সঞ্চয়পত্রের ঋণ অর্ধেকে নামিয়ে আনছে সরকার
প্রস্তাবিত আসন্ন ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের আকার ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা। বিশাল এ বাজেটের অনুদান ছাড়া ঘাটতির পরিমাণ ২ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা, যা মোট জিডিপির ৫ দশমিক ২ শতাংশ। ঘাটতি মেটাতে অভ্যন্তরীণ খাত থেকে সরকার এক লাখ ৫৫ হাজার ৩৯৫ কোটি টাকা ঋণ নেবে। এর মধ্যে সঞ্চয়পত্র থেকে ১৮ হাজার কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরের বাজেটে সঞ্চয়পত্র থেকে ৩৫ হাজার কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা হয়েছিলো। সেই তুলনায় সঞ্চয়পত্র থেকে সরকার আসন্ন অর্থবছরে ১৭ হাজার কোটি টাকা কম ঋণ নেবে।
আজ বৃহস্পতিবার (১ জুন) ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেট সংসদে পেশ করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উপস্থিত ছিলেন।
আসন্ন বাজেটে ঘাটতি ২ লাখ ৫৭ হাজার ৮৮৫ কোটি টাকা। আর অনুদান ছাড়া ঘাটতির পরিমাণ ২ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা, যা মোট জিডিপির ৫ দশমিক ২ শতাংশ। বিশাল এই ঘাটতি পূরণে অভ্যন্তরীণ ঋণ নেবে এক লাখ ৫৫ হাজার ৩৯৫ কোটি টাকা। বৈদেশিক ঋণ হিসেবে নেবে এক লাখ দুই হাজার ৪৯০ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরের বাজেটে যার পরিমাণ ৯৫ হাজার ৪৫৮ কোটি টাকা।
অভ্যন্তরীণ উৎসের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ঋণ ব্যাংক খাত থেকে নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা হয়েছে। ব্যাংক খাত থেকে ১ লাখ লাখ ৩২ হাজার ৩৯৫ কোটি টাকা নেওয়া হবে। এছাড়া সঞ্চয়পত্র থেকে ১৮ হাজার কোটি টাকা আর অন্যান্য খাত থেকে আসবে পাঁচ হাজার এক কোটি টাকার ঋণ।
অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত বাজেটে মূল্যস্ফীতির লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছে ৬ দশমিক ৫ শতাংশ। মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি ঠিক করেছে সাড়ে ৭ শতাংশ।
এদিকে বিনিয়োগে নানা শর্ত দেওয়ায় সঞ্চয়পত্র বিক্রি কমেছে। নিম্ন ও মধ্যবিত্তদের আয়ের মানুষেরা সঞ্চয়পত্র কেনার চেয়ে বেশি পরিমাণে ভাঙানোর দিকে ঝুঁকছেন। চলতি অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে (জুলাই-এপ্রিল) ৬৮ হাজার ৩৮ কোটি ৭৩ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে। এর বিপরীতে মুনাফা ও মূল বাবদ পরিশোধ করা হয়েছে ৭১ হাজার ৬১৮ কোটি ৫২ লাখ টাকা। অর্থাৎ তিন হাজার ৫৮০ কোটি টাকা বেশি পরিশোধ করতে হয়েছে।
সুদের হার হ্রাস ও নানা ধরনের কড়াকড়ি আরোপের কারণে মানুষের সবচেয়ে নিরাপদ বিনিয়োগ সঞ্চয়পত্র বিক্রি কমে গেছে। সে কারণেই নিট বিক্রি নেগেটিভ হয়েছে। সরকারকে কোষাগার থেকে সুদ-আসল পরিশোধ করতে হচ্ছে বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা।
এদিকে চলতি অর্থবছরে ৫ লাখ টাকার বেশি সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ থাকলে রিটার্নের সনদ বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এছাড়া গত বছরের ২১ সেপ্টেম্বর থেকে ১৫ লাখ টাকার বেশি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে সব রকম সঞ্চয়পত্রের সুদহার ২ শতাংশের মতো কমিয়ে দেয় সরকার। তার আগে ২০২০ সালের ডিসেম্বরে সঞ্চয়পত্রের বিনিয়োগ সীমা কমিয়ে আনা হয়।
এছাড়া ২০১৯ সালের ১ জুলাই থেকে মুনাফার ওপর উৎসে করের হার ৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশ করা হয়। দুর্নীতি বা কালো টাকায় সঞ্চয়পত্র কেনা বন্ধে ক্রেতার তথ্যের একটি ডাটাবেজ তৈরি হয়েছে। এসব কড়াকড়ির প্রভাবে বর্তমানে সঞ্চয়পত্র বিক্রি তলানিতে ঠেকেছে।