এটিএম জালিয়াতিতে বিদেশিরা শনাক্ত, নজরদারিতে অনেকে
রাজধানীর বিভিন্ন ব্যাংকের অটোমেটেড টেলার মেশিন (এটিএম) বুথগুলোতে যন্ত্র বসিয়ে কার্ড (ক্লোন) জালিয়াতির মাধ্যমে অর্থ উত্তোলনের ঘটনা ঘটেছে। রাজধানীর তিনটি ব্যাংকের এটিএম বুথে কার্ড জালিয়াতির প্রমাণ মিলেছে।
সম্প্রতি একটি বুথের ক্লোজড সার্কিট টিভির (সিসিটিভি) ভিডিওচিত্র দেখে কয়েকজন বিদেশিকে শনাক্ত করেছে পুলিশ। সংস্থাটি জানিয়েছে, কয়েকজন বিদেশি ও বাংলাদেশি মিলে এই জালিয়াতি করছে। ফুটেজের অবয়বের সঙ্গে মিল রয়েছে এমন ব্যক্তিদের নজরদারিতে রাখা হয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে।
স্বল্প সময়ের মধ্যে বুথের কার্ড রিডারের অংশে স্কিমিং ডিভাইস বা গোপন তথ্য চুরির যন্ত্রটি বসিয়ে এই জালিয়াতি করছে একটি চক্র। ধারণা করা হচ্ছে, কয়েকজন বিদেশিসহ দেশের একটি চক্র এ কাজে জড়িত আছে। এতে শঙ্কিত হয়ে পড়েছেন সাধারণ গ্রাহকরা। দ্রুত এ জালিয়াতির সমাধান চান তারা।
ভিডিওচিত্রে দেখা যায়, গ্রাহক বেশে বুথে প্রবেশ করে অল্প সময়ের মধ্যে এটিএম মেশিনে একটি ডিভাইস স্থাপন করে ফেলে প্রতারক ব্যক্তি। ডিভাইস স্থাপনের কাজটি মূলত বিদেশিদেরই করতে দেখা যায়।
স্কিমিং ডিভাইস বা গোপন তথ্য চুরির যন্ত্রটি কার্ড রিডারের অংশে স্থাপন করলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে তা অন্য কার্ডের গোপন তথ্য চুরি করে সংরক্ষণ করতে পারে। অর্থাৎ যন্ত্রটি স্থাপন করার পর যত গ্রাহক তাঁদের এটিএম কার্ড ব্যবহার করে অর্থ উত্তোলন করবেন, তাঁদের গোপন তথ্য চুরি করে সংরক্ষণ করতে পারে এই ডিভাইস। কাজ শেষে ওই ডিভাইস থেকে তথ্য সংগ্রহ শেষে কার্ড নকল (ক্লোন) করে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে ওই চক্র।
এসব ঘটনার পর রাজধানীর এটিএম বুথগুলো থেকে সেবা নেওয়া গ্রাহকের সংখ্যা কমে এসেছে। বুথের নিরাপত্তাকর্মীরা জানালেন, হঠাৎ করেই গ্রাহকসংখ্যা কমে গেছে। আর নিজস্ব ব্যাংকের কার্ড ছাড়া অন্য কার্ডের সেবা পাওয়া যাচ্ছে না।
এমন পরিস্থিতিতে শঙ্কিত হয়ে পড়েছেন সাধারণ গ্রাহকরা। তাঁরা বলছেন, এতে তাঁদের অর্থনৈতিক নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়েছে। দ্রুত এর সমাধান দাবি করেন তাঁরা।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যমতে, প্রায় নয় লাখ গ্রাহক আছেন যাঁরা কার্ড ব্যবহার করেন। প্রতি মাসে যেগুলোতে লেনদেন হয় নয় হাজার কোটি টাকার বেশি। কার্ড জালিয়াতির ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে দেশের সব ব্যাংকের এটিএম লেনদেনে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. হাবিবুর রহমান বলেন, ইএমবি চিপ কার্ড হলে এই ধরনের ঘটনা প্রতিহত হবে। তখন আর এ ধরনের প্রযুক্তি ব্যবহার করে কার্ড জালিয়াতি করতে পারবে না।
সিটিও ফোরাম বাংলাদেশের ভাইস প্রেসিডেন্ট সৈয়দ মাসুদুল বারী বলেন, প্রযুক্তি বিশারদ যেসব খারাপ মানুষ আছেন, তাঁরা খুব চালাক। দিনের পর দিন তাঁরা অবৈধ কাজ করতে বিকল্প প্রযুক্তি আবিষ্কার করেছেন। আমাদের যেটা করতে হবে সেটা হচ্ছে সচেতন হতে হবে। আর একটি বিষয় সেটা এই মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক বাধ্যতামূলক করেছে, সেটা হচ্ছে সঠিক তথ্যপ্রমাণ থাকতে হবে ও ভালো ব্যবস্থাপনা থাকতে হবে।
গোয়েন্দা তথ্য অনুযায়ী, ২০১৩ সালে রাজধানীতে ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে এক কোটি টাকা জালিয়াতির অভিযোগে চারজন গ্রেপ্তার হয়েছিল। দীর্ঘদিন জালিয়াতি বন্ধ থাকলেও এবার অভিনব উপায়ে জালিয়াতি হওয়ায় বিষয়টিকে গুরুত্বের সঙ্গে দেখছে গোয়েন্দা পুলিশ। সংস্থাটি বলছে, প্রতারকচক্রকে ধরতে কাজ শুরু করেছেন তাঁরা।
ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার মনিরুল ইসলাম বলেন, সিসিটিভির ফুটেজে যাকে দেখা গেছে, ‘ওই রকম চার-পাঁচজনকে আমরা শনাক্ত করেছি। দেখেই বোঝা গেছে তারা বিদেশি। অবয়বের সঙ্গে মিল রয়েছে এমন ব্যক্তিদের আমরা নজরদারিতে রেখেছি।’
এ ঘটনায় গোয়েন্দা বিভাগকে তথ্যবিষয়ক সহায়তা করছে ইনসাইড বাংলাদেশ ফাউন্ডেশন। এখন পর্যন্ত এই কার্ড জালিয়াতিতে তিনটি বেসরকারি ব্যাংকের গ্রাহকরা প্রতারিত হয়েছেন বলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে।