বায়োটেক ফসলের মডেল বাংলাদেশ
জিনগতভাবে পরিবর্তিত (বায়োটেক) ফসলের উৎপাদন বেড়েই চলেছে। ২০১৪ সালে বিশ্বে ১৮ কোটি ১৫ লাখ হেক্টর জমিতে এ ধরনের ফসলের চাষ হয়েছে। আগের বছরের চেয়ে ৬০ লাখ হেক্টর জমিতে এর চাষ বেড়েছে।
গত বছর বাংলাদেশসহ মোট ২৮টি দেশে এ ধরনের ফসলের চাষ হয়েছে। ২০টি উন্নয়শীল ও আটটি শিল্পোন্নত দেশের চাষিরা বিশ্বের ৬০ শতাংশ মানুষের জন্য এ জাতের ফসল উৎপাদন করছে।
আজ বুধবার ইন্টারন্যাশনাল সার্ভিস ফর দ্য অ্যাকুইজিশন অব অ্যাগ্রি-বায়োটেক অ্যাপ্লিকেশনসের (আইএসএএএ) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে।
১৯৯৬ থেকে এ পর্যন্ত ১০টির বেশি খাদ্য ও ফসল জিনগতভাবে পরিবর্তনের মাধ্যমে উৎপাদনে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এরই মধ্যে অনুমোদন ও বাণিজ্যিকীকরণ হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ভুট্টা, সয়াবিন, তুলা, পেঁপে, বেগুন ও আলু। বায়োটেক ফসল খরা সহনশীল, পোকা ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি, পুষ্টি ও খাদ্যমান বেশি এবং জলবায়ু পরিবর্তন হলেও টিকে থাকতে পারে। তবে বিশ্ব জুড়ে বায়োটেক ফসলের বিরোধিতাও রয়েছে। তাদের ভাষ্য, এ ধরনের ফসল স্বাস্থ্যসম্মত নয়। করপোরেট প্রতিষ্ঠানের মুনাফার জন্য এমন ফসলের প্রসার ঘটানো হচ্ছে।
বায়োটেক ফসল উৎপাদনে বাংলাদেশ একটি মডেল হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। দেশটির সরকার ২০১৩ সালের ২৮ অক্টোবর বিটি বেগুনের অনুমোদন দিয়েছে। ২০১৪ সালের জানুয়ারিতে দেশটির ১২০ জন কৃষক ১২ হেক্টর জমিতে এ ফসলের চাষ করেছেন। এ ক্ষেত্রে সরকার চাষিদের আর্থিক সহায়তাও দিয়েছে। সরকারি-বেসরকারি অংশীদাত্বের ভিত্তিতে বিটি বেগুন চাষের উদ্যোগের ব্যাপারে সরকারের পক্ষ থেকে উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে।
মাটিতে বসবাসকারী ব্যাকটেরিয়া ব্যাসিলিকাস থুরিংজিনিসিসের (বিটি) ক্রিস্টাল প্রোটিন জিন বেগুনের বিভিন্ন জাতের জিনের সঙ্গে মিশিয়ে বিটি বেগুনের জাত উদ্ভাবন করা হয়েছে।
জেনেটিক্যালি মডিফাইড অর্গানিজম (জিএমও) বা বায়োটেক ফসল হচ্ছে জিনগতভাবে পরিবর্তনের মাধ্যমে এক ধরনের ক্রিস্টাল প্রোটিন একই ফসলের বিভিন্ন জাতের সঙ্গে মিশিয়ে উদ্ভাবিত জাত।
বিটি বেগুনে জেনেটিক পরিবর্তনের সময় আরো কিছু অ্যান্টিবডি প্রতিরোধকারী জিন ও জীবাণু প্রতিরোধকারী জিনের সমন্বয় ঘটানো হয়েছিল। এসব জেনেটিক মোডিফিকেশনের একমাত্র উদ্দেশ্য ছিল বেগুনের একটি কীট ও রোগ প্রতিরোধকারী জাত উদ্ভাবন করা। ভারতের মহারাষ্ট্রভিত্তিক একটি কোম্পানি মাহায়কো, এ জাতের উদ্ভাবন করে।
২০১৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রে বায়োটেক ফসলের উৎপাদন বেড়েছে ৪ শতাংশ। গত বছর সাত কোটি ৩১ লাখ হেক্টর জমিতে এ জাতের ফসলের চাষ হয়েছে। প্রতি বছরই দেশটিতে এর চাষ বাড়ছে।
আইএসএএএর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্বের গরিব কৃষকদের জন্য বায়োটেক ফসল সফলতা বয়ে এনেছে। ১৯৯৬-১৩ পর্যন্ত ১০ লাখ ৬৪ হাজার কোটি টাকার বায়োটেক ফসল উৎপাদিত হয়েছে।
আফ্রিকার বায়োটেক ভুট্টাও আরেকটি উদাহরণ। দেশটিতে সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে এর চাষ চলছে। ২০১৩-১৪ সালে দেশটিতে এর উৎপাদন বেড়েছে সাড়ে পাঁচ গুণ।