বিএনপি জবাবদিহিতার সরকার প্রতিষ্ঠা করতে চায় : তারেক রহমান
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, বিএনপির ওপর এ দেশের মানুষের আস্থা ও বিশ্বাস রয়েছে। এই আস্থা ও বিশ্বাস ধরে রাখতে হবে। বিএনপি দেশে একটি জবাবদিহিতার সরকার প্রতিষ্ঠা করতে চায়। জনগণের কাছে জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে চায়।
আজ মঙ্গলবার (১০ ডিসেম্বর) বিকেলে কুমিল্লা নগরীর একটি ডুলিপাড়া ফানটাউনে বিএনপির বিভাগীয় প্রশিক্ষণ কর্মশালায় ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তারেক রহমান এসব কথা বলেন। তিনি আরও বলেন, পলাতক স্বৈরাচার দুর্নীতির মাধ্যমে টিকে থাকতে চেয়েছিল। তারা পরিকল্পিতভাবে দেশটাকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গেছে। মানুষের ভবিষ্যৎ তারা নষ্ট করে দিতে চেয়েছিল। দেশ রক্ষায় মানুষ এখন বিএনপির দিকেই তাকিয়ে আছে। মানুষ বিএনপির কাছে অনেক প্রত্যাশা করে। সেই প্রত্যাশা পূরণে আমাদের প্রস্তুত হতে হবে। বিএনপির কর্মী হিসেবে আসুন আমরা মানুষের প্রত্যাশা পূরণ করার লক্ষ্যে নিজেরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে চেষ্টা চালিয়ে যাই। বিএনপির নেতাকর্মীদের আগে অঙ্গীকার করতে হবে। আগামী দিনে দেশ পরিচালনার দায়িত্ব পেলে তারা যেন দুর্নীতি থেকে নিজেদের দূরে রাখে।
আমার বাবা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান দেশ ও জাতির কল্যাণে কাজ করতে গিয়েই ষড়যন্ত্রকারীদের হাতে জীবন দিয়ে শহীদ হয়েছেন উল্লেখ করে তারেক রহমান বলেন, আমার ভাই ষড়যন্ত্রকারীদের অত্যাচারে শহীদ হয়েছেন। আমার মা বেগম খালেদা জিয়া দেশের মানুষের পক্ষে থাকায় কীভাবে নির্যাতিত হয়েছেন, আপনারা দেখেছেন। বাংলাদেশের বহু বিএনপির নেতাকর্মীর পরিবারের কাহিনি আমার পরিবারের মতোই।
তারেক রহমান আরও বলেন, আমরা দেখেছি গত ১৫ বছরে পালাতক স্বৈরাচার সরকার দেশের শিক্ষা ব্যবস্থাকে কীভাবে ধ্বংস করেছে। কীভাবে দেশকে দুর্নীতিতে ডুবিয়ে দেওয়া হয়েছে। কীভাবে অর্থ লুটপাট করে বিদেশে পাচার করেছে। তারা দুর্নীতির ওপর টিকে থাকতে চেয়েছিল এবং সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে দুর্নীতি ঢুকিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছে। এই দুর্নীতি থেকে যদি দেশকে রক্ষা করতে হয় তাহলে তা প্রাইমারি স্কুল থেকেই শিক্ষার্থীদের সচেতন করে গড়ে তুলতে হবে।
সংস্কার প্রসঙ্গে তারেক রহমান বলেন, রাষ্ট্র সংস্কারের বিষয়টি আমরা আরও দুই বছর আগেই প্রস্তাব করেছি। আমরা জানি একটা সময় স্বৈরাচারের পতন ঘটবে। সেই উপলব্ধি থেকেই আমরা রাষ্ট্র সংস্কারের বিষয়টি প্রস্তুত করেছি। এই ভঙ্গুর রাষ্ট্র ব্যবস্থাকে সংস্কার করার জন্য আমরা অনেক আগে থেকেই প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছি। ৩১ দফার মাধ্যমেই রাষ্ট্রের প্রতিটি রন্দ্রে রন্ধ্রে সংস্কার করা হবে। তৃণমূলের মানুষের কাছে বিএনপির ৩১ দফার বিষয়গুলো তুলে ধরতে হবে। আমাদের আদর্শ দিয়ে দেশের মানুষের মন জয় করতে হবে।
জনগণের অধিকার ফিরিয়ে আনার জন্য আমাদের বহু নেতাকর্মী জীবন দিয়েছেন। জেল-জুলুম, অত্যাচার-নির্যাতনের শিকার হয়েছেন উল্লেখ করে তারেক রহমান বলেন, রাজনৈতিক দল হিসেবে আমাদের দলের নেতাকর্মীরাই বেশি গুম, খুন ও অত্যাচারের শিকার হয়েছে। ৬০ লক্ষাধিক নেতাকর্মী মামলা-হামলার শিকার হয়েছেন।
নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তারেক রহমান বলেন, নিজের কথা ভাবলে হবে না, আসুন আমরা দেশ ও জাতির কথা চিন্তা করি। নিজেদের বেঁচে থাকার জন্য যতটুকু দরকার ততটুকু অর্জন করে তার পরই আসুন আমরা দেশের জন্য এবং দেশের মানুষের জন্য কাজ করি। তাহলে আপনারা দেশের মানুষের কাছে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবেন। আসুন জীবনের বাকি সময়টুকু দেশ এবং দেশের মানুষের কল্যাণে কাজ করে মানুষের কাছে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকি।
