সংসদের আগে কেন স্থানীয় নির্বাচন চায় সংস্কার কমিশন?
আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ধ্বংস হয়ে যাওয়া নির্বাচনব্যবস্থা ঢেলে সাজাতে চায় অন্তর্বর্তী সরকার। সেজন্য গঠন করা হয় নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশন। এ কমিশনের প্রধান করা হয় সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদারকে। তার নেতৃত্বাধীন কমিশন হাজার হাজার মানুষের মতামত নিয়ে একগুচ্ছ সুপারিশ সংবলিত প্রতিবেদন জমা দিয়েছে সরকারের কাছে।
গত ১৫ জানুয়ারি অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে জমা দেওয়া এ প্রতিবেদনে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন আয়োজনের সুপারিশ করেছে কমিশন। যদিও দেশের বড় রাজনৈতিক দল বিএনপি সংসদ নির্বাচনের আগে কোনোভাবেই স্থানীয় নির্বাচন চায় না। তারপরও কমিশন চায়, সংসদের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন হয়ে যাক। কমিশনপ্রধানের দাবি, এতে দেশেরই লাভ হবে। তবে, বিএনপির মতো বড় দলের আপত্তি থাকায় শেষ পর্যন্ত এ সুপারিশ বাস্তবায়ন হবে কী হবে না, তা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে।
ড. বদিউল আলম মজুমদারের সঙ্গে এ প্রতিবেদকের কথা হয় স্থানীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে। তার কাছে প্রশ্ন করা হয়, কমিশন কেন সংসদ নির্বাচনের আগে স্থানীয় নির্বাচন করতে চায়? জবাবে তিনি বলেন, ‘আমরা যে প্রতিবেদন জমা দিয়েছি, সেখানে জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় নির্বাচন আয়োজনের কথা বলেছি। কমিশনের সুপারিশ নিয়ে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলাপ করে সরকার কী সিদ্ধান্ত নেবে, তা আমি জানি না। তবে, কমিশন চায় এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত হোক। এটা বাস্তবায়ন করা গেলে কিছু গ্রহণযোগ্য জনপ্রতিনিধি স্থানীয় সরকারে বসতে পারবেন। তাতে রাষ্ট্রের মঙ্গল হবে।’
ড. বদিউল আলম মজুমদার আরও বলেন, ‘পরিসংখ্যান বুরোর মাধ্যমে আমরা একটা জরিপ করেছি। সেই জরিপে ৪৬ হাজার মানুষ অংশ নিয়েছে। এর মধ্যে প্রায় ৯০ শতাংশ মনে করেন, জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় নির্বাচন হওয়া দরকার। এখন স্থানীয় সরকারের অনেকে পলাতক। ফলে, এ সরকার ব্যবস্থা অনেকটাই অকার্যকর। মানুষ অনেক সেবা থেকে বঞ্চিত। আর মানুষ মনে করে যে, এখন স্থানীয় সরকার নির্বাচন করলে অপেক্ষাকৃত ভালো লোকজন নির্বাচিত হবেন। যারা সমাজে গ্রহণযোগ্য।’
ড. বদিউল আলম মজুমদার আরও বলেন, ‘সংসদের আগে স্থানীয় নির্বাচন হলে দলীয় প্রভাব থাকবে না। এখন নির্বাচন হলে নির্বাচন কমিশনেরও কিছু অভিজ্ঞতা অর্জন হবে। যে অর্জন তারা জাতীয় নির্বাচনে কাজে লাগাতে পারবে। আমি মনে করি স্থানীয় সরকার নির্বাচন আগে হলে সব দলের জন্য ভালো। ভবিষ্যতে তারা কিছু ভালো মানুষ পাবেন স্থানীয় প্রতিনিধি হিসেবে। আবার নির্বাচন কমিশনের জন্যও এ ভোট হবে জাতীয় নির্বাচনের পুরো প্রস্তুতি। স্থানীয় সরকার কেন? স্থানীয় প্রতিনিধির মধ্যমে স্থানীয়ভাবে সমস্যা সমাধান করা। সেটা করতে হলে স্থানীয় সরকারকেই শক্তিশালী করা দরকার। স্থানীয় সরকারের মাধ্যমে সব ধরনের উন্নয়ন করা দরকার। সব দিক চিন্তা করে আমরা স্থানীয় নির্বাচন আগে করার সুপারিশ করেছি।’
কিন্তু, পরিসংখ্যান ব্যুরো তো সরকারের সংস্থা। আবার সরকারের অনেকে চায়, স্থানীয় নির্বাচন আগে হয়ে যাক। সেক্ষেত্রে এই সংস্থার তথ্য সরকারের ম্যানডেটের বাইরে যাবে, এটা বিশ্বাস করা কঠিন না? জবাবে ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘আমি তা মনে করি না, সরকার এখানে হস্তক্ষেপ করেছে। কারণ, এর সঙ্গে আমি পুরোপুরি জড়িত ছিলাম। আমি প্রশ্ন ঠিক করে দিয়েছি। কীভাগে পুরো জরিপটা সম্পন্ন করা দরকার, সেও আমরা ঠিক করেছি। এখানে কীভাবে কী করা হয়েছে, তা আমি ভালো জানি। আমরা সব স্তরের মানুষের সঙ্গে আলাপ করেছি। এর পক্ষে ব্যাপক জনমত রয়েছে।’
তবে স্থানীয় নির্বাচনের ব্যাপারে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পূর্বে স্থানীয় সরকার নির্বাচনের প্রশ্নই ওঠে না। দেশ চালায় জাতীয় সংসদ।
যদিও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটিসহ বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দল আগে স্থানীয় নির্বাচন চায়।
বিএনপিতো কোনোভাবেই জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় নির্বাচন চায় না, তাহলে কী হবে? এমন প্রশ্নে ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘আমরা আমাদের সুপারিশ সরকারকে জানিয়েছি। সরকার এখন রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা-সমালোচনা করবে। এসব নিয়ে বাহাস হবে। নিশ্চয় ভালো কোনো একটি সিদ্ধান্ত আসবে আলোচনা থেকে। তবে, অনেক দল ও মানুষ চায়, আগে স্থানীয় নির্বাচন হোক। ফলে, আমরাও চাই, আগে স্থানীয় নির্বাচন হোক।
স্থানীয় নির্বাচন আগে হলে জাতীয় নির্বাচন পিছিয়ে যেতে পারে, আপনার ধারণা কী? জবাবে মজুমদার বলেন, আমার মনে হয় না, আগে স্থানীয় নির্বাচন হলে জাতীয় নির্বাচন পিছিয়ে যাবে। আগে স্থানীয় নির্বাচন হলেও যথাসময়ে জাতীয় নির্বাচন করা সম্ভব।