উপজেলা চেয়ারম্যান হতে চেয়েছিলেন আবেদ আলী
দীর্ঘদিন এলাকায় না এলেও পাঁচ বছর ধরে নিজ এলাকা মাদারীপুরের ডাসার উপজেলার পশ্চিম বোতলা গ্রামে আসা-যাওয়া শুরু করেন আবেদ আলী। উঠে-পড়ে লাগেন ডাসার উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হতে। তাই তো নিজের পক্ষে সভা-সেমিনার, মিছিলে বড় ছেলে সোহানুর রহমান সিয়ামকে হাতিয়ার করে চালান প্রচারণা। আর সিয়ামও বাবার পক্ষে দিন-রাত চালান প্রচারণা। দেন বিভিন্ন আশ্বাসের ফুলঝুঁড়ি। কিন্তু সেই আশায় গুড়েবালি।
উপজেলা চেয়ারম্যান হওয়ার আগেই প্রশ্নপত্র জালিয়াতির ঘটনায় বাবাছেলে গ্রেপ্তার হয়েছেন। বিষয়টি জানাজানি হওয়ায় এখন তাদের শাস্তি দাবি করছে এলাকাবাসী।
পিএসসির চেয়ারম্যানের সাবেক গাড়িচালক আবেদ আলীর গ্রামের বাড়িতে গিয়ে জানা যায়, তিন তলাবিশিষ্ট দৃষ্টিনন্দন বাড়ি। ফটকে তালা ঝুলানো। উৎসুক জনতা বাড়ির সামনে জড়ো হয়ে ছবি তুলছে। অনেকে আবার তাঁর কর্মকাণ্ড নিয়ে আলোচনা করছে। তাদের আলোচনা বাপ-বেটাকে নিয়ে। কীভাবে এত বড় জালিয়াতি করলেন তাঁরা—এমন প্রশ্নই জনতার মুখে।
গণমাধ্যমকর্মী পেয়ে আবেগে করলেন নানা প্রশ্ন। অনেকেই বলছেন, ছেলে সিয়ামকে দিয়ে সুন্দর সুন্দর কথা বলে ডাসার উপজেলা চেয়ারম্যান হতে চেয়েছিলেন আবেদ আলী।
স্থানীয় তৌহিদ সজীব নামে এক ছাত্রলীগনেতা বলেন, ‘পিএসসি চেয়ারম্যানের গাড়িচালক আমাদের ডাসার উপজেলার মানবতার ফেরিওয়ালা আবেদ আলী ও তার ছেলের জন্য আমরা বালিগ্রামের সন্তান পরিচয় দিতে লজ্জাবোধ করছি। এমন লোক যদি উপজেলা চেয়ারম্যান হতো, তাহলে আমাদের ডাসারকে শ্মশান করে ফেলত। আল্লাহ তাদের বাপ-বেটা থেকে আমাদের ডাসারকে মুক্ত করেছে।’
স্থানীয় একাধিক ব্যক্তি জানায়, আবেদ আলী আগে এলাকায় না এলেও কয়েক বছর ধরে বাড়িতে আসা যাওয়া শুরু করেন, তাদের উদ্দেশ্যই ছিল উপজেলা চেয়ারম্যান হওয়া। ছেলে সিয়ামকে দিয়ে গবির-অসহায়দের আর্থিক সহযোগিতা, কোরবানির মাংস বিতরণ, ঈদ সালামিসহ নানা কর্মকাণ্ড করে মানুষের মন ভোলানোর চেষ্টা করেছেন। সিয়াম বাপের পক্ষে একাধিক মসজিদ-মন্দিরে বাবার জন্যে ভোট প্রার্থনা করেছেন। তাঁর বাবার মতো মানুষকে আগামী উপজেলা নির্বাচনে ভোট দিতে আহ্বান করেছেন। কিন্তু সেই আশায় গুঁড়েবালি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একব্যক্তি বলেন, গত কোরবানির ঈদে দামি গাড়িতে চড়ে ১০০ জনের মধ্যে এক কেজি করে মাংস বিতরণ করেন সিয়াম। সেই ভিডিও শেয়ার করেন নিজের ফেসবুকে। তাঁরা একটি গাড়ি নয়, একাধিক দামি গাড়ি ব্যবহার করেন। তিনি পড়েছেন ভারতের শিলংয়ে। দেশের একটি ব্যয়বহুল বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়েও তিনি পড়ালেখা করেন। তিনি ডাসার উপজেলা ছাত্রলীগের সহসভাপতি। প্রভাব জাহির করার জন্য বড় বড় নেতা ও আমলাদের সঙ্গে ছবি তুলে বাবা-ছেলে ফেসবুকে বুস্ট করে ব্যাপকভাবে প্রচার চালান। আর আবেদ আলী নিজে তাঁর ফেসবুক পেজে একটি হোটেল নির্মাণের তথ্য তুলে ধরেছেন।
এরই মধ্যে আবেদ আলী ও তাঁর ছেলে সিয়ামকে পিএসসির প্রশ্নপত্র ফাঁস চক্রের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেপ্তার করেছে সিআইডি। অন্যদিকে সিয়ামকে ঢাকা উত্তর ছাত্রলীগের ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সম্পাদক পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। বাপ-ছেলের এমন কর্মকাণ্ডে বিতর্ক মাদারীপুরের ডাসারসহ পুরো জেলাজুড়ে। তাঁদের শাস্তি দাবি সচেতন মহলে।