বিস্ময়। বর্তমানে তার এ প্রবৃদ্ধি ধরে রাখার প্রধান প্রতিবন্ধক হচ্ছে দুর্নীতি। এই দুর্নীতির কারণে সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হচ্ছে। এই দুর্নীতির কারণে প্রকল্পগুলো যথা সময়ে শেষ হয় না। ফলে খরচ বাড়ে, জনগণের হয়রানি বাড়ে। আমলাদের একটি অংশ দুর্নীতি পরায়ণ হয়ে উঠেছেন এবং তাতে জনগণের হয়রানি বাড়ছে।
এ কে মোমেন বলেন, এই অল্প সংখ্যক দুর্নীতিপরায়ণ আমলাদের জন্য সারা আমলাতন্ত্র বদনামের ভাগীদার হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী দুর্নীতির ক্ষেত্রে জিরো টলারেন্স নীতি ঘোষণা করেছেন। এই বাজেটে দুর্নীতি ও বিদেশে টাকা পাচার বন্ধের নির্দেশনা ও যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ জনগণের আস্থা অর্জনে সহায়ক হবে। সরকারি কর্মচারীদের স্থাবর-অস্থাবর সম্পদের বার্ষিক হিসাব বাধ্যতামূলক করা এখন সময়ের দাবি। কিছু সংখ্যক দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তার কারণে দেশের সুনাম নষ্ট হচ্ছে। এসব ব্যাপারে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা এবং কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করলে দুর্নীতি কমবে।
সাবেক এ পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, জনপ্রতিনিধি হিসেবে, মাঠে ময়দানে সাধারণ নাগরিকদের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক। সাধারণ নাগরিক এখন অনেক চ্যালেঞ্জের মধ্যে আছে। তাই তারা সবাই জাতির আস্থা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দিকে তাকিয়ে আছেন।
আব্দুল মোমেন বলেন, সাধারণ নাগরিকের মধ্যে বড় প্রশ্ন রয়েছে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ে। অধিকতর কর্মসংস্থান, রাজস্ব বৃদ্ধি ও রন্ধ্রে রন্ধ্রে দুর্নীতি ও প্রশাসনের হয়রানি নিয়ে জনগণের নানা প্রশ্ন রয়েছে। তিনি বলেন, দেশে যথেষ্ট কর্মসংস্থান না থাকায় প্রতিবছর হাজার হাজার কর্মক্ষম লোক বৈধ ও অবৈধ পথে বিদেশে পাড়ি দিচ্ছে। কর্মসংস্থান বা উদ্যোক্তা সৃষ্টি সাধারণত প্রাইভেট সেক্টর করে থাকে। সেজন্য তাদের যথেষ্ট ব্যাংক ঋণ নেওয়ার সুযোগ থাকা উচিত। এবারের বাজেটে ঘাটতি মেটানোর জন্য ১ লাখ ৩৭ হাজার কোটি টাকা সরকার ব্যাংকিং খাত থেকে ঋণ নিচ্ছে। এর অর্থ হচ্ছে বেসরকারি বিনিয়োগকারীরা ঋণ থেকে বঞ্চিত হতে পারেন।
মোমেন বলেন, ইতোমধ্যে অনেক ব্যাংকের বেহাল অবস্থা। বাজেটে এর প্রতিকারের কথা থাকলে জনমনে আস্থা ফিরিয়ে আনা সম্ভব হতো। বরং, কালো টাকাকে শতকরা ১৫ টাকা কর দিয়ে সাদা করার ঘোষণায় যারা সৎ করদাতা তারা হতাশ হয়েছেন। কালো টাকা সাদা করার সুযোগের পরিমার্জন প্রয়োজন বোধ করি।
সাবেক এই পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, দেশের স্বার্থে, বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন সোনার বাংলা অর্জনে, সাদাকে সাদা, কালকে কালো না বললে শেখ হাসিনা সরকারের প্রতি অবিচার করা হয়। অর্থমন্ত্রী বিষয়গুলো বিবেচনায় নিয়ে জনগণের প্রত্যাশা পূরণে যা যা করা প্রয়োজন তা করবেন বলে বিশ্বাস করি।