লক্ষ্মীপুরের দুর্গম এলাকায় পৌঁছেনি ত্রাণ, চুরির শঙ্কায় ঘর ছাড়ছেন না পানিবন্দিরা
লক্ষ্মীপুরে বন্যায় অধিকাংশ পানিবন্দি মানুষ চুরি-ডাকাতির ভয়ে বাড়িঘর ছাড়ছেন না। দুর্গম এলাকার বাড়িতে যারা অবস্থান করছেন, তাদের অনেকের কাছেই ত্রাণ সহায়তা পৌঁছাচ্ছে না। সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে প্রতিদিন হাজার হাজার প্যাকেট খাদ্য সহায়তা বিতরণ করা হলেও যাতায়াতের দুর্ভোগসহ সমন্বয়হীনতার কারণে দুর্গম এলাকায় অবস্থানকারীরা এর সুফল পাচ্ছেন না।
স্থানীয় প্রশাসন জানায়, লক্ষ্মীপুরে সাত লাখ ২০ হাজার মানুষ বন্যায় পানিবন্দি রয়েছেন। ২৭ হাজার ৭০০ মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছেন। কেউ কেউ উজানে থাকা আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে ঠাঁই নিয়েছেন। তবে বন্যায় পানিবন্দি অধিকাংশ মানুষ চুরি-ডাকাতির ভয়ে বাড়িঘর ছাড়ছেন না।
আজ বুধবার (২৮ আগস্ট) খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দিঘলী, চরশাহী, বাঙ্গাখাঁ ও মান্দারী ইউনিয়নের দুর্গম এলাকা প্লাবিত থাকায় যাতায়াত করা যাচ্ছে না। অতিরিক্ত পানির কারণে গ্রামের অভ্যন্তরীণ পাকা রাস্তাগুলোতেও চলাচল করা যাচ্ছে না। এতে সেখানকার পানিবন্দি মানুষগুলোর মাঝে ত্রাণ পৌঁছাচ্ছে না। এসব এলাকায় ত্রাণ বিতরণে নৌকার কোনো বিকল্প নেই। মান্দারী-দিঘলী সড়ক পানিতে ডুবে থাকায় যান চলাচল প্রায় বন্ধ হয়ে আছে।
এদিকে, সরকারিভাবে যে পরিমাণ চাল ও অর্থ বরাদ্দ রয়েছে তা-ও অপ্রতুল বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক (ডিসি) সুরাইয়া জাহান। গতকাল মঙ্গলবার সকালে নিজ কার্যালয়ে এক বিশেষ সভায় তিনি বলেন, জেলায় সাত লাখ ২৫ হাজার মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছে। এ পর্যন্ত আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছে প্রায় ৩০ হাজার মানুষ। বন্যাদুর্গত এলাকার বাসিন্দাদের জন্য ৭০০ মেট্রিক টন চাল এবং নগদ ১০ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া শিশু খাদ্যের জন্য পাঁচ লাখ ও গো-খাদ্যের জন্য পাঁচ লাখ টাকা বরাদ্ধ দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ৫০৯ মেট্রিক টন চাল ও ১৬ লাখ টাকার ত্রাণ বিতরণ করা হয়েছে। বন্যা কবলিত এলাকায় এই বরাদ্ধ পর্যাপ্ত নয়। এজন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে আরও ৩০ লাখ টাকার চাহিদা পাঠানো হয়েছে।
লক্ষ্মীপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী নাহিদ-উজ জামান খান বলেন, নোয়াখালীর পানি লক্ষ্মীপুরে অনবরত ঢুকছে। তবে মেঘনা নদীতে প্রচুর পানি নেমেছে রহমতখালী ও ওয়াপদা খাল হয়ে। এ ছাড়া রায়পুর ও রামগঞ্জেও পানি কমছে। রামগতি ও কমলনগরে বেড়িবাঁধের বাইরে ভুলুয়া নদী এলাকায় মানুষ পানিবন্দি হয়ে রয়েছে। সেখানে পানি কমতে শুরু করেছে। তবে নোয়াখালীর পানি এসে ভুলুয়ার নদীতে যুক্ত হচ্ছে।
ত্রাণ বিতরণকারী স্বেচ্ছাসেবক মাহমুদুল হাসান বলেন, ‘বুকপানিতে দিঘলী ইউনিয়নে একটি দুর্গম এলাকায় ত্রাণ নিয়ে গিয়েছি। সেখানে চৌকির ওপর দুজন বসে ছিলেন। এত পানির পরও তারা আশ্রয়কেন্দ্রে যাননি। আমাদের আগে অন্য কেউও সেখানে ত্রাণ দিতে যায়নি।’
সদরের বাঙ্গাখাঁ গ্রামের গৃহবধূ রাবেয়া বেগম বলেন, ‘আমার ঘরসহ চারপাশ পানিতে ডুবে আছে। চুরি-ডাকাতি হওয়ার ভয়ে আমরা ঘর ছেড়ে আশ্রয়কেন্দ্রে যাচ্ছি না। যাতায়াত ব্যবস্থা ভালো না হওয়ার কারণে আমরা কোনো সহায়তাও পাচ্ছি না।’