উদ্যানে সর্বসাধারণের প্রবেশ হতে পারে রাষ্ট্রের উৎকৃষ্ট বিনিয়োগ : পবা
সম্প্রতি সরকার জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যান হিসাবে পরিচিত বোটানিক্যাল গার্ডেন এবং রাজধানী ঢাকার বলধা গার্ডেন, কক্সবাজারের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্ক, মৌলভিবাজারের লাউয়াছড়া ও সাতছড়ি জাতীয় উদ্যান, চট্টগ্রামের বাঁশখালী ইকোপার্ক ও ময়মনসিংহ মধুটিলা ইকোপার্ক—এ ছয়টি উদ্যান, পার্কের প্রবেশ মূল্য এক লাফে পাঁচ গুণ বাড়িয়ে ১০০ টাকা করা হয়েছে। পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের বন অধিশাখা-১ কর্তৃক জারিকৃত এ প্রজ্ঞাপন ধ্বংসাত্মক, জনবিরোধী ও নিন্দনীয়। সম্প্রতি রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবে পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা) আয়োজিত এক এক সেমিনারে এ সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের আহ্বান জানানো হয়।
পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের (পবা) সাধারণ সম্পাদক মেসবাহ উদ্দিন আহমেদ সুমন পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ঢাকাসহ সারাদেশে সর্বসাধারণের ব্যবহার উপযোগী নিরাপদ ও স্বাচ্ছন্দময় জনসমাগমস্থল (পাবলিক প্লেস) সীমিত। সেখানে বিভিন্ন লেক, পার্ক, উদ্যান কিংবা খেলার মাঠ ক্রমশ সাধারণের প্রবেশ বিভিন্ন উপায়ে নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। এতে নানাভাবে মারাত্মক নেতিবাচক সমাজে পড়ছে। বিশেষ করে, নিরাপদ, স্বাচ্ছন্দ্যময় ও অবারিত শারীরিক-মানসিক স্বস্তির স্থানগুলোতে প্রবেশাধিকার ক্রমশ সংকুচিত হয়ে পড়ায় সামাজিক বন্ধন নষ্ট হয়ে যাচ্ছে, শিশু-কিশোরসহ সব প্রকার সাধারণ মানুষ একাকী হয়ে পড়ছে। এটি জনসাধারণের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য হুমকিস্বরূপ। এসব কারণে মোবাইল আসক্তি, নেশাগ্রস্ত হওয়া, মুটিয়ে যাওয়াসহ বিভিন্ন অসংক্রামক রোগের ঝুঁকি বাড়ছে। সুস্থ শারিরীক ও মানসিক বিনোদনের অভাবে শিশু-কিশোরেরা ‘কিশোর গ্যাং’ এর মতো ধ্বংসাত্মক কাজেও জড়িয়ে পড়ছে।
পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের (পবা) পক্ষ থেকে বলা হয়, সব ধরনের উদ্যান ও উন্মুক্ত জনসমাগমস্থলে জনপ্রবেশ অধিকার যত সঙ্কুচিত হবে, দেশে হাসপাতাল ও কারাগারের সংখ্যা তত বাড়বে। যেখানে ঢাকাসহ দেশের মানুষকে গাছ ও উদ্যান, পার্কমুখী করা প্রয়োজন, শরীর চর্চা ও বিনোদনের সুযোগ অবারিত রাখা প্রয়োজন, সেখানে প্রবেশ ফি আরোপ ও বৃদ্ধির মতো বাণিজ্যিক সিদ্ধান্ত তরুণ প্রজন্ম, শিক্ষার্থী ও গবেষক, সাধারণ মানুষ ও দরিদ্র জনগণকে উদ্যানবিমুখ করে তুলবে। বাংলাদেশের সংবিধানের ১৫(গ) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, রাষ্ট্র অন্যতম মৌলিক দায়িত্ব হিসাবে নাগরিকের যুক্তিসঙ্গত বিশ্রাম, বিনোদন ও অবকাশের অধিকার নিশ্চিত করবে।
সেমিনারে বলা হয়, কিশোর-তরুণদের মধ্যে যদি গাছের গুরুত্ব বোঝানো যায়, প্রকৃতি-জীববৈচিত্র্য-পরিবেশের প্রতি আগ্রহী করে তোলা যায়, খেলাধুলা ও সুস্থ ধারা বিনোদনের প্রতি আগ্রহী করা যায়, তাহলে তারা শারীরিক ও মানসিকভাবে ইতিবাচক এবং সামাজিক হয়ে উঠবে। তাদের নেশাগ্রস্ত, মোবাইলসহ যন্ত্রের প্রতি আসক্ত ও একাকিত্বে ভোগার প্রবণতা কমে আসবে। কিশোর গ্যাংয়ের মতো ধ্বংসাত্মক কাজে যুক্ত হওয়ার ঝুঁকি কমবে। প্রকৃতি, পরিবেশ এবং জীববৈচিত্র্য সুরক্ষা এবং খেলাধুলার প্রতি শিশু-কিশোরদের আগ্রহী করে তোলা আমাদের সমাজের একটি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব।
পবার পক্ষ থেকে বলা হয়, বাংলাদেশে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে সাবের হোসেন চৌধুরীর মতো একজন পরিবেশ-সংবেদনশীল মন্ত্রীর সময়কালে এ ধরনের সিদ্ধান্ত হতাশাজনক। আমরা আশা প্রকাশ করি, ইতোমধ্যে পরিবেশমন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরী বিষয়টি অবগত হয়েছেন এবং এ সিদ্ধান্তটি পুনর্বিবেচনা করার জন্য অনুরোধ করা যাচ্ছে।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, পবা বিশ্বাস করে, সরকার জনস্বার্থে অবিলম্বে সব জনসমাগমস্থল (পাবলিক প্লেস) সব বয়সী মানুষের জন্য উন্মুক্ত রাখবে এবং বিনামূল্যে প্রবেশের সুযোগ রাখবে। আগামী প্রজন্মের শারীরিক ও মানসিক সুস্থতার জন্য সব মাঠ, পার্ক, লেক ও উদ্যানের প্রবেশ মূল্য উঠিয়ে বিনা ফি-তে প্রবেশের ব্যবস্থা রাষ্ট্রের একটি উৎকৃষ্ট বিনিয়োগ হতে পারে।