সিলেটে পানিবন্দি সাড়ে ১০ লাখ মানুষ, নদী খননের প্রতিশ্রুতি প্রতিমন্ত্রীর
সিলেট অঞ্চলে ও উজানে বৃষ্টিপাত না হওয়ায় কমতে শুরু করেছে নদ-নদীর পানি। তবে, এখনও পানিবন্দি অবস্থায় আছেন ১০ লাখেরও বেশি মানুষ। আজ শুক্রবার (২১ জুন) এ তথ্য জানায় জেলা প্রশাসন। পাঁচ দিন পর সূর্যের দেখা পেয়েছে সিলেটবাসী। এতে বানভাসী মানুষের মধ্যে কিছুটা স্বস্তি ফিরে এসেছে। ইউএনবির প্রতিবেদনে এতথ্য জনানো হয়েছে। অন্যদিকে, বাসস বলছে, সিলেটবাসীকে বন্যার কবল থেকে রক্ষা করতে সুরমা ও কুশিয়ারাসহ সুনামগঞ্জের ২০টি নদী খনন করা হবে বলে জানিয়েছেন পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক।
সিলেট জেলা প্রশাসন জানিয়েছে, বৃহস্পতিবারের থেকে শুক্রবার দ্রুতগতিতে কমছে সিলেটের নদ-নদীগুলোর পানি। এতে বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে।
জেলা প্রশাসন আরও জানায়, দ্বিতীয় দফার বন্যায় সিলেটে ১০ লাখ ৪৩ হাজার ১৬১ জন মানুষ পানিবন্দি। এর মধ্যে সিটি করপোরেশনের ৪২টি ওয়ার্ডের মধ্যে ২৯টি ওয়ার্ডে বন্যাদুর্গত প্রায় ৬০ হাজার মানুষ। ৭১৩টি আশ্রয়কেন্দ্রে এখন পর্যন্ত আশ্রয় নিয়েছেন ২৮ হাজার ৯২৫ জন। এই জেলার ১৫৩টি ইউনিয়নের মধ্যে ১৩৬টি ইউনিয়নের এক হাজার ৬০২টি গ্রাম বন্যায় প্লাবিত হয়েছে। এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি গোয়াইনঘাট, জৈন্তাপুর, গোলাপগঞ্জ, কোম্পানীগঞ্জ, কানাইঘাট, জকিগঞ্জ, বিশ্বনাথ ও ওসমানী নগর উপজেলায়।
শুক্রবার বেলা ১২টা পর্যন্ত সিলেট পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) দেওয়া তথ্যমতে, সিলেটের প্রধান দুটি নদী সুরমা ও কুশিয়ারার কয়েকটি পয়েন্টে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হলেও আগে থেকে অনেকটা কমেছে পানি।
সিলেট আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ শাহ মোহাম্মদ সজীব হোসাইন জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় বৃষ্টির পরিমাণ ছিল ২০ মিলিমিটার। বৃহস্পতিবার দুপুর থেকে শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত কোনো বৃষ্টিপাত হয়নি। একইভাবে গত ২৪ ঘণ্টায় ভারতের চেরাপুঞ্জিতেও কোনো বৃষ্টিপাতের খবর পাওয়া যায়নি।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তথ্যমতে, শুক্রবার দুপুর ১২টায় সুরমা নদীর পানি কানাইঘাট পয়েন্টে বিপৎসীমার ৫৮ সেন্টিমিটার ও সিলেট পয়েন্টে ১৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। কুশিয়ারা নদীর অমলসীদ পয়েন্টে ৫৫ সেন্টিমিটার ও শেওলা পয়েন্টে পানি পাঁচ সেন্টিমিটার এবং একই নদীর ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টে ১০৩ ও শেরপুর পয়েন্টে ২০ সেন্টিমিটার বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী দীপক রঞ্জন দাশ বলেন, নতুন করে বৃষ্টি না হওয়ায় পানি কিছুটা কমতে শুরু করেছে। বৃষ্টিপাত আর পাহাড়ি ঢল না হলে পরিস্থিতির দ্রুত উন্নতি হবে।
এদিকে, বাসসের প্রতিবেদন বলছে, পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক বলেছেন, সিলেটবাসীকে বন্যার কবল থেকে রক্ষা করতে সুরমা ও কুশিয়ারাসহ সুনামগঞ্জের ২০টি নদী খনন করা হবে। আজ শুক্রবার সকালে সিলেট নগরীর ক্বীণ ব্রিজ এলাকায় সুরমা নদী পরিদর্শনের সময় তিনি একথা জানান। প্রতিমন্ত্রী বলেন, সিলেটবাসীকে বন্যার কবল থেকে রক্ষা করতে সব ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রী সিলেটের বন্যার খোঁজ-খবর রাখছেন। তিনি আমাকে সব সময় সজাগ থেকে কাজ করার নির্দেশ দিয়েছেন। আমার আসার আগে এই সিলেটের ত্রাণ ও দুর্যোগ প্রতিমন্ত্রীকেও তিনি পাঠিয়েছেন। সার্বক্ষণিক তিনি সিলেটের খবর রাখছেন এবং সিলেটবাসীকে বন্যার কবল থেকে রক্ষায় যা যা করণিয় তা করার নির্দেশ প্রদান দিয়েছেন।