আজও শরীরে স্প্লিন্টারের যন্ত্রণা বয়ে বেড়াচ্ছেন ভৈরবের নাজিম
১৭ বছর ধরে বহন করে চলা স্প্লিন্টারের যন্ত্রণা প্রতি মুহূর্তে মনে করিয়ে দেয় ২০০৪ সালের ২১ আগস্টের ভয়াবহ সেই গ্রেনেড হামলার কথা। সেদিনটির কথা মনে হলেই ভয়ংকর এক দুঃস্বপ্নের মতো মনে হয় তাঁর কাছে। হঠাৎ বিকট শব্দ। মানুষের চেঁচামেচি, চিৎকার, আর্তনাদ ও হৈ চৈ। দেহে আগুনের স্ফুলিংয়ের অসহ্য অনুভূতি।
কিশোরগঞ্জের ভৈরব উপজেলার আকবরনগর গ্রামের তৎকালীন যুবলীগের কর্মী নাজিম উদ্দিন। তিনি স্থানীয়ভাবে একটি অনুষ্ঠানে প্রিয় নেত্রী আইভি রহমানকে অতিথি করতে ঢাকায় গিয়েছিলেন ২০০৪ সালে ২১ আগস্ট। ঢাকায় গিয়ে জানতে পারেন নেত্রী খুব ব্যস্ত, পল্টনে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসবিরোধী জনসভা নিয়ে। তাই নাজিম উদ্দিনও সেদিন চলে যান ওই জনসভায়। সেখানে গিয়ে অন্যদের মতো তিনিও আহত হন মারাত্মকভাবে।
সারা শরীরে তাঁর অসংখ্য স্প্লিন্টার এসে বিঁধে। পরবর্তী সময়ে অস্ত্রোপচার করে কিছু স্প্লিন্টার বের করলেও কিছু রয়ে যায় শরীরে। যার দুঃসহ যন্ত্রণা বয়ে বেড়াচ্ছেন এই ১৭ বছর ধরে। আমৃত্যু হয়তো তাকে বয়ে বেড়াতে হবে এই অসহ্য যন্ত্রণা।
সেদিনের কথা বলতে গিয়ে নাজিম উদ্দিন জানান, বিকেল ৪টার দিকে তিনি পল্টনে আওয়ামী লীগের জনসভায় পৌঁছেন। জনসভা শুরু হলে জিল্লুর রহমান শেখ হাসিনার সঙ্গে ট্রাকের মঞ্চে দাঁড়িয়েছিলেন। আইভি রহমান ট্রাকের সামনে নারীদের নিয়ে মাটিতে বসেছিলেন। তিনি ছিলেন তাঁর কাছে। আইভি রহমান এ সময় তাঁকে এক বোতল পানি আনতে বলেন। তিনি পানি নিয়ে এসে প্রথমে বোতলটি বাড়িয়ে দেন ট্রাকের মঞ্চে থাকা জিল্লুর রহমানের হাতে। পরে আইভি রহমানের কাছে আসতেই হঠাৎ কয়েকটি বিকট শব্দে জনসভা এলাকা ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে যায়। মানুষ দৌড়াদৌড়ি করতে থাকে। মূহূর্তেই দেখেন আইভি রহমান পায়ে গ্রেনেডের আঘাত পেয়ে রক্তাক্ত হয়ে পড়ে আছেন। এক সময় তিনিও গ্রেনেডের আঘাতে গুরুতর আহত হয়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। ওই রাতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে জ্ঞান ফিরে তাঁর। ডান পাসহ সমস্ত দেহে অসহ্য যন্ত্রণা অনুভব করেন।
পরে তাঁকে স্থানান্তর করা হয় জেনারেল হাসপাতালে। ওইখানে ৯ দিন জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে কাটার পর দলীয় সভানেত্রী, বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আর্থিক সহায়তায় ভর্তি করা হন ভারতের পশ্চিমবঙ্গের পিয়ারল্যাস হাসপাতালে। সেখানে ডা. পি কে ব্যানার্জী ও ডা. এস এ ভেরার তত্ত্বাবধায়নে চিকিৎসা চলে দীর্ঘ প্রায় আড়াই মাস।
নাজিম উদ্দিন আরও জানান, ডান পায়ের কেটে যাওয়া নার্ভ ও দেহের বিভিন্ন স্থানে থাকা অবশিষ্ট স্প্লিন্টার বের করে আনতে এক বছর পর আবার সেখানে যাওয়ার পরামর্শ দিয়ে তাঁকে ফেরত পাঠায় দেশে। কিন্তু টাকার অভাবে আজও তৃতীয় অপারেশন করাতে পারেননি তিনি। ডান পায়ের একটি নার্ভ কেটে যাওয়ায় পঙ্গু প্রায় হয়ে যাওয়ায় খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলাফেরা করতে হচ্ছে তাকে।
পরবর্তী সময়ে সরকারি কোনো সহায়তা না পাওয়া এবং পরিবারের আর্থিক অস্বচ্ছলতার কারণে উন্নত চিকিৎসা আর সম্ভব হয়নি নাজিমের।
তারপরও নাজিম বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে জানান, তিনি তাৎক্ষণিক সুচিকিৎসার উদ্যোগ না নিলে হয়তো আজ পৃথিবীতে বেঁচে থাকতেই পারতাম না।
নাজিম জানান, তার পরবর্তী চিকিৎসার জন্য প্রয়োজন ১৫ থেকে ২০ লাখ। যা তার ভিটেমাটি বিক্রি করেও সম্ভব নয়। সুচিকিৎসার অভাবে নাজিম তাই যন্ত্রণাময় জীবনকেই বেছে নিতে বাধ্য হয়েছেন।
নাজিম উদ্দিন বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে ঘটনার বিচারের রায় হয়েছে। রায়ে ঘটনায় জড়িত অপরাধীদের কঠোর বিচার হলেও আজও আদালতের রায় কার্যকর হয়নি। আমি চাই, বিচারের রায় বহাল রেখে অপরাধীদের শাস্তি কার্যকর হোক।