সব কমিশনের রিপোর্টের ভিত্তিতে নির্ধারণ হবে নির্বাচনের সময়
রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে তৃতীয় দফায় সংলাপে বসেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। আজ শনিবার (৫ অক্টোবর) বিকেল থেকে পর্যায়ক্রমে বিএনপি, জামায়াত, ইসলামী আন্দোলন, হেফাজতে ইসলামী, এবি পার্টিসহ কয়েকটি দলের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেন তিনি।
বৈঠক শেষে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় থেকে রাতে জানানো হয়, সব রাজনৈতিক দলই অন্তর্বর্তী সরকারকে সমর্থন দিয়েছে। তিন মাস পর সব কমিশনের রিপোর্টের ভিত্তিতে নির্বাচনের সময়সীমা নির্ধারণ করা হবে।
রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে বৈঠকের বিষয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম ও বিশেষ সহকারী মাহফুজ আলম। এ সময় নির্বাচনি রোডম্যাপ নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর আলোচনার বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে প্রেস সচিব বলেন, সংস্কার কমিশনগুলো তিন মাসের মধ্যে প্রতিবেদনগুলো দেবে। সেগুলো নিয়ে উপদেষ্টা পরিষদ রাজনৈতিক দল, সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষের সঙ্গে কথা বলবে। এরপর রিফর্মের বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলো একটা ন্যূনতম ঐকমত্যে আসবে। ঐকমত্যের ওপর নির্ভর করবে নির্বাচনের টাইমলাইন। কারণ কতটুকু রিফর্ম লাগবে সেটা দেখার বিষয়।
শফিকুল আলম বলেন, নির্বাচনি রোড ম্যাপের ব্যাপারে যে আলাপটা হচ্ছে সেটা হচ্ছে ছয়টা কমিশন গঠন করা হয়েছে, তার পাঁচটি পূর্ণাঙ্গ করা হয়েছে। বাকিটা দু’একদিনের মধ্যে ঘোষণা হবে।
এর আগে যমুনায় বৈঠক শেষে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গণমাধ্যমকে বলেন, বৈঠকে নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণার দাবি জানিয়েছে বিএনপি। একইসঙ্গে তারা দ্রুত নির্বাচনের জন্য কমিশন গঠনের কথা বলেছেন। প্রধান উপদেষ্টার পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, নির্বাচন হচ্ছে তাদের ‘এক নম্বর প্রায়োরটি’।
মির্জা ফখরুল আরও বলেন, সাবেক সরকার এনআইডি কার্ড স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে দেওয়ার কথা বলেছে। কিন্তু, এটা আমরা সেই এনআইডি কার্ড অর্ডিন্যান্স বাতিলের জন্য বলেছি। এ ছাড়া সব ইউনিয়ন পরিষদ বাতিলের দাবি জানিয়েছি। ২০২৪ সালে পক্ষপাতমূলক নির্বাচনের জন্য যারা দায়ী তাদের শাস্তির আত্ততায় আনার দাবি জানিয়েছি। নির্বাচন ব্যবস্থা ধ্বংস করেছে বিচারপতি খায়রুল হক, তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার আবেদন করেছি।
মির্জা ফখরুল বলেন, আগামী ৮ তারিখে অন্তর্বর্তী সরকারের দুমাস হবে। এখন পর্যন্ত গত সরকারের আমলে, অর্থাৎ ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে তাদের দোসর হিসেবে যারা কাজ করেছে, লুটপাট অনাচার অত্যাচারে নির্যাতন গুমখুনের ব্যাপারে গণহত্যার ব্যাপারে সহায়তা করেছে, তাদের বেশিরভাগই এখনও স্ব-স্ব পদে বহাল তবিয়তে আছে। অবিলম্বে তাদের সরিয়ে নিরপেক্ষ কাউকে আনার কথা আমরা বলেছি। ৫৯ জেলা প্রশাসক কীভাবে নিয়োগ পেয়েছে এবং কীভাবে নিয়োগ হয়েছে তা জানতে চেয়েছি। একইসঙ্গে যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে, তাদের নিয়োগ বাতিল করে দিতে আমরা বলেছি।
বৈঠকের বিষয়ে জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, আগে প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারকে গুরুত্ব দিয়ে যৌক্তিক সময়ে নির্বাচনের দাবি জানিয়েছি আমরা। ডা. শফিকুর রহমান বলেন, এই সরকার নির্দলীয় ও অন্তর্বর্তী সরকার। তারা দেশ শাসনের জন্য আসেনি। দেশ শাসনের সুষ্ঠু পথ বিনির্মাণের জন্য তারা এসেছে। পরপর তিনটা নির্বাচনে জাতি বঞ্চিত ছিল। তাদের কাজ জাতির সামনে একটা গ্রহণযোগ্য, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন তৈরির পরিবেশ করা। এই জন্য কিছু মৌলিক বিষয় তাদের সংস্কার করতে হবে। কী কী বিষয়ে তারা মৌলিক সংস্কার করবেন, সেই বিষয়ে কথা বলেছি। আগামী ৯ তারিখ আপনাদের সঙ্গে নিয়ে আমরা আমাদের দাবিগুলো উপস্থাপন করব। আপনারা দাওয়াত পাবেন। কী কী সংস্কার এই মুহূর্তে প্রয়োজন এবং কী কী সংস্কার পরবর্তী পর্যায়ে আমাদের লাগবে, সেটা আমরা জানাব।
এ ছাড়া আমার বাংলাদেশ পার্টির (এবি পার্টি) আহ্বায়ক এ এফ এম সোলায়মান চৌধুরীর নেতৃত্বে প্রতিনিধিদল পার্টির পক্ষ থেকে প্রধান উপদেষ্টার কাছে ছয় দফা পর্যবেক্ষণ ও ১১ দফা দাবি, পরামর্শ ও প্রস্তাবনা তুলে ধরেন।
হেফাজতে ইসলামীর ঢাকা মহানগরীর সাধারণ সম্পাদক মাওলানা মামুনুল হক বলেছেন, রাষ্ট্র সংস্কারে অনেকগুলো কমিশন গঠন হয়েছে। প্রতিটি কমিশন আলাদা আলাদা করে রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বৈঠক করবে, আলোচনার মাধ্যমে সংস্কার প্রস্তাবনা তৈরি করবে। সেই প্রস্তাবনা তৈরি হলে আবার রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বৈঠক করবেন। তারপরেই সকলের মতামত নিয়ে সংস্কার প্রস্তাবনা কাজ শুরু করবে।
মামুনুল হক বলেন, আমরা বলেছি যে শিক্ষা কমিশন বাতিল করা হয়েছে, এখন আরও একটি শিক্ষা কমিশন গত ৩০ সেপ্টেম্বর গঠন করা হয়েছে প্রাথমিক ও উপ-আনুষ্ঠানিক শিক্ষার বিষয়ে। সেক্ষেত্রে কিছু আপত্তির জায়গা রয়েছে। এই কমিশনে এমন ব্যক্তি রয়েছে, যারা বিগত রেজিম সরকারের হয়ে কাজ করেছে। এখানে আমাদের প্রধান উপদেষ্টার বিপক্ষে আইনি ব্যবস্থা নিয়েছেন এমন ব্যক্তিও রয়েছেন। আমরা এই বিষয়গুলো প্রধান উপদেষ্টাকে আরও সতর্ক থাকার কথা বলেছি। পতিত স্বৈরাচারের দোসররা যাতে রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার প্রক্রিয়ায় অন্তর্ভুক্ত হয়ে কোনো ধরনের ষড়যন্ত্র করতে না পারে সেটা বলেছি।