ছাগলকাণ্ডে আলোচিত মতিউর ও তার স্ত্রী গ্রেপ্তার
ছাগলকাণ্ডে আলোচিত সাবেক এনবিআর কর্মকর্তা মতিউর রহমান ও তার স্ত্রী সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান লায়লা কানিজকে রাজধানীর বসুন্ধরা থেকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা শাখা (ডিবি)।
আজ বুধবার (১৫ জানুয়ারি) সকালে ডিএমপির উপকমিশনার (মিডিয়া ও পাবলিক রিলেশনস) মুহাম্মদ তালেবুর রহমান এক ক্ষুদে বার্তায় এ তথ্য জানান।
চলতি বছরের ৬ জানুয়ারি জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে মতিউর রহমান ও তার প্রথম স্ত্রী লায়লা কানিজ, তাদের ছেলে তৌফিকুর রহমান ও মেয়ে ফারজানা রহমানের বিরুদ্ধে তিনটি মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। গত বছরের ১৫ ডিসেম্বর মতিউর রহমান ও তার দ্বিতীয় স্ত্রী শাম্মী আখতার শিবলীর বিরুদ্ধে দুটি মামলা করে দুদক।
গত বছরের ২১ অক্টোবর মতিউর রহমান, তার স্ত্রী লায়লা কানিজ ও ছেলে আহমেদ তৌফিকুর রহমান অর্ণবের বিদেশ গমনে নিষেধাজ্ঞা দেন আদালত। তাদের দাখিল করা সম্পদ বিবরণী যাচাইয়ের জন্য ছয় সদস্য বিশিষ্ট অনুসন্ধান টিম গঠন করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
এর আগে গত বছরের ১১ জুলাই এনবিআরের এই সাবেক কর্মকর্তা মতিউর রহমান ও তার স্ত্রী সন্তানদের ১১৬টি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট, ২৩৬৭ শতাংশ জমি ও চারটি ফ্ল্যাট ক্রোকের নির্দেশ দেন আদালত। দুদকের কোর্ট পরিদর্শক আমির হোসেন বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ক্রোক হওয়া সম্পত্তির মধ্যে সাভারে মতিউরের নামে ১২ দশমিক ৫৮ শতাংশ, লায়লা কানিজের নামে ১৪ শতাংশ, ভালুকায় ছেলে অর্ণবের নামে ১০৪ শতাংশ, ভালুকায় মতিউরের ভাই এ এম কাইউম হাওলাদারের মালিকানাধীন গ্লোবাল সুজের ৯৫৮ শতাংশ জমি, গাজীপুরে মতিউর, ফারজানা, অর্ণব, মনোয়ার ও আপন ভুবন লিমিটেডের নামে ৮৭৫ দশমিক ৯৫ শতাংশ জমি, নরসিংদীর শিবপুরে মতিউরের স্ত্রী লায়লার নামে ৩৮ শতাংশ, ছেলে অর্ণবের নামে ১২৬ শতাংশ, মেয়ে ফারজানার নামে ৭২ শতাংশ, নাটোরের সিংড়ায় লায়লা কানিজের নামে ১৬৬ শতাংশ জমি।
এদিকে, স্থাবর সম্পত্তি ছাড়াও শেয়ার বাজারে তাদের ২৩টি বিও অ্যাকাউন্ট, ১১৬টি ব্যাংক হিসাবের ১৩ কোটি ৪৪ লাখ ৩৬ হাজার ৪৭১ টাকা ফ্রিজের আদেশ দিয়েছেন আদালত। এর মধ্যে মতিউর ছাড়া তার প্রথম স্ত্রী লায়লা কানিজ, ছেলে আহমেদ তৌফিকুর রহমান অর্ণব, মেয়ে ফারজানা রহমান ইস্পিতা, ভাই এম এ কাইয়ুম হাওলাদার, দ্বিতীয় স্ত্রী শাম্মী আক্তার শিভলী, মহিউদ্দিন মোল্লা, মাহফুজা ইউনুস, মো. বজলুর, তোফাজ্জল হোসেন, ফরহাদ আহমেদ, তাছাদ্দিক আহমেদ ফারাবি, একেএম বখতিয়ার আলম, শরিফ আহসান, মো. শফিকুল ইসলাম, হাওয়ানুর বেগম, রুমা কুমকুম, আবিদা সায়মা মাহমুদা, কাজী সাইফুর রহমান ও আইনুল কবিরের ব্যাংক হিসাব রয়েছে।
দুদকের পক্ষে থেকে সম্পত্তি ক্রোকের আবেদনে মতিউর রহমান দুর্নীতির মাধ্যমে দেশে ও বিদেশে নিজ নামে বা অন্যান্য ব্যক্তির নামে অবৈধ সম্পদ অর্জনসহ হুন্ডি ও আন্ডারইনভয়েসিং/ওভারইনভয়েসিংয়ের মাধ্যমে অর্থপাচার করে শত শত কোটি টাকার জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ করা হয়েছে।
গেল বছরের ঈদুল আজহায় রাজধানীর মোহাম্মদপুরের সাদিক অ্যাগ্রো থেকে দ্বিতীয় স্ত্রীর ছেলে মুশফিকুর রহমান ওরফে ইফাতের ১৫ লাখ টাকায় একটি ছাগল কেনার ঘটনায় আলোচনায় আসেন মতিউর রহমান। এ ছাড়া ইফাত ঢাকার বিভিন্ন খামার থেকে ৭০ লাখ টাকার গরু কিনেছেন বলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও গণমাধ্যমে উঠে আসে। এরপর থেকে মতিউর রহমানের ছেলের দামি ব্র্যান্ডের ঘড়ি, গাড়ি, আলিশান জীবনযাপন, মতিউর রহমান ও পরিবারের সদস্যদের নামে রিসোর্ট, শুটিং স্পট, বাংলো বাড়ি, জমিসহ নামে-বেনামে সম্পত্তি নিয়ে বিভিন্ন তথ্য প্রকাশ্যে আসে।
১১তম বিসিএসে বাণিজ্য ক্যাডারের কর্মকর্তা হিসেবে যোগ দেন মতিউর রহমান। তার বাড়ি বরিশালের মুলাদি উপজেলায়। তার প্রথম স্ত্রী লায়লা কানিজ ২০২৩ সালে নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলার উপনির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় চেয়ারম্যান হয়েছিলেন।
মতিউর রহমানের দ্বিতীয় স্ত্রী শাম্মী আখতার শিবলী ওরফে শিবু। শাম্মী আখতারের বাবার বাড়ি ফেনী জেলার সোনাগাজী উপজেলার আমিরাবাদ ইউনিয়নের সোনাপুর গ্রামে। তাদের সন্তান হলেন ছাগলকাণ্ডে ভাইরাল হওয়া তরুণ মুশফিকুর রহমান ইফাত।
গত বছরের ২৩ জুন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট অ্যাপিলেট ট্রাইব্যুনালের সভাপতি পদ থেকে মতিউর রহমানকে বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) করে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগে সংযুক্ত করা হয়। এরপর তাকে রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংকে সরকার মনোনীত পরিচালক পদ থেকেও সরিয়ে দেওয়া হয়।