সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামানসহ ১৫ জনের বিরুদ্ধে অপহরণ মামলা
সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদের বিরুদ্ধে এবার অপহরণ মামলা দায়ের করা হয়েছে। তার নিজ এলাকা চট্টগ্রামের আনোয়ারা থানায় গতকাল শুক্রবার (৪ অক্টোবর) সকালে সাবেক ভূমিমন্ত্রীসহ ১৫ জনকে আসামি করে মামলাটি দায়ের করেন উপজেলার বারশত ইউনিয়নের দুধকুমড়া এলাকার হাজী মো. সৈয়দ নুরের ছেলে এরশাদ নাবিল খান (৩৯)। থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মনির হোসেন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
মামলার অন্য আসামিরা হলেন—সাবেক ভূমিমন্ত্রীর এপিএস রিদওয়ানুল করিম চৌধুরী সায়েম, উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতা বোরহান উদ্দিন চৌধুরী মুরাদ, এস এম আলমগীর চৌধুরী, হাইলধর ইউপি চেয়ারম্যান কলিম উদ্দিন, যুবলীগের সদস্য সচিব অনুপম চক্রবর্তী, সগীর আজাদ, আইয়ুব আলী, রায়পুর ইউপি চেয়ারম্যান আমিন শরীফ, আব্দুল আজিজ চৌধুরী, ছাত্রলীগ নেতা রবিউল হায়দার রুবেল, জুঁইদণ্ডি ইউপি চেয়ারম্যান মো. ইদ্রিস, চাতরী ইউপি চেয়ারম্যান আফতাব উদ্দিন চৌধুরী সোহেল, আনোয়ারা ইউপি চেয়ারম্যান অসীম কুমার দেব ও পরৈকোড়া ইউপি চেয়ারম্যান আজিজুল হক বাবুল। এ ছাড়া মামলায় অজ্ঞাতনামা পাঁচ-ছয়জনকে আসামি করা হয়েছে।
মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ চট্টগ্রাম-১৩ (আনোয়ারা-কর্ণফুলী) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য। সংসদ সদস্য হিসেবে আসীন হওয়ার পর অত্র এলাকায় তার বাহিনী দ্বারা আনোয়ারা কর্ণফুলী এলাকায় সন্ত্রাসের জনপদে পরিণত করে। সব ধরনের ব্যাবসা বাণিজ্য ও ঠিকাদারি কাজের নিয়ন্ত্রণ নেন। মামলার বাদী এরশাদ ঠিকাদারী ব্যবসায় অংশগ্রহণের চেষ্টা করে টেন্ডার দাখিল করায় আসামিরা সংক্ষুব্ধ ছিল। এ ছাড়া সিইউএফএল প্রতিষ্ঠানের কন্ট্রাকশন কাজে অংশ নেওয়ায় আসামিরা অতান্ত সংক্ষুব্ধ হয়। এরপর সাবেক ভূমিমন্ত্রীর নির্দেশে তার লোকজন বাদীকে বিভিন্নভাবে হুমকি দেন। পরে ২০১৮ সালে ৭ আগস্ট চট্টগ্রাম শহরে যাওয়ার জন্য চাতরী চৌমুহনী বাজারে যাওয়ার পর মসজিদের সামনে থেকে সন্ধ্যার দিকে ২ থেকে ১৫নং আসামি অজ্ঞাত নম্বরের প্রাইভেটকার ও একটি মাইক্রোবাসে করে এবং তাদের সঙ্গীয় অজ্ঞাতনামা পাঁচ-ছয়জন আসামি দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে এরশাদকে ঘেরাও করে। এ সময় কোনো কিছু বুঝে ওঠার আগেই টেনে-হিঁচড়ে মাইক্রোবাসে তুলে খুন করার উদ্দেশ্যে চট্টগ্রাম শহরের দিকে নিয়ে যায়। পরে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে একটি ঘরে আটকে রেখে তাকে মারধর ও জখম করে। এ সময় আসামিরা মুক্তিপণ হিসেবে ১৫ লাখ টাকা দাবি করেন। টাকা না দিলে মেরে ফেলার হুমকি দেন। পরে তিনি ১০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দিয়ে ফিরে আসতে সক্ষম হন।
ভুক্তভোগী এরশাদ নাবিল খান বলেন, ‘আমি বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত থাকায় ঠিকাদারী ব্যবসা করার সুযোগ দেননি সাবেক ভূমিমন্ত্রীর লোকজন। সর্বশেষ সিইউএফএল সার কারখানায় কন্ট্রাকশন কাজে অংশ নেওয়ায় ভূমিমন্ত্রীর নির্দেশে অপহরণ করে মারধর ও মুক্তিপণ দাবি করে। পরে মুক্তিপণ দিয়ে প্রাণে বেঁচে ফিরে আসি। কিন্তু দেশে স্বৈরাশাসক ও অভিযুক্তরা প্রভাবশালী হওয়ায় আমি মামলা দায়ের করতে পারিনি। এখন স্বৈরাচার সরকার থেকে মুক্ত হয়ে দেশ স্বাধীন হওয়ায় বিচারের আশায় মামলা দায়ের করেছি।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে আনোয়ারা থানার ওসি মো. মনির হোসেন বলেন, সাবেক ভূমিমন্ত্রী, ইউপি চেয়ারম্যানসহ ১৫ জনের বিরুদ্ধে থানায় একটি মামলা হয়েছে। তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।