নিলামের শঙ্কায় গাড়ি আমদানিকারকরা
টানা অবরোধ-হরতালে মংলা বন্দরে আটকে পড়েছে প্রায় সাড়ে চার হাজার গাড়ি। সহিংসতার আশঙ্কায় এসব গাড়ি বন্দর জেটি থেকে ছাড়িয়ে নিতে পারছেন না ব্যবসায়ীরা। তবে কাস্টমস শুল্ক আইন অনুযায়ী, আমাদানীকৃত রিকন্ডিশন গাড়ি ৪৫ দিনের মধ্যে ছাড়িয়ে নিতে না পারলে, তা নিলামে ওঠার কথা। ফলে আটকে পড়া গাড়ির আমদানিকারকরা শঙ্কায় রয়েছেন। পাশাপাশি ব্যাংকঋণ ও আনুষঙ্গিক ব্যয় বাড়ায় দুশ্চিন্তায় রয়েছেন তাঁরা।
রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে বন্দর থেকে গাড়ি ছাড় কমে যাওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে মংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের পরিচালক (ট্রাফিক) কাজী গোলাম মোক্তাদের এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘ব্যবসায়ীরা গাড়ি ছাড় না করালে বন্দর কর্তৃপক্ষের কিছুই করার নেই। অবরোধ ও হরতালের মধ্যেও বন্দরে কার্যক্রম স্বাভাবিক রয়েছে।’
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, আমদানীকৃত রিকন্ডিশন গাড়ির মডেল অনুয়ায়ী প্রতিটি গাড়ির দাম ২০ লাখ থেকে দেড় কোটি টাকা পর্যন্ত। সড়ক পথে পরিবহনে আগুন ও হামলার আশঙ্কায় বন্দর থেকে গাড়ি ছাড়িয়ে নেওয়া যাচ্ছে না। গত এক মাসের অস্থিতিশীল পরিবেশের কারণে মংলা বন্দর জেটি ও ইয়ার্ডে সাড়ে চার হাজার রিকন্ডিশন গাড়ি ছাড়ের অপেক্ষায় রয়েছে। মংলা বন্দরে রিকন্ডিশন গাড়ি আমদানির সঙ্গে প্রায় ২০০ প্রতিষ্ঠান জড়িত রয়েছে। গাড়ি ছাড় করাতে না পারায় ব্যাংকঋণসহ আনুষঙ্গিক বিভিন্ন খাতে ক্ষতি দিন দিন বেড়েই চলেছে। এ অবস্থায় ব্যবাসায়ীরা বড় লোকসান ও পুঁজি হারানোর আশঙ্কায় ভুগছেন।
বাংলাদেশ রিকন্ডিশন ভেহিক্যাল ইম্পোর্টার্স অ্যান্ড ডিলার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বারভিটা) সাবেক সভাপতি ও রিকন্ডিশন গাড়ি আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান মেসার্স হক বে অটোমোবাইলসের মালিক আবদুল হক বলেন, চলমান রাজনৈতিক অস্থিতিশীল পরিবেশের কারণে তাঁদের ব্যবসায় অপূরণীয় ক্ষতি হচ্ছে। আর এ ক্ষতি মোকাবিলায় কী করবেন, তা নিয়ে ব্যবসায়ীরা হতাশায় ভুগছেন।