দেশে দক্ষ মানবসম্পদ গড়ে তুলতে হবে উল্লেখ করে তারেক রহমান বলেন, দেশের শিক্ষা ব্যবস্থাকে আধুনিকায়ন করতে হবে। প্রতিটি শিক্ষার্থীকে অন্যান্য বিষয়ের পাশাপাশি ইংরেজিতে দক্ষ করে গড়ে তুলতে হবে। প্রতিটি শিক্ষার্থীকে খেলাধুলায় উৎসাহিত করতে হবে। আমরা চাচ্ছি প্রাইমারি লেভেল থেকে ইন্টারমিডিয়েট পর্যন্ত প্রতিটি নাগরিক একজন দক্ষ নাগরিক হিসেবে গড়ে উঠবে। দেশের নাগরিকদের এমনভাবে প্রশিক্ষিত করে গড়ে তুলতে হবে যাতে তারা দেশ-বিদেশে কোথাও গিয়ে না আটকায়। আমাদের নাগরিকরা সারা বিশ্বেই যেন দক্ষ মানব সম্পদ হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারে।
তারেক রহমান বলেন, জুলাই-আগস্ট বিপ্লবে নিহত শহীদদের নামে সংশ্লিষ্ট এলাকায় বিভিন্ন স্থাপনার নামকরণ করা হবে। এতে মানুষ যুগ যুগ ধরে তাদের স্মরণে রাখবে।
এক প্রশ্নের জবাবে তারেক রহমান বলেন, দেশের পাবলিক ট্রান্সপোর্ট ব্যবস্থাকে উন্নত করতে হবে। দেশের যানজট একটি প্রধান সমস্যা এ সমস্যা মোকাবিলা করার জন্য সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।
প্রশিক্ষণ কর্মশালায় বিভিন্ন শ্রেণি-পেশায় নিযুক্ত নেতাকর্মীরা ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে বিভিন্ন প্রশ্ন করেন। এ সময় তিনি এবং কর্মশালার প্রশিক্ষকরা তাদের প্রশ্নের উত্তর দেন।
প্রশিক্ষণশালার উদ্বোধন করে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন।
বিএনপির কুমিল্লা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক সেলিম ভূঁইয়ার সভাপতিত্বে প্রশিক্ষণ কর্মশালা পরিচালনা করেন বিএনপির প্রশিক্ষণবিষয়ক সম্পাদক এ বি এম মোশাররফ হোসেন।
কুমিল্লা বিভাগীয় এই কর্মশালায় অংশ নেন কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবাডায়িরা, চাঁদপুর, ফেনী নোয়াখালী লক্ষ্মীপুর জেলা বিএনপি, মহানগর ও পৌরসভার শীর্ষ নেতারা।
কর্মশালায় আলোচক ছিলেন বিএনপির মিডিয়া ছেলের আহ্বায়ক ডা. মওদুদ আলমগীর পাভেল, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের উপদেষ্টা ড. মাহাদী আমিন, সহপ্রশিক্ষণ সম্পাদক রেহানা আক্তার বানু, বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মনিরুল হক চৌধুরী, শিল্পবিষয়ক সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ, ত্রাণ ও পুনর্বাসনবিষয়ক সম্পাদক হাজি আমিনুর রশীদ ইয়াছিন, সহ ত্রাণ ও পুনর্বাসনবিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট নেওয়াজ হালিমা আরলি, সহ গণশিক্ষাবিষয়ক সম্পাদক আনিসুর রহমান তালুকদার খোকন, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মো. মোস্তাক মিয়া, বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য আব্দুর সাত্তার পাটোয়ারী, কৃষক দলের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সম্পাদক মাহবুবা হাবিব, কুমিল্লা মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক উৎবাতুল বারী আবু, সদস্য সচিব ইউসুফ মোল্লা টিপু, উত্তর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক মো. আক্তারুজ্জামান, সদস্য সচিব এ এফ এম তারেক মুন্সি প্রমুখ।
সভায় জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে প্রশিক্ষণ কর্মশালার আয়োজন করার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়। এ সময় নেতাকর্মীরা আগামী দিনে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পেলে কোনো ধরনের অনিয়ম-দুর্নীতিতে জড়িত হবেন না মর্মে অঙ্গীকার করেন।