রাষ্ট্রপতির পদত্যাগ দাবিতে বঙ্গভবনের সামনে সড়ক অবরোধ
রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের পদত্যাগ দাবিতে বঙ্গভবনের সামনে সড়ক অবরোধ করেছে আন্দোলনকারীরা। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকে আজ মঙ্গলবার (২২ অক্টোবর) বিকেল সাড়ে ৩টা থেকে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে শুরু হয় গণজমায়েত। সেখান থেকে শিক্ষার্থীরা রাষ্ট্রপতি ও ছাত্রলীগকে পদত্যাগে আল্টিমেটাম দেন।
শিক্ষার্থীদের গণজমায়েতকে কেন্দ্র করে আগে থেকেই রাষ্ট্রপতির সরকারি বাসভবন বঙ্গভবনে সতর্ক অবস্থানে ছিল পুলিশ। পাশাপাশি সেখানে উপস্থিত আছেন সেনাবাহিনীর সদস্যরাও।
অবরোধ থেকে আন্দোলনকারীরা এক ঘণ্টার মধ্যে আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুলকে সেখানে আসার দাবি জানিয়েছেন। তারা এই উপদেষ্টার কাছ থেকে তাদের দাবির বিষয়ে সরকারের অবস্থান জানতে চান।
সম্প্রতি মানবজমিনের প্রকাশনা জনতার চোখের প্রচ্ছদ প্রতিবেদনে ‘নেপথ্যের গল্প’তে প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী জানান, রাষ্ট্রপতি তাকে জানিয়েছেন, তিনি শুনেছেন শেখ হাসিনা পদত্যাগ করেছেন, কিন্তু তার কাছে কোনো দালিলিক প্রমাণ নেই। এরপর গতকাল রাষ্ট্রপতির বিরুদ্ধে সমালোচনার ঝড় ওঠে। কারণ, গণঅভ্যুত্থানের মুখে প্রধানমন্ত্রীত্ব ছেড়ে শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পর ৫ আগস্ট রাতে জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। সেই ভাষণে তিনি বলেছিলেন, ‘আপনারা জানেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ রাষ্ট্রপতির কাছে পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন এবং আমি তা গ্রহণ করেছি।’
এরপর রাতে গণজমায়েতের ডাক দেয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। তার আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মশাল মিছিল করেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। সেখানে থেকেও রাষ্ট্রপতির দাবি জানানো হয়।
আজ শহীদ মিনারের গণজমায়েতে সমন্বয়ক আব্দুল হান্নান বলেন, আমরা এই শহীদ মিনার থেকে আমাদের বিপ্লব শুরু করেছিলাম। সেই বিপ্লবের ভয়ে বাংলাদেশ থেকে পালিয়েছিলেন ফ্যাসিস্ট হাসিনা। আর এখন, আপনি রাষ্ট্রপতি হিসেবে জনতার সঙ্গে প্রতারণা করছেন। কারণ, আপনি ৫ আগস্টে যা বলেছেন, তা এখন কার নির্দেশে ভুলে গিয়ে নতুন কথা বলছেন? আমরা স্পষ্ট বলে দিতে চাই—খুনি হাসিনা যেভাবে পালিয়েছেন, চুপ্পুকেও পালাতে হবে। তিনি বলেন, দেশের প্রশ্নে, দশের প্রশ্নে বিপ্লবীরা সব সময় মাঠে আছে। ছাত্রলীগের উদ্দেশে তিনি বলেন, ছাত্রলীগের হাতে এখনও রক্ত লেগে আছে।
সরকারের উদ্দেশে হান্নান বলেন, এই সপ্তাহ সময় দিলাম, এই সপ্তাহের মধ্যে ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করতে হবে। এই বৃহস্পতিবারের মধ্যে ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধের আল্টিমেটাম দেন তিনি।
হান্নান আরও বলেন, চুপ্পু সাহেব, আপনার সময় শেষ। ছাত্র জনতা আপনাকে আর দেখতে চাচ্ছে না।
মাহিন সরকার বলেন, চুপ্পু সাহেব দুই মাস বলছেন, তার কাছে ফ্যাসিস্ট হাসিনার পদত্যাগপত্র নেই। আমরা বলে দিতে চাই—পালিয়ে যাওয়া কারোর সঙ্গে পদত্যাগপত্রের কোনো সম্পর্ক নেই। ছাত্রলীগের হাতে আবরারের রক্ত লেগে আছে। এই দল এদেশের মাঠিতে ঠাঁই নেই।
সারজিস আলম বলেন, আবারও যদি প্রয়োজন হয়। আমরা আমাদের চোখ দিতে প্রস্তুত, পা দিতে প্রস্তুত, হাত দিতে প্রস্তুত, এমনকি জীবন দিতে প্রস্তুত আছি। ফ্যাসিস্ট দল ছাত্রদল যেভাবে আমাদের ভাইয়েদের হত্যা করেছে, তাদের উত্থান সহ্য করা হবে না।
প্রশাসন ও মিডিয়াকে হুঁশিয়ার করে হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, আপনারা যদি মনে করেন ফ্যাসিস্ট হাসিনার সঙ্গে আঁতাত করবেন তাহলে ভুল ভাবছেন। ছাত্র-জনতা হাসিনার বিকল্প বেছে নিয়েছে, আপনাদের বিকল্প বাছাই করতেও দ্বিধা করবে না। অনেক মিডিয়া, যারা ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের বন্দনা করে তার হাতকে শক্তিশালী করেছে, সেই ফ্যাসিস্ট মিডিয়া আবার মাথাচাড়া দিয়েছে। কলাম লিখতে শুরু করেছে। সেই শ্রুতি-বন্দনা এবং কলাম লেখা ৫ আগস্ট শেষ হয়ে গেছে। ফ্যাসিস্ট মিডিয়ারও পুনর্বাসন হবে না