আওয়ামী লীগের ফিরে আসার সুযোগ নেই : শামসুজ্জামান দুদু
আওয়ামী লীগের ফিরে আসার সুযোগ নেই বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগকে রাজনৈতিক অধিকার দিয়ে কেউ যদি মনে করে দেশে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা সম্ভব, আমি তাদের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করছি। আওয়ামী লীগ ফ্যাসিবাদী একটি শক্তি। জার্মানির নাৎসিদের সঙ্গে তার তুলনা করা যায়।
আজ রোববার (৬ অক্টোবর) জাতীয় প্রেসক্লাবে এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে শামসুজ্জামান দুদু এসব কথা বলেন।
সংগঠনের সভাপতি মোক্তার আকন্দের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় বক্তব্য দেন বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা হাবিবুর রহমান হাবিব, নির্বাহী কমিটির সদস্য আলমগীর হোসেন, দেশ বাঁচাও মানুষ বাঁচাও আন্দোলনের সভাপতি কে এম রকিবুল ইসলাম রিপন প্রমুখ।
আওয়ামী লীগকে উদ্দেশ্য করে দুদু বলেন, গণতান্ত্রিক রাজনীতিতে তাদের কোনো স্থান হবে না। এর কোন কারণ নেই। কেউ যদি এটা মিলাতে চান তাহলে তারা তাদের মতো করে মিলাতে পারেন। তারা নাৎসিবাদ ও ফ্যাসিবাদের সমর্থক হিসেবে চিহ্নিত হবেন। আওয়ামী লীগ যে শুধু এক মাসের হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত ছিল এমন নয়, তারা সুদীর্ঘ ১৫-১৬ বছর ধরে এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত।
শামসুজ্জামান বলেন, বাংলাদেশের শুরুতে সাড়ে তিন বছরের একটা মর্মান্তিক ইতিহাস আছে। সেখানেও আওয়ামী লীগ রাজনৈতিক সুস্থতার পরিচয় দেয়নি। এ কারণেই বাংলাদেশ গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগের খুব প্রয়োজন, এটা ভাবার কোনো কারণ নেই। আর কেউ যদি এটা ভাবেন, ভাবতে পারেন ফ্যাসিবাদের তো দোসর থাকেই। পুলিশ প্রশাসন, মিলিটারি এবং তাদের হাজার হাজার লুটের টাকা ছিল, তাদের কর্মীদের হাতে নির্বিচারে অস্ত্র তুলে দেওয়া হয়েছিল; কিন্তু শেখ হাসিনাকে রক্ষা করতে পারেনি।
দুদু আরও বলেন, দেশের জনগণ যখন কাউকে প্রত্যাখ্যান করে সেই প্রত্যাখ্যান কত নির্মম হয়, তা গত দুই মাসে দেশের মানুষ ও বিশ্ববাসী দেখেছে। সে কারণে আগামী দিনে আওয়ামী লীগের ফিরে আসার খুব সুযোগ আছে বলে আমি মনে করি না।
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি ইঙ্গিত করে ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি বলেন, নির্বাচন যত তাড়াতাড়ি হবে তত দেশের জন্য দেশের মানুষের জন্য অর্থনীতি ও রাজনীতির জন্য ভালো হবে। যে কোন কথা বলে কেউ যদি নির্বাচন আড়াল করার চেষ্টা করে, বুঝতে হবে সে আর যাই হোক জনগণের ক্ষমতায়নে বিশ্বাস করে না। গত ২০ বছর ধরে এ দেশের মানুষ ভোট দিতে পারেনি। উন্নয়নের কথা বলে, গণতন্ত্রের তথাকথিত শব্দ উচ্চারণ করে, কেউ ইসলামের কথা বলে মানুষের ভোটাধিকারকে রোধ করার চেষ্টা করা হয়েছে। আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি আমার দলও মনে করে মানুষের ভোটাধিকার ফিরিয়ে দেওয়ার অর্থই হচ্ছে গণতন্ত্রের স্বপক্ষে কাজ করা। আপনি যতই যুক্তি দেন এমন কবিতা লিখে কোন লাভ হবে না যে কবিতা মানুষ বুঝতে পারে না। এমন কবিতা চাই যে কবিতা নজরুল রবীন্দ্রনাথের, যে কবিতা দেশের মানচিত্র চিবিয়ে খাব এরকম কবিতা বলার চেষ্টা করিয়েন না- আগে সংস্কার তারপরে নির্বাচন। মানুষের সঙ্গে ভোটের সবচেয়ে বড় সংস্কার, এর বাইরে যখন যাবেন তখনই দেশবাসী আপনাকে সন্দেহ করবেন, এরা বোধ হয় ক্ষমতা ধরে রাখতে চায়। ভালো কাজটা আগে করেন, খারাপ কাজটা বাদ দেন।
নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্য করে শামসুজ্জামান বলেন, দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান স্পষ্ট করে বলেছেন, বোঝার কোনো অসুবিধা নেই, গণতন্ত্রের আন্দোলন বন্ধ করা যাবে না। গণতন্ত্র এখনো প্রতিষ্ঠিত হয়নি, গণতন্ত্র তখনই প্রতিষ্ঠিত হবে যখন নির্বাচন হবে। আর নির্বাচনে কাকে ক্ষমতায় আনবেন? আমি, আমার দল ও এদেশের গণতন্ত্রকামী মানুষ মনে করে আগামী দিনের প্রধানমন্ত্রী তারেক রহমান। তাকে ঠেকানোর জন্য কোর্ট ব্যবহার করা হয়েছে, নির্বাসনে পাঠানো হয়েছে। তাকে ঠেকানোর জন্য মৃত্যুর মুখোমুখি করা হয়েছে, কিন্তু তিনি ভেঙে পড়েননি।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আরও বলেন, কোনভাবে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনকে ঠেকানো বা বিভক্ত করা যাবে না। যে যাই বলুক না কেন আগামী দিন গণতন্ত্রের দিন, বিএনপির দিন, ধানের শীষের দিন, খালেদা জিয়া- তারেক রহমানের দিন। এই বিশ্বাসটাকে সামনে নিয়েই আমরা এগিয়ে যেতে চাই।