কাজে ফিরছে পুলিশ, ফুল দিয়ে বরণ
আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয় ৫ আগস্ট। এদিন দলের সভাপতি শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ করে ভারতের দিল্লিতে পালিয়ে যান। তার সময়ে পুলিশের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে ক্ষুব্ধ জনতা দেশের বিভিন্ন থানা, পুলিশ ফাঁড়ি, ট্রাফিক পুলিশ বক্স ভাঙচুর করে। আতঙ্কে পুলিশ শূন্য হয়ে দেশ। ঊর্ধ্বতনদের আদেশ ও নির্দেশে বিভিন্ন কাজ করতে হয়েছে দাবি করে পুলিশ সদস্যরা হুকুমদাতাদের বিচারের দাবিসহ ১১ দফা পেশ করে কর্মবিরতিতে যান। গতকাল রোববার (১১ আগস্ট) এমন ঘোষণা দেওয়ার পরদিন আজ দেশের অধিকাংশ থানা, ফাঁড়ি ও সড়কে কাজে ফিরেছেন তারা। থানায় ফিরলে কোনো কোনো থানায় পুলিশ সদস্যদের ফুল দিয়ে বরণ করে নেওয়া হয়।
দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে পাঠানো তথ্যে থাকছে এবারের প্রতিবেদন...
গোপালগঞ্জে সব থানার পুলিশ
গোপালগঞ্জে সব থানার পুলিশ কাজে যোগ দিয়েছে। আজ সোমবার (১২ আগস্ট) আনুষ্ঠানিকভাবে তারা কাজ শুরু করেন। এরইমধ্যে পুলিশ সদস্যরা জেলাবাসীর জানমালের নিরাপত্তা দিতে শুরু করেছে। এতে স্বস্তি ফিরেছে সাধারণ মানুষের মধ্যে। এ ছাড়া ট্রাফিক পুলিশরা সড়কে দায়িত্ব পালন করছেন যথারীতি। এতে সড়কের শৃঙ্খলা ফিরেছে।
গোপালগঞ্জের পুলিশ সুপার আল-বেলী অফিফা জানিয়েছেন, জেলার পাঁচ উপজেলার পাঁচটি থানা ও সাতটি পুলিশ ফাঁড়ির কর্মকর্তা, কনস্টেবল ও ট্রাফিক বিভাগে কর্মকর্তা কাজ শুরু করেছেন।
গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার কেকানিয়া গ্রামের ঝন্টু মিয়া বলেন, পুলিশ কাজে যোগ দিয়েছে। তারা ইতিমধ্যে মাঠে নেমে দায়িত্ব পালন শুরু করছে। এতে আমাদের মধ্যে স্বস্তি ফিরে এসেছে। সুযোগ সন্ধানী ও দুস্কৃতিকারীরা গা ঢাকা দেবে। আইনশৃংখলা পরিস্থিতির ব্যাপক উন্নতি ঘটবে।
কোটালীপাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহম্মদ ফিরোজ আলম বলেন, ‘থানায় কাজে যোগ দেওয়ায় আমি কর্মকর্তা ও কনস্টেবলদের স্বাগত জানিয়েছি।’
কোটালীপাড়া থানায় পুলিশি কার্যক্রম শুরু করায় উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবুল বশার হাওলাদার, কোটালীপাড়া পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক পৌর প্যানেল মেয়র মো. ওলিউর রহমান, উপজেলা যুবদলের আহ্বায়ক আব্দুল মান্নান শেখ, উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক মাহবুব খান, উপজেলা ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক নিলয় হাওলদার প্রমুখ উপজেলার পক্ষ থেকে পুলিশদের ফুল ও মিষ্টি দিয়ে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।
চাঁদপুরে দাপ্তরিক কার্যক্রম শুরু করল পুলিশ
চাঁদপুর জেলার আট থানা পুলিশ একযোগে সড়কে নেমেছে এবং দাপ্তরিক কার্যক্রম শুরু করেছে। বেলা সাড়ে ১১টায় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মো. ইয়াসির আরাফাতের নেতৃত্বে শহরের শপথ চত্বর এলাকায় এসে সদর মডেল থানা পুলিশ অবস্থান নেয়। এর আগে সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শেখ মুহসীন আলম, পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) আব্দুর রাজ্জাক দুটি গাড়িতে করে থানার পুলিশ সদস্যদের নিয়ে শপথ চত্বরে আসেন। সেখানে পুলিশ কর্মকর্তা ও সদস্যদের ফুল দিয়ে বরণ করেন জেলা জামায়াতের নায়েবে আমির মাওলানা আব্দুর রহিম, জেলা সেক্রেটারি অ্যাডভোকেট মাসুদুল ইসলাম বুলবুল, শহর জামায়াতের আমির অ্যাডভোকেট শাহাজাহান খানসহ অন্য নেতারা।