জামায়াতে ইসলামী নিষিদ্ধের প্রজ্ঞাপন কাল প্রত্যাহার হচ্ছে
স্বৈরাচার শেখ হাসিনার সরকারের নির্বাহী আদেশে জামায়াতে ইসলামীর রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার আদেশ আগামীকালের মধ্যে প্রত্যাহার করা হবে বলে জানিয়েছেন আইনজীবী অ্যাডভোকেট শিশির মনির। আজ সোমবার (২৬ আগস্ট) দুপুর ১২টা দিকে সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গনে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।
অ্যাডভোকেট শিশির মনির বলেন, ‘ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগ সরকার ছাত্রদের আন্দোলনের সময় রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিল করার জন্য নির্বাহী আদেশে জামায়াতে ইসলামীকে নিষিদ্ধ করে। বিষয়টি নিয়ে মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার দপ্তরে জামায়াতের পক্ষ থেকে অনেকবার আলোচনা করা হয়। সেই আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে জামায়াতকে নিষিদ্ধ করার বিষয়টি প্রত্যাহার করা হবে।’
ছাড়া জামায়াতের নিবন্ধন বাতিলের বিষয়ে আইনজীবী শিশির মনির বলেন, ‘জামায়াতকে আওয়ামী ফ্যাসিবাদী সরকার সন্ত্রাসী দল হিসেবে নিবন্ধন বাতিল করে। কিন্তু কী ধরনের সন্ত্রাস সে বিষয়ে কোনো কিছু উল্লেখ করা হয়নি। আমরা বর্তমান সরকারকেও বলেছি, আপনাদের কাছে যদি সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য থাকে তাহলে তাও দেখাতে পারেন। মূলত এটা ছিল কথার কথা। ছাত্র জনতার গণঅভ্যুত্থানকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার জন্যই এ নিষিদ্ধের আদেশ দেওয়া হয়। সে বিষয়ে বর্তমান প্রশাসন ও উপদেষ্টারা একমত হয়েছেন।’ তিনি আরও বলেন, ‘এ মুহূর্তে রাজনৈতিক নিষেধাজ্ঞার আদেশ প্রত্যাহার করার পর আবার আমরা আপিল বিভাগে রিভিউ আবেদন করব। সেই রিভিউতে শুনানির পর আমরা বিশ্বাস করি আমরা ন্যায় বিচার পাবো।’
এর আগে স্বৈরাচার শেখ হাসিনার সরকার জামায়াতকে নিষিদ্ধ করে প্রজ্ঞাপন জারি করে। ওই প্রজ্ঞাপনে বলা হয়– “যেহেতু, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল কর্তৃক প্রদত্ত কয়েকটি মামলার রায়ে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী (পূর্বনাম জামায়াত-ই-ইসলামী/জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ) এবং উহার অঙ্গ সংগঠন বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরকে (পূর্বনাম ইসলামী ছাত্রসংঘ) ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধকালে সংঘটিত গণহত্যা, যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধে দায়ী হিসাবে গণ্য করা হইয়াছে; এবং
যেহেতু, বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের রায়ে রাজনৈতিক দল হিসাবে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন বাতিল করিয়া দিয়াছে এবং বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ, হাইকোর্ট বিভাগের উক্ত রায়কে বহাল রাখিয়াছে; এবং
যেহেতু, সরকারের নিকট যথেষ্ট তথ্য প্রমাণ রহিয়াছে যে, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী এবং উহার অঙ্গ সংগঠন বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির সাম্প্রতিককালে সংঘটিত হত্যাযজ্ঞ, ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপ ও সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে সরাসরি এবং উসকানির মাধ্যমে জড়িত ছিল; এবং
যেহেতু, সরকার বিশ্বাস করে যে, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী এবং বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরসহ উহার সকল অঙ্গ সংগঠন সন্ত্রাসী কার্যকলাপের সহিত জড়িত রহিয়াছে;
সেহেতু, সরকার, সন্ত্রাসবিরোধী আইন, ২০০৯ এর ধারা ১৮(১) এ প্রদত্ত ক্ষমতাবলে, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী এবং বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরসহ উহার সকল অঙ্গ সংগঠনকে রাজনৈতিক দল ও সংগঠন হিসাবে নিষিদ্ধ ঘোষণা করিল এবং উক্ত আইনের তফসিল-২ এ বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ও বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরসহ উহার সকল অঙ্গ সংগঠনকে নিষিদ্ধ সত্ত্বা হিসাবে তালিকাভুক্ত করিল। এই প্রজ্ঞাপন অবিলম্বে কার্যকর হইবে।”