শিক্ষার্থীদের কণ্ঠে রাজাকার স্লোগান প্রসঙ্গে যা বললেন প্রধানমন্ত্রী
কোটা সংস্কারের আন্দোলনে থাকা শিক্ষার্থীদের অবমাননা করা হয়েছে দাবি করে স্লোগানে স্লোগানে রাত থেকেই উত্তাল হয়ে ওঠে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) ক্যাম্পাস। ছাত্রলীগের বাধা উপেক্ষা করে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হল থেকে মিছিল নিয়ে টিএসসিতে জড়ো হন হাজারো শিক্ষার্থী। 'চাইতে গেলাম অধিকার, হয়ে গেলাম রাজাকার', 'কোটা না মেধা? মেধা মেধা', 'তুমি কে আমি কে? রাজাকার রাজাকার‘ ইত্যাদি স্লোগান দিতে থাকেন তারা। রোকেয়া হলের ছাত্রীরাও গেটের তালা ভেঙে বাইরে বেরিয়ে আসেন। তাদের এমন আচরণে দুঃখ প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, নিজেদের রাজাকার ঘোষণা দিয়ে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের স্লোগান লজ্জার। দুঃখ লাগে যখন শুনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রোকেয়া হলের ছাত্রীরাও নিজেদের রাজাকার দাবি করে স্লোগান দেয়।
আজ সোমবার (১৫ জুলাই) প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে সরকারের মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোর বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি এবং শুদ্ধাচার পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনাই আমাদের একমাত্র লক্ষ্য। লাখো শহীদ রক্ত দিয়ে গেছে, লাখো মা-বোন নির্যাতিত হয়েছে। তাদের অবদান ভুললে চলবে না। মনে রাখতে হবে, পাকিস্তানি হানাদার আর রাজাকাররা যেভাবে অত্যাচার করেছে...দুঃখ লাগে যখন শুনি রোকেয়া হলের ছাত্রীরাও নিজেদের রাজাকার দাবি করে স্লোগান দেয়। তারা কি জানে ২৫ মার্চ কী ঘটেছিল সেখানে? ৩০০ মেয়েকে হত্যা করেছিল, ৪০ জন মেয়েকে রেপ করেছিল এবং এদের ধরে নিয়ে পাকিস্তানি ক্যাম্পে নিয়ে গিয়েছিল।
সরকারপ্রধান আরও বলেন, অনেক মেয়ে শাড়ি বা ওড়না দিয়ে ফাঁসি দিত বলে তাদের কাপড় পরতে দেওয়া হতো না। পেটিকোট পরিয়ে বসিয়ে রাখত। দিনের পর দিন পাশবিক অত্যাচার হতো। মিত্র বাহিনীর একজন শিখ সৈন্য মাথার পাগড়ি পেঁচিয়ে একজন মেয়েকে উদ্ধার করে নিয়ে আসে। এমন একটা ঘটনা না, এমন বহু ঘটনা।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এসব অত্যাচার, রাস্তায় রাস্তায় লাশ পড়ে থাকা এরা দেখেনি। তাই নিজেদের রাজাকার বলতে তাদের লজ্জা হয় না। দুর্ভাগ্য এখন মেয়েরা স্লোগান দেয়। মুক্তিযুদ্ধ আমাদের গর্বের। কোন দেশে আছি, তারা কোন চেতনায় বিশ্বাস করে, কী শিক্ষা তারা নিল?
সরকারপ্রধান আরও বলেন, ৭৫-এর পর মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস, ত্যাগের ইতিহাস মুছে ফেলা হয়। জয়বাংলা স্লোগান নিষিদ্ধ ছিল। যুদ্ধাপরাধীরা রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়। লাখো শহীদের রক্তে অর্জিত স্বাধীনতা ব্যর্থ হয়ে যাবে, সেটা কখনও হতে পারে না। বিজয়ের মর্যাদা ফিরিয়ে আনাই লক্ষ্য ছিল।
দুর্নীতিরোধে মাঠ পর্যায়েও নজর দেওয়ার তাগিদ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরকারের জিরো টলারেন্স, এ নীতি বাস্তবায়ন করতে হবে। যেখানে অনিয়ম দেখবেন সেখানে যথাযথ ব্যবস্থা নিন। দুর্নীতি করে কম লোক, কিন্তু বদনাম হয় বেশি। যারাই দুর্নীতিতে জড়িত তাদের প্রশ্রয় দেওয়া যাবে না।
খাদ্যের দামের প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কেউ যেন চক্রান্ত করে খাদ্যের দাম বাড়াতে না পারে সেদিকে নজরদারি বাড়াতে হবে। এ ছাড়া এবার বন্যা দীর্ঘস্থায়ী হওয়ার আশঙ্কা আছে। বন্যায় অনেক সময় ফসল নষ্ট হয়। কাজেই খাদ্য সংরক্ষণের ব্যবস্থা রাখতে হবে, যেন কারও কাছে হাত পাততে না হয়। তিনি বলেন, যেসব প্রকল্পে উন্নয়ন দ্রুত হবে, জনগণ সেবা পাবে সেগুলো আগে বাস্তবায়ন করতে হবে। অসমাপ্ত প্রকল্প সেগুলো সম্পন্ন করতে হবে। বৈশ্বিকভাবে মূল্যস্ফীতি বেড়েছে। তাই কৃচ্ছতা সাধন ছাড়া উপায় নেই। অপচয় রোধ করতে হবে, দুর্নীতি প্রতিরোধ করতে হবে।
এবার আরও বেশি টাকার বাজেট দেয়ার পরিকল্পনা ছিল উল্লেখ করে সরকারপ্রধান বলেন, এবারের বাজেট অবশ্যই উচ্চভিলাষী। উচ্চাভিলাষী না হলে কীভাবে উন্নত হব? বাজেট উচ্চাভিলাষী কিন্তু বাস্তবায়নযোগ্য। পত্রপত্রিকার লেখা পড়ে ঘাবড়ানোর কিছু নেই, নার্ভাস হবেন না। দেখবেন সত্যতা আছে কি না। না থাকলে ডাস্টবিনে ফেলে দেবেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা যে পরিকল্পনা নেই সেটা দেশের কথা চিন্তা করেই নেই। হঠাৎ করে অস্ত্র দিয়ে ক্ষমতায় আসিনি। দেশের প্রতি ইঞ্চি ও মানুষকে চিনি। জানি, দেশের কীভাবে ভালো হয়। কে কী লিখল সেটা দেখতে গেলে দেশের উন্নতি করতে পারব না। মর্যাদাবোধ ও বিবেক নিয়ে কাজ করলে প্রতিটি কাজে সফলতা আসবে।