কবি হেলাল হাফিজ আর নেই
‘এখন যৌবন যার যুদ্ধে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়’, এবং ‘যে জলে আগুন জ্বলে’র কবি হেলাল হাফিজ আর নেই (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্নাহ ইলাহি রাজিউন)। আজ শুক্রবার (১৩ ডিসেম্বর) দুপুরের দিকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। চিরকুমার এই কবি ৭৬ বছর বয়সে মারা যান।
জাতীয় প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক আইয়ুব ভূইয়া এনটিভি অনলাইনকে বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, আগামীকাল শনিবার বাদ জোহর জাতীয় প্রেসক্লাবে তার জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। এরপর মিরপুর বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে দাফন করা হবে।
কয়েক দশক ধরে একাকী জীবন কাটিয়েছেন কখনও প্রেসক্লাবের সামনে কোনো হোটেলে, কখনও শাহবাগের হ্যাপি হোমসে আবার কোনো না কোনো সুহৃদ-শুভাকাঙ্খীর বাসায়। তবে শরীর সুস্থ থাকলে তিনি দিনের বেশিরভাগ সময় কাটাতেন জাতীয় প্রেসক্লাবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রাবস্থায় ১৯৬৯ সালে গণঅভ্যুত্থানের সময় রচিত ‘নিষিদ্ধ সম্পাদকীয়’কবিতাটি তাঁকে কবিখ্যাতি এনে দেয়। তার কবিতা হয়ে উঠেছিল মিছিলের স্লোগান।
‘এখন যৌবন যার, মিছিলে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়/ এখন যৌবন যার, যুদ্ধে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়’কালজয়ী কবিতার এ লাইন দুটি বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত। পরবর্তীতে নব্বইয়ের স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলেন সময়ও কবিতাটি মানুষের মাঝে তুমুল সাড়া জাগায়।
১৯৮৬ সালে প্রকাশিত প্রথম কবিতাগ্রন্থ ‘যে জ্বলে আগুন জ্বলে’ কবিকে নিয়ে যায় জনপ্রিয়তার শীর্ষে। এরপর বইটির ৩৩টির বেশি সংস্করণ বেরিয়েছে। দীর্ঘসময় নিজেকে অনেকটা আড়ালে সরিয়ে নিয়েছিলেন হেলাল হাফিজ। আড়াই দশক পর ২০১২ সালে তিনি পাঠকদের জন্য আনেন দ্বিতীয় বই ‘কবিতা ৭১’। তৃতীয় ও সর্বশেষ বই ‘বেদনাকে বলেছি কেঁদোনা’প্রকাশিত হয় ২০১৯ সালে।
দ্রোহ আর প্রেমের কবি হেলাল হাফিজের জন্ম ১৯৪৮ সালের ৭ অক্টোবর নেত্রকোনার আটপাড়া উপজেলার বড়তলী গ্রামে। শৈশব, কৈশোর, তারুণ্য কেটেছে সেখানেই। ১৯৬৭ সালে নেত্রকোনা কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে ভর্তি হন। উত্তাল ষাটের দশক হয়ে ওঠে তার কবিতার উপকরণ। তারপর দীর্ঘদিন তিনি কবিতা থেকে দূরে ছিলেন। এবার চিরতরে পৃথিবী থেকেই চির বিদায় নিলেন।