কুড়িগ্রামে হত্যা মামলায় সাংবাদিকসহ আসামি ১০৪
আশিক হত্যা মামলায় জেলার মূলধারার তিন সাংবাদিককে জড়িয়ে কুড়িগ্রাম সদর থানায় ১০৪ জনের নামে একটি হত্যা মামলা করা হয়েছে। সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার সুনির্দিষ্ট কোনো অভিযোগ উল্লেখ করা না হলেও আসামির তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
এ নিয়ে সাংবাদিক মহলে অসন্তোষ এবং সুধীমহলে বিরূপ প্রতিক্রিয়া বিরাজ করছে। তবে এই হত্যা মামলায় আসামি করা হয়েছে উদ্দেশ্য প্রণোদিত এবং চক্রান্তমূলক বলে দাবি সচেতন মহলের। গত বৃহস্পতিবার (১০ অক্টোবর) করা অভিযোগে ৪০ নং ক্রমিকে ইনডিপেনডেন্ট টেলিভিশন ও কালের কণ্ঠের প্রতিনিধি এবং কুড়িগ্রাম প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল খালেক ফারুক, ৪২ নং ক্রমিকে দৈনিক সংবাদ ও নিউজ২৪ টেলিভিশনের প্রতিনিধি হুমায়ুন কবির সূর্য এবং ৬৪ নং ক্রমিকে এটিএন বাংলা ও এটিএন নিউজ টেলিভিশনের প্রতিনিধি ইউসুফ আলমগীরকে আসামি করা হয়েছে।
কুড়িগ্রাম সনাকের সভাপতি অ্যাডভোকেট আহসান হাবীব নীলু বলেন, এই তিন মিডিয়াকর্মী টিআইবির অনুপ্রেরণায় গঠিত সচেতন নাগরিক কমিটির কুড়িগ্রামের সদস্য। তারা দীর্ঘদিন ধরে দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই, সব বৈষম্যের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন। ঘটনার দিন তারাসহ বেশিরভাগ সাংবাদিক তৎকালীন সরকারি দলের হুমকি-ধমকির রোষানলে পড়েছিলেন। সংবাদ সংগ্রহের কাজে এসে তাঁরা ছাত্রলীগের ক্যাডার বাহিনীর দ্বারা সকাল সাড়ে ৯টা থেকে অবরুদ্ধ ছিলেন প্রেসক্লাব ও ঘোষপাড়াস্থ কুড়িগ্রাম চক্ষু হাসপাতালে। পুলিশ ও স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের সহায়তায় দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে তাঁদের উদ্ধার করা হয়। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সমর্থনে প্রেসক্লাবের সামনে সনাকের (টিআইবি) মানববন্ধন কর্মসূচি ছিল। সে জন্য তারা আগে থেকেই উপস্থিত ছিলেন। কিন্তু সরকার দলের বাধার মুখে সেই কর্মসূচি পালিত হয়নি। তাঁরা বরাবরই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের পাশে ছিলেন। শুধু তাই নয়, তাদের সন্তানরাও সেই আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা রাখেন। তাদের আনা-নেওয়ার কাজটিও অভিভাবক হিসেবে করেন। প্রকৃত সত্যকে আড়াল করতে মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে হয়রানি করা হচ্ছে। তিনজনই রাজনৈতিক ভাবে নিরপেক্ষ, উদ্যমী, সৎ ও নিষ্ঠাবান সাংবাদিক হিসেবে জেলায় পরিচিত। কুড়িগ্রাম প্রেসক্লাব এবং সনাকের পক্ষ থেকে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান তাঁরা।
এই বিষয়ে কুড়িগ্রাম প্রেসক্লাবের সভাপতি রাজু মোস্তাফিজ বলেন, গত ৪ আগস্ট আন্দোলন চলাকালে প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল খালেক ফারুকসহ বেশ কয়েকজন সাংবাদিক ও ক্যামেরাপার্সন প্রেসক্লাবে অবরুদ্ধ ছিলেন। পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে আব্দুল খালেক ফারুক নিহত আশিকের দাফনের সংবাদ সংগ্রহ করেন এবং সেটি প্রচারিত হয়েছে। মামলায় অভিযুক্তরা কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত নন। তারা নিরপেক্ষভাবে তাদের পেশাগত দায়িত্ব পালন করে আসছেন।
সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সভাপতি খায়রুল আলম বলেন, আমরা খুবই উদ্বিগ্ন, সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। হুমায়ন কবির সূর্য জেলা সুজনের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে আছেন। সুজন দেশব্যাপী বিদায়ী সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন সংগ্রামে সক্রিয় ছিল। কুড়িগ্রামও এর বাইরে নয়। কুড়িগ্রামে সুজন সরকারের নানাবিধ অপকর্ম ও স্বৈরাচারী আচরণের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন।
কুড়িগ্রাম হিতৈষী সংঘের সভাপতি ও কুড়িগ্রাম প্রেসক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা এ কে এম সামিউল হক নান্টু বলেন, স্বাধীন সাংবাদিকতার কণ্ঠ রোধ করতেই সাংবাদিকদের এই মিথ্যা মামলায় আসামি করা হয়েছে। এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। আশা করি সরকার তদন্ত করে দ্রুত আইনানুগ ব্যবস্থা নেবে।
এই বিষয়ে মামলার বাদী রহুল আমিন মামলা করার কথা স্বীকার করে বলেন, ১০৪ জন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলার অভিযোগ করেছি। আমি কোনো সাংবাদিককে আসামি করে মামলা করিনি। যারা অভিযুক্ত তাদের নামে মামলা করেছি।
কুড়িগ্রাম সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নাজমুল আলম বলেন, আশিক হত্যার ঘটনায় থানায় একটি মামলা হয়েছে। সেখানে ১০৪ জনের নাম উল্লেখ রয়েছে। মামলাটি তদন্তাধীন রয়েছে।