হাসিনাকে আশ্রয় দিয়ে ভারত কোনোভাবেই স্থির হতে পারছে না : রিজভী
ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনাকে আশ্রয় দিয়ে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত কোনোভাবেই স্থির হতে পারছে না বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী।
আজ বৃহস্পতিবার (১৬ জানুয়ারি) দুপুরে রাজধানীর মধ্যবাড্ডায় ‘আমরা বিএনপি পরিবার’ এর উদ্যোগে বাড্ডা রামপুরা বনশ্রীতে শহীদ পরিবারের সাথে সাক্ষাৎ করতে গিয়ে রিজভী এসব কথা বলেন।
রিজভী বলেন, বাংলাদেশের বিরুদ্ধে তারা (ভারত) ক্রমাগতভাবে অপপ্রচার, মিথ্যাচার, অপতথ্য দিয়ে কলঙ্ক লেপন করে যাচ্ছে। পৃথিবীর অন্য কোনো দেশ এটা করছে না। অত্যন্ত অস্থির হয়ে গেছে শেখ হাসিনার জন্য তারা।
রিজভী আরও বলেন, ওই নরপিশাচ নারীকে কার সাথে তুলনা করবো? আমরা ফেরাউনের কথা বলি, আমরা নমরুদের কথা বলি, এই নরপিশাচ যেন নমরুদ ফেরাউনের আত্মা নিয়ে লেডি ফেরাউন হয়ে নিজ দেশের শিশু সন্তানদের রক্ত পান করতে দ্বিধা করেননি। আজকে এই দুরাচারী নারী শেখ হাসিনার জন্য কেউ কেউ মায়া কান্না করছে, কেউ কুমিরের কান্না করছে। যে দেশে তিনি আশ্রয় নিয়েছেন সেই দেশ যেন কোনোভাবেই স্থির হতে পারছে না। বাংলাদেশের বিরুদ্ধে তারা ক্রমাগতভাবে অপপ্রচার, মিথ্যাচার, অপতথ্য দিয়ে কলঙ্ক লেপন করে যাচ্ছে। পৃথিবীর অন্য কোনো দেশ এটা করছে না। বরং আমাদের এই পট পরিবর্তনকে ৫ আগস্টের পরিবর্তনের পরে এদেশের সাহসী জনতা আর তাদের তারুণ্যের যে উচ্ছ্বাস, তাদের যে আত্মদান এটা গৌরবান্বিত হয়েছে পৃথিবীর আটলান্টিকের ওই পার থেকে প্রশান্ত মহাসাগর, ভারত মহাসাগর, আরব সাগর প্রত্যেকটি জায়গায়।
বিএনপির এই মুখপাত্র আরও বলেন, এদেশের তরুণ ছাত্র-জনতার এই আত্মদানের ঢেউ যেন গোটা বিশ্বজনতাকে এক ধরনের চমক দিয়েছে। অথচ পার্শ্ববর্তী দেশ অপতথ্য দিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ নাকি সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন হচ্ছে। কোথায় অত্যাচার হচ্ছে? অত্যাচার তো করছেন আপনারা। দিল্লিতে জুমার নামাজ আদায়ের সময়ে পুলিশ দিয়ে মুসল্লিদেরকে আঘাত করা হয়েছে। তাদেরকে লাথি মেরে ফেলে দেওয়া হয়েছে।
ভারতে সংখ্যালঘু নিপীড়ন হয় অভিযোগ করে রিজভী বলেন, ৪০০ বছরে সম্রাট বাবর যে মসজিদ নির্মাণ করেছিলেন সেই মসজিদকে ভেঙেচুরে তারা সেখানে মন্দির নির্মাণ করেছে। সংখ্যালঘুদের ওপর যত অত্যাচার, অবিচার, অনাচার ওটা তো হয় ভারতেই, বাংলাদেশে হয় না। বাংলাদেশের হিন্দু-মুসলমান-খ্রিস্টান হাতে হাত ধরে ঘোরাফেরা করে। আমরা তো সবাই মিলে একই হাটে যাই, একই হাটে বাজার করি এই ঐতিহ্য আমাদের পুরোনো। অথচ আমাদের সেই মহান ঐতিহ্যকে কলঙ্কিত করার জন্য ভারত থেকে বারবার আমাদের বিরুদ্ধে অপতথ্য ছড়ানো হচ্ছে। আমাদের বিরুদ্ধে কলঙ্ক লেপন করা হচ্ছে। যখন তারা দেখল এটা করেও লাভ হচ্ছে না, এখন তারা কাঁটাতারের বেড়া দিচ্ছে।
