প্রতিটি হত্যার সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্ত করতে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ : আইজিপি
নবনিযুক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) মো. ময়নুল ইসলাম বলেছেন, সাম্প্রতিক সময়ে প্রতিটি হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্ত করতে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আজ বুধবার (৭ আগস্ট) বিকেলে পুলিশ সদর দপ্তরে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে আইজিপি এ কথা বলেন।
আইজিপি বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সাম্প্রতিক সময়ে ছাত্র, সাধারণ মানুষ, পুলিশসহ প্রতিটি হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্ত করতে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। দেশের শান্তি-শৃঙ্খলা ও স্থিতি ফিরিয়ে আনতে আমরা সর্বাত্মকভাবে সচেষ্ট রয়েছি। বাংলাদেশ পুলিশ সর্বদা জনগণের জান-মালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নিরলসভাবে কাজ করছে। আমরা বিশ্বাস করি, জনগণই রাষ্ট্রের মূল শক্তি। তাই, আমরা সবসময় জনগণের পাশে থেকে জনগণকে সর্বোচ্চ সেবা প্রদানে বদ্ধ পরিকর। আপনাদের সুচিন্তিত মতামতকে অগ্রাধিকার দিয়ে একটি দক্ষ, জনবান্ধব, প্রযুক্তি নির্ভর আধুনিক ও জবাবদিহিমূলক পেশাদার পুলিশ সংস্কারের ব্যবস্থা গ্রহণ করব। পারস্পরিক সৌহার্দ্য, সম্প্রীতি, ভ্রাতৃত্ববোধে উজ্জ্বীবিত হয়ে সমন্বয়ের মাধ্যমে আমরা সবাই একযোগে কাজ করে উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে যাব।
পুলিশের মহাপরিদর্শক আরও বলেন, আমাদের কতিপয় উচ্চাভিলাসী, অপেশাদার কর্মকর্তার কারণে এবং কর্মকৌশল প্রণয়নে বলপ্রয়োগের স্বীকৃত নীতিমালা অনুসরণ না করা এবং মানবাধিকার লঙ্ঘন করা ও নেতৃত্বের ব্যর্থতায় আমাদের অনেক সহকর্মী আহত, নিহত ও নিগৃহীত হয়েছেন। এই সন্ধিক্ষণে আমি সব পুলিশ সদস্যকে আন্তরিকভাবে আহ্বান জানাই, আপনারা দেশ ও জাতির প্রয়োজনে শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য হিসেবে নিজনিজ দায়িত্ব পালনে আত্মনিয়োগ করুন। আপনাদের জীবনমানের উন্নয়ন এবং সার্বিক কল্যাণ নিশ্চিতকরণে আমরা সব ধরনের ব্যবস্থা নেব।
আইজিপি বলেন, দেশের এই নতুন অধ্যায়ের সূচনালগ্নে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ, দেশপ্রেমিক সশস্ত্র বাহিনী, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, গণমাধ্যম, সুশীল সমাজ ও দেশের সম্মানিত সব নাগরিককে তাঁদের আন্তরিক ভূমিকার জন্য বিশেষভাবে ধন্যবাদ জানাই। আমাদের পেশাগত দায়িত্ব পালনে সবার আন্তরিক সহযোগিতা কামনা করছি। সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় আমরা একটি সুখী, সমৃদ্ধ, শান্তিপূর্ণ ও নিরাপদ বাংলাদেশ গড়ে তুলব।
আইজিপি বলেন, আমি সর্বস্তরের পুলিশ বাহিনীকে এরই মধ্যে নির্দেশনা দিয়েছি। আপনাদের (সাংবাদিক) মাধ্যমে ব্যাপক প্রচারের জন্য পুনরায় বলছি। আমাদের রাজারবাগ পুলিশ লাইন, পাবলিক অর্ডার ম্যানেজমেন্ট, পিওএম, এপিবিএন ও পুলিশ সদর দপ্তরসহ সব মেট্রোপলিটন ও জেলা পুলিশ লাইন্সসহ স্পেশালাইজড পুলিশ ইউনিটের অফিসার ও ফোর্সকে আমরা নির্দেশনা দিয়েছি। আগামীকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার মধ্যে স্ব-স্ব কর্মস্থলে যোগদান করতে বলছি। ইতোমধ্যে এ নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে।
ময়নুল ইসলাম বলেন, মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার এবং জেলা পুলিশসহ স্ব-স্ব অধিক্ষেত্রে থানা এলাকায় জ্যেষ্ঠ নাগরিক, পেশাজীবী, ছাত্র প্রতিনিধি, রাজনৈতিক ও গণমাধ্যম ব্যক্তিবর্গের সমন্বয়ে নাগরিক নিরাপত্তা কমিটি গঠন করবেন। আমরা আহ্বান জানাচ্ছি, বর্ণিত কমিটি থানা এবং থানা এলাকায় নিরাপত্তা বিধানে সহায়ক ভূমিকা রাখবেন। পরবর্তীতে এর চূড়ান্ত রূপরেখা প্রণয়ন করে আমরা সাবমিট করব। আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সব মেট্রোপলিটন পুলিশ, জেলা পুলিশ, নৌ-পুলিশ, রেলওয়ে পুলিশ, হাইওয়ে পুলিশ, হাইওয়ে পুলিশের সব থানার অফিসার এবং ফোর্স স্ব-স্ব কর্মক্ষেত্রে যোগদানের জন্য ইতোমধ্যে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
যেসব অতি উৎসাহী পুলিশ কর্মকর্তা গুলি চালিয়েছে অথবা বল প্রয়োগ করেছে, সেই অতি উৎসাহী পুলিশ কর্মকর্তারা এখন কোথায়? আপনারা তাদের বিচারের আওতায় আনবেন কিনা এক প্রশ্নের জবাবে আইজিপি বলেন, ‘আমাদের যেকোনো ল্যাকস যদি হয়, হওয়া স্বাভাবিক হয়েছে, সেই ল্যাকসের ক্ষেত্রে যে বিধান আছে, আমাদের অ্যাস পার আওয়ার ল, পুলিশ রেগুলেশন অব বেঙ্গল, আমাদের সার্ভিস রুলসের আলোকে আমাদের অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ ও আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ চলমান রয়েছে।’
কতজন পুলিশ সদস্য এ পর্যন্ত মারা গেছেন, জানতে চাইলে আইজিপি কোনো তথ্য দেননি। তিনি বলেন, এই সংখ্যাটা আপনারা জানবেন। আপনাদের জানিয়ে দেওয়া হবে।
এর আগে গতকাল মঙ্গলবার রাতে পুলিশের মহাপরিদর্শক হিসেবে ট্রাফিক অ্যান্ড ড্রাইভিং স্কুলের কমান্ড্যান্ট (অতিরিক্ত আইজিপি) মো. ময়নুল ইসলামকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। গতকাল এ সংক্রান্ত একটি প্রজ্ঞাপন জারি করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।