প্রস্তাবিত বাজেটে ভ্রমণকর, হিলি চেকপোস্টে আজ থেকেই কার্যকর
দিনাজপুরের হিলি চেকপোস্ট দিয়ে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে চলাচল করা দুই দেশের পাসপোর্টধারী যাত্রীরা ভ্রমণকর নিয়ে বিড়ম্বনায় পড়েছেন। এ নিয়ে তাঁদের কাস্টমসের ব্যাগেজ শাখায় দায়িত্বরতদের সঙ্গে বচসা হয়েছে। আগে ভ্রমণকর ৫০০ টাকা ছিল। আজ শুক্রবার (২ জুন) সকাল থেকে ১০০০ টাকা করে নেওয়া হচ্ছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল জাতীয় সংসদে প্রস্তাবিত বাজেট পেশ করেন। প্রস্তাবিত বাজেটে বিদেশ ভ্রমণে ভ্রমণকর দ্বিগুণ করার প্রস্তাব করা হয়েছে।
বর্তমানে প্রতিদিন হিলি চেকপোস্ট দিয়ে শত শত বাংলাদেশি যাত্রী ভারতে চিকিৎসা, লেখাপড়া, ভ্রমণ, ব্যবসা সংক্রান্ত ও আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে দেখা করতে যান। ভারতীয় নাগরিকরাও একই ভাবে বাংলাদেশে আসেন।
ভারতীয় যাত্রী আবদুল্লাহ সাদ বলেন, বাংলাদেশ থেকে ভারতে ফিরে যাওয়ার জন্য গতকাল বৃহস্পতিবার ব্যাংক চালানমূলে ৫০০ টাকা ভ্রমণকর পরিশোধ করি। আজ শুক্রবার সকাল ১১টার দিকে সেই ভ্রমণকরের চালান হিলি কাস্টমসের ব্যাগেজ শাখায় জমা দিতে যাই। তখন দায়িত্বরত সেপাইরা তা গ্রহণ না করে বলে আজ থেকে ভ্রমণকর ১০০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। ৫০০ টাকার চালানের সঙ্গে আরও ৫০০ টাকার চালান কেটে নিয়ে আসেন। তা ছাড়া যাওয়া যাবে না। পরে ১০০০ টাকার চালান জমা দেই।’
ভারতীয় আরেক যাত্রী মোছা. সোনাভান খাতুন বলেন, ‘কয়েকদিন আগে হিলি চেকপোস্ট দিয়ে আত্মীয়র বাড়িতে বেড়াতে আসি। দ্রুত ফিরে যাব দেখে ওই দিনই চেকপোস্টের একজন লোকের মাধ্যমে ব্যাংকে ৫০০ টাকা জমা দিয়ে ভ্রমণকরের চালান কেটে নিই। কিন্তু আজ সকালে কাস্টমসের ব্যাগেজ শাখায় পাসপোর্টসহ ভ্রমণকরের চালান জমা দিলে বলা হয় ১০০০ টাকা ভ্রমণকর পরিশোধ করে যেতে পারবেন। আমাকে হিলি চেকপোস্টে পৌঁছে দিতে সঙ্গে এক আত্মীয় এসেছিলেন। এ সময় তার কাছ থেকে টাকা নিয়ে ভ্রমণকর পরিশোধ করে ফিরে যাচ্ছি। আমাকে বিব্রতর অবস্থায় পড়তে হয়েছে।’
জয়পুরহাটের পাঁচবিবির সুমতি পাহান ও মাহমুদা আকতার বলেন, ‘ভারতে যাচ্ছি তাই গতকাল বৃহস্পতিবার ব্যাংকে ভ্রমণকর বাবদ ৫০০ টাকা করে জমা দিয়ে চালান গ্রহণ করি। আজ সকালে ইমিগ্রেশনের কার্যক্রম শেষে যখন আমরা কাস্টমস অফিসে পাসপোর্ট ও ভ্রমণকরের চালান জমা দেই, তখন আমাদের বলে বাজেটে ভ্রমণকর বাড়ানো হয়েছে। আজ থেকে ১০০০ টাকা করে ভ্রমণকর। কী আর করার? বাধ্য হয়ে অতিরিক্ত হিসেবে ৫০০ টাকা করে পরিশোধ করি। আমাদের জন্য এটা একটা বাড়তি চাপ।’
এ সময় ভ্রমণকর প্রত্যাহারের দাবি জানান তাঁরা।
বগুড়ার যাত্রী স্বপন পারভেজ বলেন, পাসপোর্টে ভারত ও বাংলাদেশ চলাচলে ভ্রমণকর প্রত্যাহার করা দরকার। তাহলে দুই দেশের মধ্যে আরও মানুষজন চলাচল বাড়বে। ভ্রমণকর বাড়ানো ঠিক হয়নি।
