‘কোটা পদ্ধতি আত্মহত্যা করতে বাধ্য করেছে’
তৃতীয় দিনের মতো ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক প্রায় সাড়ে তিন ঘণ্টা অবরোধ করে রেখেছিল কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) শিক্ষার্থীরা। আজ সোমবার (৭ জুলাই) বেলা সাড়ে ৩টায় সদর দক্ষিণ উপজেলার কোটবাড়ী অংশে এই সড়ক অবরোধ করে শিক্ষার্থীরা।
কোটাবিরোধী আন্দোলনে সারা দেশে ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচির অংশ হিসেবে এই অবরোধে অংশ নেয় শিক্ষার্থীরা। ফলে সড়কের দুই পাশে প্রায় ১৩ কিলোমিটার এলাকায় যানজটের সৃষ্টি হয়।
শিক্ষার্থীদের এই অবরোধ শেষ হয় সন্ধ্যা ৭টা বেজে ২০ মিনিটে। অবরোধ শেষে শিক্ষার্থীরা জানায় আগামী দিনে ক্যাম্পাসমুখী কর্মসূচি পালন করা হবে।
কুবি শিক্ষার্থীদের আজকের আন্দোলনে একাত্মতা ঘোষণা করে অংশ নেয় ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজসহ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত কলেজ, জেলার বিভিন্ন প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীরা।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, কুবির এক শিক্ষার্থী সাদা কাপড় গায়ে জড়িয়ে প্রতীকী গাছে ঝুলে রয়েছেন। তার গাঁয়ের সাদা কাপড়ে লেখা ‘মেধা থাকার পরও কোটা পদ্ধতি আমাকে বাঁচতে দেয়নি', ‘কোটা পদ্ধতি তোর ছেলেকে আত্মহত্যা করতে বাধ্য করেছে মা'।
এ সময় উপস্থিত আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা ‘লড়াই লড়াই লড়াই চাই, লড়াই করে বাঁচতে চাই’; ‘আমার সোনার বাংলায়, বৈষ্যমের ঠাই নাই’; ‘লেগেছে রে লেগেছে, রক্তে আগুন লেগেছে’; ‘একাত্তরের হাতিয়ার, গর্জে উঠুক আরেকবার’; ‘সারা বাংলায় খবর দে, কোটা প্রথার কবর দে’ ইত্যাদি স্লোগান দেয়।
আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী কুবির গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী ফরহাদ কাউসার বলেন, ‘আমরা সব জায়গা থেকে অযৌক্তিক কোটা পদ্ধতির বাতিল চাই। যতক্ষণ পর্যন্ত কোটা পদ্ধতি বাতিল না হচ্ছে তত দিন পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন চলবে।’
কুবির বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী সাইফুল মালেক আকাশ বলেন, ‘কোটা পদ্ধতি বাতিলের দাবিতে আমরা তৃতীয় দিনের মত ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করেছি। বৈষম্যমূলক কোটা পদ্ধতি বাতিল করতে হবে। এটাই আমাদের একমাত্র দাবি। বৈষম্যমূলক কোটা পদ্ধতি বাতিল করে মেধাবীদের মুক্তি দিন।’
আন্দোলন চলাকালে শিক্ষার্থীরা মহাসড়কে ক্রিকেট-ফুটবল খেলায় মেতে উঠে। এ ছাড়া অবরোধ চলাকালে সব যান চলাচল বন্ধ থাকলেও অ্যাম্বুলেন্সগুলো ছেড়ে দেন অবরোধকারীরা।
অবরোধ শেষে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষার্থী ও আন্দোলন সমন্বয়কদের মধ্যে অন্যতম মোহাম্মদ সাকিব হোসাইন বলেন, ‘আমরা আজকের মতো আন্দোলন শেষ করছি এখানে। আপাতত আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, আমরা ক্যাম্পাসেই শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করব। আলোচনা করে পরবর্তী কর্মসূচির ঘোষণা দিব।‘
সদর দক্ষিণ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রুবাইয়া খানম বলেন, ‘আমরা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করেছি। শিক্ষার্থীরা আজ সন্ধ্যা ৭টায় অবরোধ তুলে নেয়। এখন মহাসড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক আছে।’
এর আগে গত ৪ ও ৬ জুলাই ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক যথাক্রমে তিন ঘন্টা ও চার ঘণ্টা অবরোধ করে রাখে কুবির শিক্ষার্থীরা।