সংস্কারের মাধ্যমে জনগণের ভোটের অধিকার নিশ্চিত করতে হবে : অ্যাটর্নি জেনারেল
অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান বলেছেন, পাঁচ বছর পরপর জনগণ যাতে তাদের স্বাধীন সার্বভৌম ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারে সংস্কারের মাধ্যমে সংবিধানে বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। বিষয়টি নিশ্চিত করার জন্য যা যা করা দরকার তা করলেই আমার মনে হয় এই সংবিধান সার্বভৌম হবে। সেই সংবিধানে বাংলাদেশের মানুষের আশা আকাঙ্খার প্রতিফলন ঘটবে।
আজ শনিবার (১৬ নভেম্বর) ‘খসড়া সংবিধানের প্রস্তাবনা’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন অ্যাটর্নি জেনারেল। জাতীয় প্রেসক্লাবে ল’ রিপোর্টার্স ফোরাম এই সেমিনারের আয়োজন করে।
অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান বলেন, ‘জনগণের ভোটের অধিকার নিশ্চিত হলে সংবিধানে আইনের শাসন, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা, ন্যায়বিচার, মৌলিক মানবাধিকার, মৌলিক অধিকারসহ আরও যা যা প্রত্যাশার জায়গা আছে সব নিশ্চিত হবে। সেখানি যদি গরমিল থাকে তাহলে যতভাবেই প্রতিষ্ঠানকে ঢেলে সাজান না কেন, কোনো প্রতিষ্ঠানই কাজ করবে না। যেমন কাজ করেনি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। এমনকি সুপ্রিম কোর্টও রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার হয়েছে আমরা দেখেছি। এই অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য একমাত্র পথ দেশে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করা। ভোটের মাধ্যমে জনগণের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করা।’
অ্যাটর্নি জেনারেল আরও বলেন, ‘বিপ্লব পরবর্তী বাংলাদেশে যাদের রক্তের বিনিময়ে আমরা সংবিধান সংশোধনের কথা ভাবছি সেটা তাদের প্রতি এক ধরণের শ্রদ্ধা জানানো। আমাদের সাংবিধানিক সীমাবদ্ধতার কথা চিন্তা করতে হবে। সংবিধানের ৯৩ অনুচ্ছেদের দিকে যদি তাকাই তাহলে এই প্রস্তাবনাগুলো এই সরকারের জায়গা থেকে সংবিধান সংশোধনের কোনো সুযোগ আছে কি না সেটা ভেবে দেখা দরকার। কেননা এই অনুচ্ছেদে আপনি সবকিছু করতে পারবেন শুধু সংবিধান সংশোধন ছাড়া। এখন সংসদ নেই, গণভোট নেই—এসব প্রশ্নগুলো এখানে যৌক্তিক ও আইনগতভাবে আসবে।’
আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এম এ মতিন বলেন, যে সংবিধান ফ্যাসিস্টদের জন্ম দিয়েছে, বিপ্লবের পর সেই সংবিধান গুরুত্ব হারিয়েছে। কারণ বিপ্লব তো সংবিধানের আওতায় হয়নি। এই বিপ্লব ব্যর্থ হলে বিপ্লবীদের ফাঁসির দড়িতে ঝুলতে হতো। যারা জীবন দিল, তাদের যে চিন্তা ভাবনা, তাদের যে চাওয়া–পাওয়া এগুলোকে ধারণ করে সংলাপের ভিত্তিতে একটি রাজনৈতিক সমঝোতা করা এবং একটি নির্বাচন করাই হোক লক্ষ্য।
সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক ও নির্বাচন সংস্কার কমিশনের প্রধান ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, সংবিধান শুধু আইজ্ঞদের বিষয় নয়, এটি জনণের বিষয়। এখানে নাগরিকদের মতামতও থাকতে হবে। সংবিধান, নির্বাচন ব্যবস্থাকে ধ্বংস করা হয়েছে পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে। ওই সংশোধনীর মাধ্যমে সংবিধানকে কলুষিত করা হয়।
ব্যারিস্টার সারা হোসেন বলেন, এখন সংবিধানের কিছু জায়গায় নতুন চিন্তা ভাবনা হতেই পারে। তাই মৌলিক মানবাধিকার ও মৌলিক অধিকার নিশ্চিতে কী ধরনের প্রতিকার আমরা পেতে পারি, ভবিষ্যতে কী করতে পারি, সেটা নিয়ে আমাদের ভাবতে হবে।
রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী অ্যাডভোকেট হাসনাত কাইয়ুম বলেন, ৫৩ বছরে আমরা একটা ভালো নির্বাচনি ব্যবস্থা তৈরি করতে পারিনি। গত ১৫ বছরে আইন করে লুটপাটের ব্যবস্থা করা হয়েছে। মৌলিক অধিকার চর্চার মতো পরিস্থিতি তৈরি না করলে কোনো চেষ্টাই ফলপ্রসু হবে না।
অনুষ্ঠানে জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক ও গণমাধ্যম কমিশনের প্রধান কামাল আহমেদ বলেন, রাজনীতিবিদেরা নাগরিকদের প্রজা মনে করেন। আমরা আসলেই প্রজা হয়ে গেছি। সংবিধান বার বার ব্যর্থ হয়েছে। নাগরিকের ক্ষমতা নেই। সংসদ সদস্যরা যতক্ষণ পর্যন্ত জবাবদিহিতার আওতায় না আসবেন ততক্ষণ পর্যন্ত আমাদেরকে প্রজা হয়েই থাকতে হবে।
এর আগে খসড়া উপস্থাপনে কিছু বিষয়ে সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব তুলে ধরা হয়। এর মধ্যে ছিল দ্বি-কক্ষ বিশিষ্ট আইন সভা, রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী কেউ দুবারের বেশি নির্বাচিত হতে পারবেন না, তত্ত্বাবধায়ক সরকার, নির্বাচন কমিশন এবং বিচারক নিয়োগে সুপ্রিম জুডিসিয়াল কমিশন গঠন।
বিচারপতি সৈয়দ মোহাম্মদ দস্তগীর হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে খসড়া সংবিধানের প্রস্তাব তুলে ধরেন ফোরামের সাবেক সভাপতি ও দৈনিক ইত্তেফাকের নির্বাহী সম্পাদক সালেহ উদ্দিন। এ সময় স্বাগত বক্তব্য দেন ফোরামের সাধারণ সম্পাদক মনিরুজ্জামান মিশন। এতে আরও বক্তব্য দেন, অ্যাডভোকেট আহসানুল করিম, ব্যারিস্টার মোস্তাফিজুর রহমান খান, অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনির, সাবেক জেলা ও দায়রা জজ মাসদার হোসেন এবং ব্যারিস্টার রাজা দেবাশীষ রায় প্রমুখ।
এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন ফোরামের যুগ্ম সম্পাদক আলমগীর হোসেন, কোষাধ্যক্ষ মনজুর হোসাইন, সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম নূর মোহাম্মদ, দপ্তর সম্পাদক সাকিল আহমাদ, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক হাবিবুল ইসলাম হাবিব, প্রশিক্ষণ ও কল্যাণ সম্পাদক জাবেদ আখতার এবং ফোরামের সদস্য শামীমা আক্তার, মো.ইয়াছিন ও আবু নাসের প্রমুখ।