হিলি ইমিগ্রেশন চেকপোস্টের অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শেখ আশরাফুল বলেন, ‘ভ্রমণকরের বিষয়ে যাত্রীরা অফিসে এসে জানতে চাইলে বলেছি এ ব্যাপারে আমার কাছে কোনো নির্দেশনা আসেনি। এটা কাস্টমস কর্তৃপক্ষের বিষয়। তবে বিভিন্ন মাধ্যমে শুনেছি. এবার বাজেটে ভ্রমণকর ১০০০ টাকা করা হয়েছে। পরে যাত্রীরা ১০০০ টাকা করে ভ্রমণকর দিয়ে যাতায়াত করছেন।’
এদিকে হিলি স্থল শুল্ক স্টেশনের সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা মেহেদী হাসান বলেন, ‘২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে ভ্রমণকর ১০০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। যা আজ শুক্রবার থেকে কার্যকর করা হয়েছে। আগে ৫০০ টাকা ভ্রমণকর পরিশোধ করে যাত্রীরা আসা-যাওয়া করতে পারতেন।’
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের কোনো নির্দেশনা পেয়েছেন কি না জানতে চাইলে সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা মেহেদী হাসান বলেন, ‘আজ সাপ্তাহিক ছুটির কারণে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) থেকে বাজেট নির্দেশিকা পাওয়া যায়নি। তবে স্থল শুল্ক স্টেশনের উপকমিশনার স্যারের মৌখিক নির্দেশে এবং বাজেট নির্দেশিকা অনুযায়ী যাত্রীদের কাছ থেকে ব্যাংকের চালানের মাধ্যমে এই ভ্রমণকর নেওয়া হচ্ছে। বিষয়টি আজ সকালে ব্যাগেজ শাখায় দায়িত্বরতদের জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। আগে ভ্রমণকর ৫০০ টাকা ছিল। আজ থেকে ১০০০ টাকা কার্যকর করা হয়েছে এবং গ্রহণ করা হচ্ছে। পাসপোর্ট যাত্রীরা ভ্রমণকরের টাকা ব্যাংকে পরিশোধ করে কাস্টমস ব্যাগেজ শাখায় চালানের কপি জমা দিয়ে গমন করতে পারবেন।’
সোনালী ব্যাংক হাকিমপুর শাখার একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না শর্তে জানান, আজ সকাল থেকে একজন পাসপোর্ট যাত্রীর নাম ও তার পাসপোর্ট নম্বর দিয়ে দুইটা ৫০০ টাকার ভ্রমণকরের রশিদ ইস্যু করা হচ্ছে। যেহেতু আমাদের কাছে এখনও জাতীয় রাজস্ব বোর্ড থেকে এক হাজার টাকার রশিদ দেওয়া হয়নি। তাই আগের ভ্রমণকরের দুইটা করে রশিদ দেওয়া হচ্ছে। আজ কত জন যাত্রী দুইটা ৫০০ টাকার ভ্রমণকরের রশিদ দিয়ে গেছেন—এমন প্রশ্নে উত্তরে তিনি জানান, ২০০ থেকে ২৫০ জন তো হবেই।
হিলি স্থল শুল্ক স্টেশনের একটি সূত্র জানায়, ১২ বছর পর্যন্ত যাত্রীদের ভ্রমণকর অর্ধেক করা হয়েছে। এ ছাড়া পাঁচ বছর বা তার চেয়ে কম বয়সী যাত্রী, অন্ধ ব্যক্তি, ক্যান্সারে আক্রান্ত রোগী বা স্ট্রেচার ব্যবহারকারী বা পঙ্গু ব্যক্তিরা ভ্রমণকর ছাড়াই ভারত ভ্রমণ করতে পারবেন।
এদিকে বেনাপোল স্থলবন্দরে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে এ স্থলবন্দর দিয়ে আজও ৫০০ টাকা ভ্রমণকর দিয়েই যাত্রীরা পারাপার হয়েছেন। বেনাপোল কাস্টমস হাউজের ডেপুটি কমিশনার তানভীর আহমেদ এ তথ্য নিশ্চিত করেন।