৪৪ ধরনের সেবা পেতে লাগবে রিটার্ন জমার রশিদ
‘উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় দেড় দশক পেরিয়ে স্মার্ট বাংলাদেশের অভিমুখে’ এই শিরোনামকে সামনে রেখে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকার জাতীয় বাজেট পেশ শুরু হয়েছে। এতে স্মার্ট নাগরিক, স্মার্ট অর্থনীতি, স্মার্ট সরকার ও স্মার্ট সমাজ গড়ার কথা তুলে ধরে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল আজ বৃহস্পতিবার (১ জুন) বিকেল ৩টায় জাতীয় সংসদে বাজেট পেশ শুরু করেন। এবার বাজেটে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৫ লাখ কোটি টাকা। এর মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড এনবিআরকে আদায় করতে হবে ৪ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা।
এবারের ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটে প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে, রিটার্নের প্রমাণপত্র পেতে করদাতাকে ন্যূনতম দুই হাজার টাকা আয়কর দিতে হবে। তাঁদের এখন ৪৪টি এসব সেবা পেতে করযোগ্য আয় না থাকলেও দুই হাজার টাকা কর দিতে হবে।
অর্থমন্ত্রী বাজেটে বলেন, ‘রাষ্ট্রের একজন নাগরিকের অন্যতম দায়িত্ব হচ্ছে রাষ্ট্র কর্তৃক প্রাপ্ত সুযোগ-সুবিধার বিপরীতে সরকারকে ন্যূনতম কর প্রদান করে সরকারের জনসেবামূলক কাজে অংশগ্রহণ নিশ্চিতকরণ। এ ধরনের অংশীদারিমূলক অংশগ্রহণ দেশের সক্ষম জনসাধারণের মাঝে সঞ্চারণের লক্ষ্যে করমুক্ত সীমার নিচে আয় রয়েছে, অথচ সরকার থেকে সেবা গ্রহণের ক্ষেত্রে আয়কর রিটার্নের বাধ্যবাধকতা আছে, এমন করদাতাকে ন্যূনতম কর দুই হাজার টাকা করার প্রস্তাব করছি।’
বর্তমানে যেসব সেবার ক্ষেত্রে রিটার্ন জমার রশিদ দেওয়ার বাধ্যবাধকতা আছে, তার মধ্যে রয়েছে ২০ লাখ টাকার বেশি ঋণ আবেদন; ৫ লাখ টাকার বেশি সঞ্চয়পত্র ক্রয়; ক্রেডিট কার্ড নেওয়া; কোনো কোম্পানির পরিচালক বা শেয়ারহোল্ডার হলে; ব্যবসায় সমিতির সদস্য হলে; কারও সন্তান বা পোষ্য ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে পড়াশোনা করলে, অস্ত্রের লাইসেন্স নেওয়া, স্ট্যাম্প, কোর্ট ফি ও কার্স্ট্রিজ পেপারের ভেন্ডর বা দলিল লেখক হিসেবে নিবন্ধন ও লাইসেন্স বা তালিকাভূক্তি ও তা বহাল রাখা, ভূমি, ভবন এবং অ্যাপার্টমেন্ট লিজ রেজিস্ট্রেশন, পৌরসভা এলাকায় ১০ লাখ টাকা মূল্যের জমি বিক্রয়, হস্তান্তর ও লিজ রেজিস্ট্রেশন ইত্যাদি।
এ ছাড়া উপজেলা, পৌরসভা, জেলা পরিষদ, সিটি করপোরেশন ও জাতীয় নির্বাচনে প্রার্থী এর আগে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে সাত লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকার বাজেট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে জাতীয় সংসদের মন্ত্রিসভা কক্ষে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভায় বিশেষ প্রস্তাবিত বৈঠকে অনুমোদন দেওয়া হয়। আজ বৃহস্পতিবার (১ জুন) দুপুর ১২টার দিকে জাতীয় সংসদের মন্ত্রিসভা কক্ষে এই বৈঠক শুরু হয়ে চলে দুপুর পর্যন্ত। এরপর মন্ত্রিসভায় অনুমোদিত বাজেট সংসদে উপস্থাপনের অনুমতি দিয়ে তাতে সম্মতিসূচক স্বাক্ষর করেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। আজ বঙ্গভবনের পরিবর্তে জাতীয় সংসদ ভবনে রাষ্ট্রপতির দপ্তরে অফিস করেন তিনি।
স্বাধীন বাংলাদেশের ৫২তম এই বাজেট পেশ করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এটি তার পঞ্চম বাজেট ঘোষণা এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের টানা তৃতীয় মেয়াদের শেষ বাজেট।
এবারের বাজেটের মূল শিরোনাম দেওয়া হয়েছে ‘উন্নয়নের দীর্ঘ অগ্রযাত্রা পেরিয়ে স্মার্ট বাংলাদেশের অভিমুখে।’ মোট আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে পাঁচ লাখ তিন হাজার ৯০০ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারের ব্যয় চালাতে এনবিআরকে চার লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আদায়ের টার্গেট দেওয়া হয়েছে।
এ ছাড়া প্রস্তাবিত বাজেটে ব্যয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে সাত লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা, যা চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটের তুলনায় এক লাখ এক হাজার ২৭৮ কোটি টাকা বেশি।