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মো. ইয়াসির আরাফাত উপস্থিত সবার উদ্দেশে বক্তব্যে বলেন, গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার যে গণঅভ্যুত্থান হয়েছে, তার সুফল যাতে দেশের সর্বস্তরের মানুষ ভোগ করতে পারে নতুন বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে আজকে থেকে নতুনভাবে পুলিশ কাজ করবে। এ ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীরাও আমাদের সঙ্গে থেকে সহযোগিতা করবে। আমরা সবাই হাতে হাত মিলিয়ে দেশগড়ার কাজে এগিয়ে যাব।
অতিরিক্ত পুলিশ আরও বলেন, ‘আজ থেকে আমাদের জেলার আট থানার পুলিশ কার্যক্রম শুরু করেছে। এখন থেকে আমরা জনতার পুলিশ হয়ে
কাজ করব।’
এরপর অতিরিক্ত পুলিশ সুপারসহ অন্যান্য পুলিশ কর্মকর্তারা শহরের সড়কে দায়িত্বপালনকারী শিক্ষার্থী ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জেলা সমন্বয়কদের সঙ্গে কথা বলেন।
ঝিনাইদহে পুলিশ সদস্যদের ফুল দিয়ে বরণ
সকাল থেকে জেলা শহরের পায়রা চত্বর, পোস্ট অফিস মোড়, আরাপপুরসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থানে ট্রাফিক পুলিশের সদস্যরা কাজ শুরু করেন। এতে স্বস্তি ফিরেছে জেলার সাধারণ মানুষের মাঝে।
কাজে ফেরায় পুলিশ সদস্যদের ফুল দিয়ে বরণ করে নেন শিক্ষার্থীরা। সকালে পোস্ট অফিস মোড়ে কর্মরত পুলিশ সদস্যদের ফুল দিয়ে বরণ করা হয়। এ সময় পুলিশের পেশাগত দায়িত্ব পালনে সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস দেন শিক্ষার্থীরা।
আমরা আস্থার জায়গাটা ধরে রাখতে চাই : বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার প্রতিশ্রুতিতে আশ্বস্ত হয়ে কর্মবিরতি প্রত্যাহার করে কাজে ফিরেছেন বরিশালের পুলিশ সদস্যরা। থানার পাশাপাশি সড়কের ট্রাফিক বিভাগে দায়িত্বও পালন শুরু করেছেন তাঁরা। তবে এখনও সড়কে আছে শিক্ষার্থীরা।
পুলিশ জানায়, চলমান পরিস্থিতি কাটিয়ে উঠে জনগণের পাশে থেকে জনগণকে সেবা দিয়ে যেতে চান তাঁরা। আর পুলিশের নিরাপত্তা নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত তাদের পাশে থাকার কথা জানান শিক্ষার্থীরা।
ইউনিফর্ম পরে বরিশালের থানাগুলোতে আসতে শুরু করেন পুলিশ সদস্যরা। আজ সোমবার (১২ আগস্ট) সকাল ৯টায় থানা কম্পাউন্ডে উপস্থিত হয়ে রোল কলে অংশ নেন তাঁরা।
কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান জানান, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার প্রতিশ্রুতিতে আশ্বস্ত হয়ে টানা ছয় দিন পর কর্মবিরতি প্রত্যাহার করে কাজে ফিরতে পেরে খুশি পুলিশ সদস্যরা।
থানার পাশাপাশি দায়িত্বে ফিরেছেন ট্রাফিক পুলিশের সদস্যরাও। নগরী ও মহাসড়কের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে অবস্থান নেন তাঁরা। তরুণদের হাত ধরে সড়ক ব্যবস্থাপনায় যে আমূল পরিবর্তন হয়েছে সেটা ধরে রাখতে চায় ট্রাফিক বিভাগ। আর পুলিশের নিরাপত্তা নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত তাদের পাশে থাকার আশ্বাস শিক্ষার্থীদের।
এদিকে বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের চার থানাসহ জেলার ১০টি থানায় কাজে ফেরা পুলিশদের নিরাপত্তা ও সহায়তায় কাজ করছে সেনাবাহিনী।
জনবান্ধব পুলিশ হিসেবে কাজ করতে সক্ষম হব : কেএমপি
খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার কে এম মোজাম্মেল হক বলেন, ‘আশা করি, তারা তাদের ভুল সংশোধন করে জনবান্ধব পুলিশ হিসেবে কাজ করতে সক্ষম হবে।’
সিলেটে সীমিত আকারে থানার কার্যক্রম শুরু
সিলেটে প্রায় সব থানাতেই সীমিত আকারে কার্যক্রম শুরু হয়েছে। আজ নগরীর জিন্দাবাজার, বন্দরবাজার, চৌহাট্টা, আম্বরখানা, নাইওরপুল ও সোবহানীঘাট পয়েন্টে ট্রাফিক পুলিশ সদস্যরা যানবাহন নিয়ন্ত্রণে কাজ করেন। সিলেট মহানগরীর কতোয়ালি থানায় একটি সাধারণ ডায়েরিও গ্রহণ করা হয়েছে।
যদিও পুলিশ সুপার কার্যালয়সহ ভস্মীভূত অনেক থানা ও ফাঁড়ি আর ব্যবহার করার উপযোগী নেই। ফলে থানাতে ফিরলেও অফিস করতে হচ্ছে বাইরে বসে।
কতোয়ালি থানার নতুন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ নুনু মিয়া জানান, দুপুরে থানায় একটি নিখোঁজের জিডি হয়েছে। ক্ষতবিক্ষত থানা ভবনের মধ্যেই শুরু হয়েছে থানার কার্যক্রম। ৭৫ জন স্টাফের মধ্যে ২৫ জনের মতো কাজে ফিরেছেন, বাকিরাও দ্রুত ফিরবেন বলে জানান তিনি।
এদিকে চলমান ঘটনাপ্রবাহে সিলেট মহানগর পুলিশের বেশ কয়েকজন কর্মকর্তাকে বদলি ও নতুন পদায়ন করা হয়েছে। অতিরিক্ত ডিআইজি হিসেবে পদোন্নতিপ্রাপ্ত মহানগর পুলিশের উপকমিশনার (উত্তর) আজবাহার আলী শেখকে পুলিশ কমিশনার কার্যালয়ের সংযুক্ত করা হয়েছে। তাঁর জায়গায় দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে উপপুলিশ কমিশনার (দক্ষিণ) হিসেবে কর্মরত মোহা. সোহেল রেজাকে। এ ছাড়া কতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহম্মদ মঈন উদ্দিনকে বদলি করে পুলিশ লাইনসে সংযুক্ত করা হয়েছে।
দিনাজপুরের থানায় ফিরেছে পুলিশ, বাসায় ফিরেছেন শিক্ষার্থীরা
দিনাজপুরেও সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে ট্রাফিক পুলিশ কাজে যোগ দিয়েছে। শিক্ষার্থীরা ট্রাফিক পুলিশের কাজ শেষ করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ফিরে গেছে। গত কয়েকদিন শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি বিএনসিসি, রোভার স্কাউট, রেড ক্রিসেন্টের স্বেচ্ছাসেবক দল, আনসার বিডিপি ও ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা ট্রাফিক পুলিশের দায়িত্ব পালন করেছেন।
আজ সোমবার (১২ আগস্ট) সকালে ট্রাফিক পুলিশ কাজে যোগদান করেছেন। ফলে শহরে যানবাহন চালক ও পথচারীদের মধ্যে স্বস্তি ফিরে এসেছে। দুপুরে লিলির মোড়, জেনারেল হাসপাতাল মোড়, পৌরসভার মোড়, কাচারি এলাকা, থানা মোড়সহ বিভিন্ন একালায় গিয়ে ট্রাফিক পুলিশকে দায়িত্ব পালন করতে দেখা গেছে।
শিহাব উদ্দিন বিপু, ব্রাহ্মণবাড়িয়া
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ৯টি থানায় যোগ দিয়েছেন পুলিশ সদস্যরা। আজ সকাল থেকে জেলার সদর থানা, সরাইল, নাসিরনগর, কসবা, আশুগঞ্জ, বিজয়নগর, আখাউড়া, নবীনগর ও বাঞ্ছারামপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাসহ পুলিশ সদস্যরা উপস্থিত হন।
পুলিশ সদস্যরা যোগ দেওয়ায় থানাগুলোতে আবারও ফিরতে শুরু করেছে স্বাভাবিক পরিবেশ। সেই সঙ্গে জনমনে ফিরে আসতে শুরু করছে স্বস্তি।
জেলা পুলিশ সুপার মো. শাখাওয়াত হোসেন জানান, জেলার সব থানাতে পুলিশ সদস্যরা যোগ দিয়েছেন। সেনা সদস্যদের সহযোগিতায় অভিযোগ নথিভুক্ত ও দাপ্তরিক কার্যক্রম চলছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে জেলা পুলিশের সার্বিক কার্যক্রম শুরু হবে।