ভারতকে উদ্দেশ্য করে রিজভী বলেন, কাঁটাতারের বেড়া যে আপনারা দিচ্ছেন, বাংলাদেশের বিজিবির সাথে কী আলোচনা করেছেন? কোথায় কীভাবে দেবেন? আপনারা যা দেখেন, যা করেন সেটা করেন আধিপত্যবাদী চিন্তা চেতনা থেকে। আপনারা বড় দেশ অনেক লোকসংখ্যা, এই অহংকার নিয়ে আপনারা কাজ করেন।
ভারতের উদ্দেশে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব বলেন, আপনারা দাঁড়িপাল্লা দিয়ে মাপলে বাংলাদেশের মানুষের দেশপ্রেম, বাংলাদেশের মানুষের জাতীয়তাবাদী চেতনা, বাংলাদেশের মানুষের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব রক্ষা করার অঙ্গীকার এইটা অনেক বেশি শক্তিশালী। ভারতে আপনাদের কত অস্ত্র আছে সেনাবাহিনী কত বড় ওইটা দিয়ে আপনারা মাপলে পারবেন না। আপনারা এত অস্থির কেন? আপনারা বাংলাদেশের বিষয়ে কেন যেন এলোমেলো কথা বলছেন। কারণ আপনারা কোনোভাবেই শেখ হাসিনার পতন কামনা করেননি। আপনাদের স্বার্থ শেখ হাসিনা দেখত। বাংলাদেশের স্বার্থ সে দেখত না। কারণ শেখ হাসিনা জানতো, অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন দিলে তিনি কোনোদিনও জিততে পারবেন না। সেই কারণে শেখ হাসিনা সব সময় দিল্লির একটা শেল্টার চেয়েছে। দিল্লির একটা আশ্রয় চেয়েছে। তিনি শেখ হাসিনা নিজেই তো বলেছিলেন ‘ভারতকে আমি যা দিয়েছি ভারত সারাজীবন মনে রাখবে’। এই কারণেই আজকে ভারতের নীতি নির্ধারকরা কিছু রাজনৈতিক দল অত্যন্ত অস্থির হয়ে গেছে শেখ হাসিনার জন্য।
অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্দেশে রিজভী আরও বলেন, অবিলম্বে রাজনৈতিক শক্তির কাছে ক্ষমতা নিয়ে আসতে হবে। অবাধ এবং সুষ্ঠু নির্বাচন যেটি আটকে দেওয়া হয়েছিল। শেখ হাসিনা দিনের ভোট রাতে করেছেন। মিডনাইট নির্বাচন করেছেন ভোটার শূন্য নির্বাচন করেছেন সেটির যাতে পুনরাবৃত্তি না হয় সেই দিকে লক্ষ্য রেখেই সামনের দিনে যা কিছু করার দরকার, সেটা আপনাদের অন্তর্বর্তী সরকারকে করতে হবে।
আমরা বিএনপি পরিবারের আহ্বায়ক সাংবাদিক আতিকুর রহমান রুমনের সভাপতিত্বে এবং সদস্য সচিব কৃষিবিদ মোকছেদুল মোমিন মিথুনের সঞ্চালনায় এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপির ক্ষুদ্রঋণ বিষয়ক সম্পাদক এম এ কাইয়ুম, সহ-অর্থনৈতিক বিষয়ক সম্পাদক মাহমুদুর রহমান সুমন, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সহ-সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার আশরাফ উদ্দীন বকুল প্রমুখ।