কাজ করছে না এটিএম বুথ!
অটোমেটেড টেলার মেশিন (এটিএম) বুথ থেকে টাকা তুলতে না পেরে আজ শনিবার অনেক গ্রাহক খালি হাতে ফিরেছেন। গ্রাহকদের অভিযোগ, আগে থেকে কোনো ঘোষণা বা তথ্য প্রদান ছাড়াই বুথের সেবা কার্যক্রম বন্ধ করায় হয়রানির শিকার হয়েছেন তাঁরা।
এদিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর এস কে সুর চৌধুরী জানিয়েছেন, ব্যাংকের নিজস্ব বুথ ছাড়া অন্য ব্যাংকের বুথ থেকে টাকা তোলার সুযোগ সাময়িক স্থগিত করা হয়েছে।
ব্যাংকগুলো আগামী কাল রোববার বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে সভা করে পরবর্তী দিকনির্দেশনা ও করণীয় নির্ধারণ করবে বলে জানা গেছে।
রাজধানীর পান্থপথে বুথে টাকা তুলতে এসেছিলেন ব্র্যাক ব্যাংকের গ্রাহক ইব্রাহিম খলিল সবুজ। তিনি বলেন, ‘খুব জরুরি টাকার প্রয়োজন। এটিএম বুথ থেকে টাকা তুলতে এসেছি। কিন্তু কার্ড দিয়ে তুলতে পারিনি। বেশ কয়েকবার চেষ্টা করেছি। অ্যাকাউন্টে টাকা থাকার পরও টাকা আসছে না। কিন্তু কী কারণে টাকা আসছে না বা কী সমস্যা, সেটাও বুঝতে পারছি না। এমনকি বুথ বা ব্যাংক কর্তৃপক্ষের কাছ থেকেও কোনো দিকনির্দেশনা পাচ্ছি না। এমন হয়রানির কোনো মানে হয় না।’
রাজধানীর কারওয়ান বাজারের ডাচ-বাংলা ফাস্ট ট্রাকের কর্মকর্তা আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘গতকাল শুক্রবার কয়েকটি ব্যাংকের গ্রাহকের হিসাব থেকে টাকা খোয়া গেছে। সতর্কতার অংশ হিসেবে কেন্দ্র থেকেই বেশ কিছু ব্যাংকের কার্ড লক করে রাখা হয়েছে। এর কারণে এক ব্যাংকের কার্ড দিয়ে অন্য ব্যাংকের টাকা তুলতে গেলে সমস্যা দেখাচ্ছে। তবে খুব দ্রুত এ সমস্যার সমাধান হবে বলে আমাদের জানানো হয়েছে।’
এ ব্যাপারে ইস্টার্ন ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) আলী রেজা ইফতেখার বলেন, ‘ন্যাশনাল পেমেন্ট উইংয়ের মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংকের সহায়তায় এক ব্যাংকের কার্ডে আরেক ব্যাংক থেকে টাকা তুলতে পারে। বেশ কয়েকটি ব্যাংকের গ্রাহক হিসেবে ব্যালেন্স সর্টের কারণে এ সিস্টেম বন্ধ রাখা হয়েছে। তবে যার যার ব্যাংকের কার্ডে সে ব্যাংকের এটিএম বুথ থেকে টাকা তুলতে পারবে। এটা মূলত বাংলাদেশ ব্যাংকের দিকনির্দেশনা ও ব্যাংকগুলোর নিজ নিজ সতর্কতার কারণেই তারা এটা করেছে।’
আলী রেজা আরো বলেন, ‘এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে আগামীকাল (রোববার) আমাদের একটি সভা হবে। তারপরই এক ব্যাংকের কার্ড দিয়ে অন্য ব্যাংকের বুথ থেকে টাকা তোলার সিদ্ধান্ত হবে।’
তিনি আরো বলেন, ‘এক ব্যাংকের কার্ড আরেক ব্যাংকের বুথের মাধ্যমে টাকা তুলতে গেলে পুরো প্রক্রিয়া হয় বাংলাদেশ ব্যাংকের মাধ্যমে। বাংলাদেশ ব্যাংক এ পদ্ধতি বন্ধ রাখায় গ্রাহকরা টাকা তুলতে পারছেন না। কিন্তু আপনার যে ব্যাংকের কার্ড, সে ব্যাংকের বুথ থেকে টাকা তুলতে পারবেন। তবে কোনো ব্যাংকের কার্ডে তাদের নিজস্ব বুথ থেকে টাকা তুলতে না পারলে এটা সে ব্যাংকের ব্যাপার।’
ইফতেখার আরো বলেন, ‘কত গ্রাহকের টাকা খোয়া গেছে তার তথ্য এখনো আমাদের হাতে আসেনি। প্রতিটি ব্যাংক তাদের সংখ্যা বা টাকার পরিমাণ বের করলেই তার নিশ্চিত হওয়া যাবে। সে বিষয়ে তদন্ত চলছে। এটা নিয়ে গ্রাহকদের ভয় পাওয়ার কোনো কারণ নেই।’
বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর এস কে সুর চৌধুরী বলেন, ‘কোনো ব্যাংক থেকে টাকা খোয়া গেলে এটা উদ্বেগের বিষয়। সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের নিরাপত্তা বা অন্য কোনো সমস্যা আছে কিনা এ বিষয়ে তদন্ত চলছে। এর বিষয়ে সতর্কতা অবলম্বন করে বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি ইউনিট সার্বক্ষণিক কাজ করে। এরপরও বাড়তি সতর্ক করতে সব ব্যাংকে সতর্কতা জারি করা হয়েছে। নিজস্ব বুথ ছাড়া অন্য ব্যাংকের বুথ থেকে টাকা তোলার সুযোগ সাময়িক স্থগিত করা হয়েছে।’
এদিকে ঢাকা ব্যাংকের গ্রাহক মনিরুজ্জামান বলেন, ‘গতকাল বিকেলে এক খুদে বার্তায় আমাকে জানানো হয়েছে যে, আমি ঢাকা ব্যাংকের বুথ ছাড়া অন্য কোনো বুথ থেকে টাকা তুলতে পারব না। তবে এটা সাময়িক।’
মনিরুজ্জামান আরো বলেন, ‘আমার কাছাকাছি ঢাকা ব্যাংকের বুথ নেই। শুক্র ও শনিবার ব্যাংক বন্ধ থাকায় প্রয়োজন সত্ত্বেও টাকা তুলতে পারছি না।’
আইএফআইসি ব্যাংকের গ্রাহক আহমেদ সরকার বলেন, ‘আইএফআইসি ব্যাংকের কার্ড নিয়ে টাকা তুলতে গিয়ে ব্যর্থ হয়ে ফিরে এসেছি। তাৎক্ষণিকভাবে কোনো কারণ জানতে না পেরে অন্য যাই। কিন্তু সেখানেও টাকা তুলতে পারিনি। পরে জানতে পারি কোনো একটি ব্যাংকের সমস্যায় নিরাপত্তাজনিত কারণে তা স্থগিত রাখা হয়েছে। তবে এর জন্য ব্যাংকের পক্ষ থেকে জানানো হলে হয়রানি হতে হতো না।’