ভারতীয় ঢলে হু হু করে বাড়ছে গোমতীর পানি, কুমিল্লায় বন্যার শঙ্কা
টানা তিন দিনের বৃষ্টির পাশাপাশি ভারতের ত্রিপুরা থেকে আসা ঢলের পানি মিলে অস্বাভাবিক বাড়ছে কুমিল্লার গোমতী নদীর পানি। প্লাবিত হয়েছে আশপাশের বিস্তীর্ণ এলাকা। নষ্ট হয়েছে অন্তত চার হাজার হেক্টর চরের জমির ফসল। ক্রমাগত পানি বাড়তে থাকায় গোমতীর দুকূল ছাপিয়ে দেখা দিয়েছে বন্যার আশঙ্কা।
সরেজমিনে আজ বুধবার (২১ আগস্ট) সকালে জেলার আদর্শ সদর উপজেলার বানাশুয়া, পালপাড়া, রত্নবতী, টিক্কারচর, জালুয়াপাড়া, বুড়িচং উপজেলার ভান্তি, শিমাইলখাড়া, পূর্বহুড়া, নানুয়ার বাজার, মিথলাপুর, গোবিন্দপুর, ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার মালাপাড়া এলাকায় ঘুরে দেখা যায়, গোমতী নদীর তীর ঘেঁষে আচরে পড়ছে ঢেউ। অনেক এলাকায় লোকালয়ে হু হু করে ঢুকছে পানি। এতে করে গোমতীর চরের কয়েক হাজার একর সবজি ক্ষেত ডুবে গেছে। চরের বাসিন্দারা বাড়িঘর ছেড়ে বাঁধে এসে আশ্রয় নিয়েছেন।
গোমতী পাড়ের বাসিন্দারা জানান, গেল ১০ বছরের বেশি সময় পর এ বছরই গোমতীর পানি এত বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে।
গোমতীর পাড়ের মালাপাড়া এলাকার বাসিন্দা আলাউদ্দিন আজাদ জানান, তিনি পরিবার নিয়ে চরের ভেতর বসবাস করেন। গেল ১০ বছরে গোমতী নদীতে এত পানি দেখেননি। বৃদ্ধ মা, স্ত্রী, সন্তান আর দুটি গাভী নিয়ে গোমতীর বাঁধে আশ্রয় নিয়েছেন তিনি।
কামাড়খাড়া এলাকার নোয়াব মিয়া জানান, চরের জমিতে শিম ও চালকুমড়ার চাষ করেছিলেন। শিমগাছ ছোট ছিল। মাচায় ঝুলছিল কচি চাল কুমড়া। সব এখন পানির নিচে।
টিক্কারচর এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, শহর রক্ষা বাঁধে শতাধিক পরিবার আশ্রয় নিয়েছে। চরের ভেতর গলা সমান পানি হয়ে গেছে। ঘর থেকে প্রয়োজনীয় অনেক কিছুই বের করতে পারেননি স্থানীয়রা।
চাঁনপুর এলাকার সোহেল মিয়া জানান, গতকাল মঙ্গলবার রাতে সন্তানদের বই খাতা, নিজেদের কিছু জামা-কাপড় নিয়ে বের হয়েছেন। আজ বুধবার বৃষ্টিতে ভিজে ঘর থেকে খাট আলমারি বের করছেন।
কুমিল্লা আদর্শ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রোমেন শর্মা বলেন, গতকাল (মঙ্গলবার) রাত থেকে তিনি গোমতীর বিভিন্ন পয়েন্টে ঘুরেছেন। বিভিন্ন এলাকায় গোমতীর বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ওইসব এলাকায় স্থানীয়রা মাটি ও বালুর বস্তা দিয়ে বাঁধ রক্ষার চেষ্টা করছেন।
বুধবার (২১ আগস্ট) সকাল সাড়ে ১০টায় গোমতী নদীর পানি বিপৎসীমার ২২ সেন্টিমিটার নিচে দিয়ে প্রবাহিত হয় বলে জানিয়েছেন কুমিল্লা পানি উন্নয়ন বোর্ডের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. আবদুল লতিফ। তিনি জানান, পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা ঝুঁকিপূর্ণ স্থানগুলো পরিদর্শন করছেন।
এদিকে টানা বৃষ্টিতে কুমিল্লায় গোমতীর চরে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। কুমিল্লা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক আইয়ুব মাহমুদ বলেন, ‘গোমতীর চরে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। পানি সরে না যাওয়া পর্যন্ত ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করা সম্ভব নয়।’
কুমিল্লা আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ছৈয়দ আরিফুর রহমান বলেন, ‘গতকাল মঙ্গলবার দুপুর ১২টা থেকে আজ বুধবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত কুমিল্লায় ৭৯ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এখনও বৃষ্টি হচ্ছে। আগামী ৭২ ঘণ্টা বৃষ্টি অব্যাহত থাকতে পারে।’