কুষ্টিয়ায় পদ্মার ভয়াবহ ভাঙন, আতঙ্কে দিন কাটছে নদী তীরবর্তী মানুষের
কুষ্টিয়ায় শত চেষ্টার পরেও থামছে না পদ্মার ভাঙন। জেলার মিরপুর উপজেলার বহলবাড়িয়া মির্জানগর এলাকায় পদ্মার পানি কমার সঙ্গে সঙ্গে তীব্র হচ্ছে ভাঙনও। এরই মধ্যে পদ্মা নদীতে দুটি জাতীয় গ্রিডের বৈদ্যুতিক টাওয়ার, শত শত হেক্টর ফসলি জমি, গোরস্তানসহ অনেক স্থাপনা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।
চরম হুমকির মুখে পড়েছে বসতবাড়ি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও কুষ্টিয়া-ঈশ্বরদী জাতীয় মহাসড়ক। ভাঙন আতঙ্কে দিন কাটছে নদী তীরবর্তী মানুষের। অনেকেই নদীগর্ভে বিলীনের আশঙ্কায় বসতবাড়ি ভেঙে অন্যত্রে সরিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। মানুষ ফসলি জমি ও বসতভিটা হারিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন।
আজ সোমবার (২১ অক্টোবর) সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, শত শত মানুষ দাঁড়িয়ে আছেন নদীর পাড়ে। দেখছেন নদীর ভাঙা-গড়ার খেলা। অনেকেই তাদের বসতভিটা ভেঙে নিয়ে যাচ্ছেন অজানা গন্তব্যে।
অনেক কষ্ট করে তৈরি করা একমাত্র বসতভিটাটি ভেঙে নিয়ে যাচ্ছেন পরিবারের লোকজন। আর নদীর দিকে অপলকভাবে তাকিয়ে অঝোরে কাঁদছেন মর্জিনা খাতুন।
চোখের পানি মুছতে মুছতে মর্জিনা খাতুন বলেন, পদ্মার ভাঙন থেকে বাঁচানো গেল না তিল তিল করে গড়ে তোলা বসতবাড়িটি। আজ তাই ভেঙে নিয়ে যেতে হচ্ছে। পরিবার নিয়ে দীর্ঘ ২৩ বছর এখানে বসবাস করেছি। অনেক আগেই নদীতে হারিয়ে গেছে ফসলি জমি। শেষ সম্বল বাড়িটাও আজ হারাতে হলো।
এখন পরিবার পরিজন নিয়ে কোথায় যাবেন, কি করবেন এমন অজানা শঙ্কায় প্রহর গুনছেন মর্জিনা খাতুন। ভাঙনরোধে অতিদ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের পাশাপাশি সরকারি সহযোগিতা কামনা করেন তিনি।
নদী ভাঙন প্রতিরোধ কমিটির আহ্বায়ক মেহেদি হাসান অপু বলেন, ২০১৬ সাল থেকে সাহেবনগর, মির্জানগরসহ আশপাশের বিশাল এলাকাজুড়ে পদ্মা নদীর ভাঙন শুরু হয়েছে। তখন থেকেই আমরা ভাঙন থেকে বাঁচতে এলাকার মানুষকে সাথে নিয়ে বিভিন্ন আন্দোলন করে আসছি। অতিদ্রুত ভাঙন থেকে রক্ষা ও পদ্মার ভাঙনে সর্বস্বান্ত হওয়া মানুষদের তালিকা করে তাদেরকে সরকারি সহযোগিতা দেওয়ার দাবি জানাচ্ছি।
আজ সোমবার (২১ অক্টোবর) দুপুরে ভাঙন কবলিত এলাকা পরিদর্শন করেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী (পশ্চিমাঞ্চল) শাজাহান সিরাজ বলেন, আমরা নদীতে জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙন প্রতিরোধে সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। ১৪৭২ কোটি টাকা ব্যয়ে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। ঠিকাদারও নিয়োগ হয়ে গেছে। নদীতে প্রবল স্রোতের কারণে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ কাজ শুরু করা যাচ্ছে না। অতি দ্রুতই ভাঙন রোধে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এসময় কুষ্টিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রকল্প পরিচালক আব্দুল হামিদ, নির্বাহী প্রকৌশলী রাশিদুর রহমান, নদী ভাঙন প্রতিরোধ কমিটির আহ্বায়ক মেহেদি হাসান অপুসহ ভুক্তভোগীরা উপস্থিত ছিলেন।