কোটা সংস্কার আন্দোলন নিয়ে আজ যা হলো হাইকোর্টে
কোটা সংস্কার আন্দোলনের ছয় সমন্বয়ককে ডিবি হেফাজতে নিয়ে খাবার খাওয়ানো ও সেই ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করা নিয়ে উষ্মা প্রকাশ করেছেন হাইকোর্ট। এ সময় হাইকোর্ট বলেন, জাতিকে নিয়ে মশকরা করবেন না।
আজ সোমবার (২৮ জুলাই) বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি এস এম মাসুদ হোসাইন দোলনের বেঞ্চে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ছয় সমন্বয়ককে অবিলম্বে মুক্তি দিতে ও আন্দোলনকারীদের ওপর গুলি না চালানোর নির্দেশনা চেয়ে করা রিটের শুনানিতে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীকে উদ্দেশ করে হাইকোর্ট এ কথা বলেন।
আদালতে আজ রিটের পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জহিরুল ইসলাম (জেড আই) খান পান্না ও ব্যারিস্টার সারা হোসেন এবং ব্যারিস্টার অনীক আর হক। রাষ্ট্রপক্ষের শুনানিতে ছিলেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল শেখ মোহাম্মদ মোরশেদ ও ব্যারিস্টার ,মোহাম্মদ মেহেদী হাসান চৌধুরী। তাদের সঙ্গে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তুষার কান্তি রায়।
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী আজাহার উল্লাহ ভুঁইয়া শুনানি নিয়ে আদালত আগামীকাল মঙ্গলবার পরবর্তী দিন রেখেছেন।
দুপুর ১২টা রিটের শুনানিতে ব্যারিস্টার সারা হোসেন বলেন, মাই লর্ড বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ছয় সমন্বয়ক ছাত্রকে ডিবি হেফাজতে নিয়েছে তিনদিন হয়েছে। কিন্তু এখনো তাদের মুক্তি দেওয়া হয়নি। আবার আদালতে উপস্থাপন করা হয়নি। অথচ সংবিধান ও আপিল বিভাগের রায় অনুযায়ী কাউকে ২৪ ঘণ্টার বেশি আইনশৃ্ঙ্খলা বাহিনীর হেফাজতে রাখা যায় না। ডিবি এসব ছাত্রদের হাসপাতাল থেকে তুলে নিয়ে গেছে। হাইকোর্টের অন্তর্নিহিত ক্ষমতা রয়েছে এসব ছাত্রদের মুক্তি দেওয়ার। আদালত চাইলে মুক্তি আদেশ দিতে পারেন।
এ সময় অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মেহেদী হাসান চৌধুরী বলেন, মাই লর্ড যে ছয়জন ছাত্রকে ডিবি হেফাজতে নেওয়া হয়েছে তারা প্রত্যেকে ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক। দেশে জ্বালাও পোড়াও করে দেশের হাজার হাজার কোটি টাকা ক্ষতি সাধন ও মানুষ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে হত্যা করা হয়েছে।
জবাবে আইনজীবী সারা হোসেন বলেন, মাই লর্ড কাউকে নিরাপত্তার স্বার্থে তুলে নেওয়া যায় না। গ্রেপ্তার করলে বলতে হবে কোথায় নিচ্ছে, কেন নিচ্ছে, কে নিচ্ছে। এখানে যারা নিয়েছে (ডিবি), তারাই বলছে, তাদের কাছে রাখা হয়েছে। কোনো আইনে নেই, এইভাবে কাউকে তুলে নেওয়া যায়। আপনাদের সামনে যাতে তাদের হাজির করা হয় অথবা মুক্ত করে দেওয়া হয়। তারা (ডিবি) বলছে, নিরাপত্তার স্বার্থে রাখছি। এই ক্ষমতা তাদের কোথায় দেওয়া আছে? একজনকে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে তুলে নিয়ে অন্য কারও কাছে রাখা যাবে কোথায় আছে? কোথাও লেখা নেই এভাবে কাউকে তুলে নেওয়া যায়।
শুনানির একপর্যায়ে অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মোহাম্মদ মেহেদী হাছান চৌধুরী বলেন, টিভিতে দেখেছি, ছয়জন কাঁটাচামচ দিয়ে খাচ্ছে। এ সময় আদালতে উপস্থিত আইনজীবীরা উত্তেজিত হয়ে হৈ চৈ করে শেইম শেইমসহ নানা মন্তব্য করতে থাকেন।
এ সময় হাইকোর্ট বলেন, এগুলো করতে কে বলেছে? জাতিকে নিয়ে মশকরা করবেন না। যাকে ধরে নেন, একটি খাবার টেবিলে বসিয়ে দেন।
পরে আইনজীবী অনীক আর হক বলেন, মাই লর্ড সারা পৃথিবীতে ছাত্র আন্দোলন হয়। কিন্তু কোথাও লাইভ বুলেট ব্যবহার হয় না। কোটা আন্দোলন নিয়ে বিভিন্ন পুলিশ ছাত্রদের ওপর তাজা বুলেট ব্যবহার করেছে। আধুনিক যুগে ছাত্র আন্দোলন ছত্রভঙ্গ করতে বিভিন্ন কৌশল ব্যবহার করা হয়। বুলেট নিক্ষেপ করা হয় না। পুলিশের ওপর আক্রমণ হলে পিআরবি অনুযায়ী আত্মরক্ষার জন্য পদক্ষেপ নিতে পারেন। আমরা বলছি ছাত্রদের ওপর লাইফ গুলি না করতে। যেটাতে মানুষ মারা যেতে পারে। আমরা চাই না দেশের সম্পদ নষ্ট হোক।
ব্যারিস্টার অনীক আরও বলেন, এই ছাত্রছাত্রীরা কি দেশের সম্পদ নয়? তাদের নিয়ন্ত্রণ করার জন্য সর্বনিম্ন যেটুকু করা প্রয়োজন, সেটা করা যেতে পারে। আজকে যদি আমরা মেট্রোরেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কথা বলি, এগুলো আমাদের সম্পদ। কিন্তু যে প্রাণগুলো গেছে, তারা কি আমাদের সম্পদ নয়? তারা চলে যাওয়ায় সম্পদ তো আরও বেশি ক্ষতি হচ্ছে। মৃত্যু বন্ধ করুন। এরা আমাদের সন্তান।
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী আজাহার উল্লাহ ভুঁইয়া জানান, শুনানি নিয়ে আদালত আগামীকাল মঙ্গলবার পরবর্তী দিন ধার্য করেন।
এর আগে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ছয় সমন্বয়ককে অবিলম্বে মুক্তি দিতে এবং দেশের বিভিন্ন স্থানে আন্দোলনকারীদের ওপর গুলি না চালাতেও নির্দেশনা চেয়ে রিট করেন সুপ্রিম কোর্টের দুই আইনজীবী।