বন্যার পানিতে ডুবে চার শিশু ও এক তরুণীর মৃত্যু
নেত্রকোনার পূর্বধলা ও দুর্গাপুর উপজেলায় বন্যার পানিতে ডুবে চার শিশু ও এক নারীর মৃত্যু হয়েছে। আজ রোববার (২৩ জুন) সকালে ও দুপুরে এই প্রাণহানির ঘটনা ঘটে।
নিহত চার শিশু হলো তাসকিন (৭), নোমান (৮), জাহাঙ্গীর মিয়া (৫) ও আফিয়া আক্তার (২)। আর নিহত তরুণী হলেন সালমা আক্তার (২১)
দুর্গাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) উত্তম চন্দ্র দেব ও পূর্বধলা থানার ওসি মুহাম্মদ রাশেদুল ইসলাম মৃত্যুর বিষয় নিশ্চিত করেছেন।
নিহত শিশু তাসকিন সদর উপজেলার সাতপাই গ্রামের মো. আল মামুনের ছেলে, নোমান পূর্বধলার ধলামূলগাঁও ইউনিয়নের পাঁচমারকেন্ডা গ্রামের মোহাম্মদ আলীর ছেলে, আর জাহাঙ্গীর ময়মনসিংহ জেলার গৌরীপুর উপজেলার কুল্লাতলী গ্রামের জহিরুল ইসলামের ছেলে। আফিয়া দুর্গাপুর উপজেলার কুল্লাগড়া ইউনিয়নের শশারপাড় গ্রামের ইমরান মিয়ার মেয়ে এবং নিহত তরুণী সালমা আক্তার পূর্বধলা উপজেলার বিশকাকুনী ইউনিয়নের বিশকাকুনী গ্রামের মফিজুল ইসলামের স্ত্রী।
এলাকাবাসীর বরাত দিয়ে পুলিশ জানায়, সদর উপজেলার সাতপাই উল্লাবাড়ি গ্রামের আল মামুনের ছেলে তাসকিন গতকাল শনিবার বিকেলে মা-বাবার সঙ্গে পাঁচমারগেন্ডা গ্রামে নানা আমছর আলীর বাড়িতে বেড়াতে আসে। তাসকিন তার নানার বাড়িতে খালাতো ভাই নোমানকে সঙ্গে নিয়ে সাড়ে গতকাল বেলা সাড়ে ৩টার দিকে ঘুরতে বের হয়। সাড়ে ৪টায় বাড়িতে ফিরে না আসায় আত্মীয়স্বজনসহ অনেক খোঁজাখুঁজি করে না পেয়ে এলাকায় মাইকিং করে। পরে আজ সকালে তাদের নানি পারভিন আক্তার বাড়ির উত্তর পাশে কংস নদের শাখা দেইড়াগাঙ্গে দুজনের মরদেহ ভাসমান অবস্থায় দেখতে পায়। পরে তাদের উদ্ধার করে নিজ বাড়িতে নিয়ে আসে। স্থানীয়রা থানা পুলিশকে সংবাদ দিলে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করে দাফনের অনুমতি দেয়।
অপরদিকে গতকাল সকালে উপজেলার আগিয়া ইউনিয়নের টিকুরিয়া গ্রামের নবাব আলীর মেয়ে ও বিশকাকুনী ইউনিয়নের বিশকাকুনী গ্রামের মফিজুল ইসলামের স্ত্রী সালমা আক্তার বাবার বাড়িতে বেড়াতে আসেন। আজ সকালে হাতমুখ ধোয়ার সময় বাড়ির সামনের পুকুরে পড়ে যান। এরপর ঘরে ফিরতে দেরি হওয়ায় তাঁর মা জোৎস্না বেগমসহ বাড়ির আশপাশে খোঁজাখুঁজি করে পুকুর থেকে তাঁকে উদ্ধার করে। পরে পূর্বধলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।
এদিকে দুর্গাপুরের তেরী বাজারে দাদি উম্মে হানির সঙ্গে বেড়াতে আসে জাহাঙ্গীর। আজ সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বাড়ির অন্য দুই শিশুর সঙ্গে সোমেশ্বরী নদীতে গোসল করতে নামে। একপর্যায়ে সে পানিতে তলিয়ে যায়। অন্য দুই শিশু বাড়ি ফিরে জাহাঙ্গীর নদীতে ডুবে যাওয়ার বিষয়টি সবাইকে জানালে পরিবারের লোকজন নদীতে গিয়ে খোঁজাখোঁজি শুরু করে। একপর্যায়ে তার নিথর দেহ উদ্ধার করে দুর্গাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
অপরদিকে আজ দুপুর ১টার দিকে শিশু আফিয়া বাড়ির উঠানেই খেলা করছিল। ঘরে কাজে ব্যস্ত ছিল তার মা। হঠাৎ আফিয়াকে উঠানে না পেয়ে খোঁজাখুঁজি শুরু করে পরিবারের লোকজন। একপর্যায়ে বসতবাড়ির পাশের পুকুর থেকে তাঁর নিথর দেহ উদ্ধার করে। পরে দুর্গাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
পূর্বধলা থানার ওসি মুহাম্মদ রাশেদুল ইসলাম ও দুর্গাপুর থানার ওসি উত্তম চন্দ্র দেব জানান, পরিবারের পক্ষ থেকে কোনো অভিযোগ না থাকায় তাদের মরদেহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।