৫৬ হাজার কোটি টাকা খেলাপি ঋণ, আলাপি কত?
খেলাপি ঋণ আদায়ে অর্থ আদালতের প্রতি মামলা করার আহ্বান জানিয়ে সংসদ সদস্য সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেছেন, ‘পত্রিকায় দেখলাম ৫৬ হাজার কোটি টাকা ঋণ খেলাপি হয়েছে। ৫৫-৫৬ হাজার কোটি টাকা যদি খেলাপি ঋণ হয়, তাহলে আলাপি ঋণ কত? আলাপি ঋণ মানে যেগুলোর কোনো হদিস নেই।’
আজ সোমবার জাতীয় সংসদে আসন্ন অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য এ প্রশ্ন করেন।
সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেন, ‘হলমার্ক গেল, সোনালী, রূপালী ব্যাংকের ২২ হাজার ৭০০ কোটি টাকা গেছে। বেসিক ব্যাংক তো বেসিক হয়ে গেছে। এসব খেলাপি ঋণ আদায় করতে না পারলে বাজেট দিয়ে কী হবে?’ একই সঙ্গে ব্যাংকিং কমিশন করে আর্থিক খাতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার আহ্বান জানিয়ে তিনি বাজেটে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও কৃষি খাতে বরাদ্দ বাড়ানোর দাবি জানান।
মন্ত্রীদের সমালোচনা করে সুরঞ্জিত বলেন, ‘সংসদে মন্ত্রীরা অনেকে কথা বলেন। আমি নির্বাচন করতে পারব কি পারব না এই সিদ্ধান্ত সংসদ দিতে পারে না। এ জন্য নির্বাচন কমিশন, উচ্চ আদালত ও সংবিধান রয়েছে। মন্ত্রীদের কথা বলার সময় সতর্ক হয়ে কথা বলা উচিত। মন্ত্রীরা যে যে দলেরই থাকেন, আপনাদের আলাদা আলাদা এজেন্ডা থাকতে পারে এবং আপনারা যা ইচ্ছা বলতে পারেন। কিন্তু এমন কিছু বলবেন না যেন আমাদের বিব্রত হতে না হয়। যেহেতু আপনারা মন্ত্রী; আপনাদের বক্তব্যের দায় প্রধানমন্ত্রীর ওপর বর্তায়।’ তিনি বলেন, ‘খালেদা জিয়ার বিচারে কী হবে, ২১ আগস্ট, জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় তাঁর কী শাস্তি হবে সেটা আদালত বুঝবেন।’
গত শনিবার সংসদে বাজেট আলোচনায় অংশ নিয়ে তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু ২০১৯ সালের নির্বাচনে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া অংশগ্রহণ করতে পারবেন না বলে মন্তব্য করেন।
বাংলাদেশ প্রসঙ্গে ব্রিটিশ পার্লামেন্টে আলোচনার ব্যাপারে সুরঞ্জিত বলেন, ‘বাংলাদেশে কী হয়েছে তা ব্রিটিশ সরকার আমাদের সরকারকে বলবে। আমাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় রয়েছে সেখানে বলতে পারে। কিন্তু পার্লামেন্ট টু পার্লামেন্ট এভাবে সমালোচনা করতে পারে না। এটা পৃথিবীর কোথাও নেই।’ তিনি বিষয়টি নিয়ে সংসদে আলোচনারও প্রস্তাব করেন।
আওয়ামী লীগের এই প্রবীণ নেতা বলেন, ‘আমরা রক্ত দিয়ে এ পার্লামেন্ট তৈরি করেছি। বাংলাদেশে কী হয়েছে, যে ব্রিটিশ পার্লামেন্টে সেটা নিয়ে আলোচনা করতে হবে? আমরা (ব্রিটিশ পার্লামেন্ট) হাউস অব কমন্সকে শ্রদ্ধার সঙ্গে দেখি। এক পার্লামেন্টের আরেক পার্লামেন্টের মধ্যে সম্পর্ক হবে শ্রদ্ধাশীল ও বন্ধুত্বপূর্ণ। হাউস অব কমন্সকে আমরা মাদার অব পার্লামেন্ট বলে থাকি। কিন্তু ১৭ জুন হাউস অব কমন্সের চেম্বারে আইন প্রণয়ন ছাড়া ওয়েস্টমিনস্টারের ৩০ নম্বর বৈঠকে কতগুলো ভুল ইস্যু নিয়ে আলোচনা হলো। এক রাষ্ট্রের সঙ্গে আরেক রাষ্ট্রের একটা সম্পর্ক আছে। সেখানে কিছু পরামর্শ দিতে পারে। কিন্তু এভাবে এক পার্লামেন্ট আরেক পার্লামেন্টের বিষয় নিয়ে বিদ্বেষপূর্ণ কথা বলতে পারে না।’
‘আপনি (স্পিকার) কমনওয়েলথ পার্লামেন্টারি অ্যাসোসিয়েশনের (সিপিএ) সভাপতি। তাই আপনার দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। আপনি বিষয়টি তুলবেন।’ যোগ করেন সুরঞ্জিত।
সাবেক মন্ত্রী বলেন, ‘১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পর তো একটা টু শব্দও করেনি। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর জিয়াউর রহমান ইনডেমনিটি জারি করে হত্যার বিচার বন্ধ করে দেন তাতেও কোনো কথা বলেনি ব্রিটিশ পার্লামেন্ট। জিয়াউর রহমান ১৯৮৬ সালে হ্যাঁ-না ভোট দিয়ে ৯৮ শতাংশ ভোটগ্রহণ দেখিয়ে ক্ষমতা দখল করল। তখন তো কিছু বললেন না?’