আবদুল হক জানান, হরতাল অবরোধের কারণে মংলা বন্দরে তাঁর প্রতিষ্ঠানের এক হাজার গাড়ি পড়ে আছে। কবে নাগাদ এসব গাড়ি ছাড় করে নিতে পারবেন তা নিয়ে রয়েছে চরম অনিশ্চয়তা। কাস্টমস শুল্ক আইন অনুযায়ী, আমদানীকৃত রিকন্ডিশন গাড়ি ৪৫ দিনের মধ্যে ছাড়িয়ে নিতে না পারলে তা নিলামে উঠবে। কিন্তু মংলা বন্দরে ব্যবসায়ীদের আনা গাড়ির সিংহভাগই এখনো পড়ে আছে জেটির ইয়ার্ডে। চলতি মাসের মাঝামাঝি সময় নাগাদ ছাড়িয়ে না নিলে শুল্ক বিভাগের বিধি অনুয়ায়ী বন্দরে থাকা সাড়ে চার হাজার গাড়ি নিলামে উঠতে পারে। এ নিয়ে আতঙ্কেও ভুগছেন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা। এ ছাড়া ব্যাংকঋণও যথাসময়ে পরিশোধে ব্যর্থ হলে ঋণখেলাপির তালিকায়ও অন্তর্ভুক্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে তাদের।
মংলা বন্দরের সহকারী ট্রাফিক ম্যানেজার মোস্তফা কামাল জানান, চলমান অবরোধ ও হরতালে এ বন্দর থেকে শতকরা প্রায় ৩৫ ভাগ গাড়ি ছাড় কমে গেছে। এরই মধ্যে ৪ ফেব্রুয়ারি ৩০৮টি রিকন্ডিশন গাড়ি নিয়ে এমভি গোল্ডেন ফান নামে একটি জাহাজ বন্দর এসেছে। এ ছাড়া ১২ ফেব্রুয়ারি ৫০০ গাড়ি নিয়ে এ বন্দরে আরেকটি জাহাজ ভেড়ার শিডিউল রয়েছে।
বন্দর সূত্র জানায়, ইয়ার্ড ও জেটি এলাকায় প্রায় ১০ হাজার গাড়ি রাখার ব্যবস্থা করা যায়। তবে আমদানি করা গাড়ি বন্দর ইয়ার্ড ও গোডাউনে রাখা এবং স্বাভাবিক নিয়মে ডেলিভারি দিতে বন্দরের কোনো সমস্যা নেই। এ কারণে সুযোগ-সুবিধা বুঝে অনেকটা ঝুঁকি নিয়ে রাতেই গাড়ি ছাড় করিয়ে নিচ্ছেন আমদানিকারকদের কেউ কেউ। কিন্তু গত এক মাসে গাড়িছাড়ের সংখ্যা কমেছে ১০০ থেকে ১৫০টি। সরকারের পক্ষ থেকে সড়ক-মহাসড়কে গাড়ি চলাচলের জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মোতায়েন থাকলেও তাতে ভরসা পাচ্ছেন না গাড়িচালকরা। অন্যদিকে চলমান সহিংস পরিস্থিতিতে শোরুম খোলা রাখাও নিরাপদ মনে করছেন না ব্যবসায়ীরা।
গাড়ি আমদানিকারক সিনহুয়া অটোমোবাইলসের মালিক মো. রফিকুল ইসলাম জানান, আমদানি করা গাড়ি বন্দর থেকে ছাড় করিয়ে শোরুমে প্রদর্শন করতে পারছেন না তাঁরা। এ খাতে ব্যবসায়ীদের ক্ষতির পরিমাণ প্রায় সাত হাজার কোটি টাকা। মংলা বন্দরে বর্তমানে যে গাড়ি আটকে আছে তাতে ব্যবসায়ীদের প্রতিদিন প্রায় ৫০ কোটি টাকার ক্ষতি হচ্ছে। রাজনৈতিক অস্থিরতা না থাকলে প্রতিদিন গড়ে ১০০ করে ডেলিভারি নিতে পারলে মাসে কমপক্ষে আড়াই হাজার গাড়ি বন্দর থেকে ছাড়িয়ে শোরুমে প্রদর্শন করা যায়। গাড়িগুলো বন্দরে পড়ে থাকায় আমদানিকারকদের বাড়তি গোডাউন ও ইয়ার্ড ভাড়া বা ক্ষতিপূরণ দিতে হচ্ছে প্রায় পাঁচ কোটি টাকা। এ পরিস্থিতিতে আমদানি বাবদ নেওয়া ব্যাংকসুদ ও বন্দরের ভাড়া মওকুফের দাবি জানান তিনি।