প্রশাসনে ১৫ বছরের হাওয়া বদল এক রাতেই
ছাত্র-জনতার তীব্র গণ-আন্দোলনে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর পরিবর্তনের হাওয়া লেগেছে গোটা প্রশাসনজুড়ে। গত ১৫ বছরের আওয়ামী প্রশাসনিক ধারা এক রাতেই বদলে গেছে।
শেখ হাসিনার দেশত্যাগের পর ভেঙে দেওয়া হচ্ছে পুরোনো মন্ত্রিসভা। তাই নতুন সরকারের উপদেষ্টাদের বরণ করে নিতে কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে প্রস্তুত করা হয়েছে প্রশাসনের প্রাণকেন্দ্র বাংলাদেশ সচিবালয়কে। বিভাজন, ক্ষোভ ও মান-অভিমান ভুলে গিয়ে সর্বস্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা উদগ্রীব হয়ে আছেন নতুনদের বরণ করে নিতে। আজ মঙ্গলবার (৬ আগস্ট) সচিবালয় ঘুরে এমন দৃশ্যই চোখে পড়ছে।
সকাল ৯টায় সচিবালয়ে গিয়ে দেখা যায়, প্রতিটি ভবনে থাকা শেখ মুজিব ও শেখ হাসিনার ছবি সম্বলিত বিশাল বিশাল ব্যানার, ফেস্টুন ও পোস্টারগুলো খুলে ফেলা হয়েছে। প্রতিটি কক্ষ থেকে শেখ মুজিব ও শেখ হাসিনার ছবিগুলো নামিয়ে ফেলা হয়েছে। মন্ত্রীদের নামের প্লেটগুলোও খুলে ফেলা হয়েছে।
সচিবালয়ের ৭ নম্বর ভবনের অষ্টম তলার পূর্বপাশের সুরম্য কক্ষটিতে বসে নিজের দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি পুরো দেশের রাজনীতি ও প্রশাসন তদারকি করতেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং পতিত সরকারের সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। গতকালও এ অফিস কক্ষটি ছিল তার পছন্দের ছবি ও নানান ধরনের শোপিসে ঠাসা। আজ সেখানে তার নাম ফলকটিও নেই। সব মন্ত্রণালয়ের দৃশ্যও প্রায় একই ধরনের।
আইন মন্ত্রণালয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘প্রশাসন থেকে জগদ্দল পাথর দূর হয়েছে। গত ১৫ বছরের অপশাসনে দেশের কাঠামো ভেঙে পড়েছে। আমরা চাই, প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীরা দেশের ও জনগণের সেবক, কোনো দলের সেবাদাস নয়। গত ১৫ বছরে প্রশাসনকে ক্রীতদাস হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে। এর ফলাফল পতিত সরকার পেয়েছ।’
চলতি বছরের ১১ জানুয়ারি আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা টানা চতুর্থবারের মতো একতরফা নির্বাচনের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নেন। এর আগে ২০০৮ সালে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী হন তিনি। পাঁচ বছর পর ২০১৪ সালে একতরফা নির্বাচনে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় ১৫৩ জন সংসদ সদস্য হন। এরপর ২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে শেখ হাসিনা আবার প্রধানমন্ত্রী হন, যা ‘রাতের ভোট’ বলে ব্যাপকভাবে সমালোচিত হয়েছে। মাত্র সাত মাসের মাথায় গতকাল পতন হয় তার। আজ প্রশাসনে বইছে আনন্দের হাওয়া।