আইএমএফের ঋণের দ্বিতীয় কিস্তি আসতে পারে ডিসেম্বরে
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণের দ্বিতীয় কিস্তি ৬৮১ মিলিয়ন ডলার ডিসেম্বর পেতে যাচ্ছে বাংলাদেশ দেশ। আজ বৃহস্পতিবার (১৯ অক্টোবর) বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে আইএমএফ প্রতিনিধিদলের শেষ বৈঠক পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মেজবাউল হক গণমাধ্যমের কাছে এ কথা বলেন। তিনি বলেন, আইএমএফ প্রতিনিধি দলের সঙ্গে আলোচনায় ‘আমরা সমস্ত কিছু অ্যাগ্রিমেন্টে এসেছি, সিদ্ধান্ত হয়ে গেছে, আমরা নেক্সট ইনস্টলমেন্ট পাচ্ছি। ঋণের দ্বিতীয় কিস্তি পেতে সম্মতি পেয়েছি। ’
মেজবাউল হক বলেন, ‘আইএমএফের বেশ কিছু শর্ত ছিল। এর মধ্যে বেশ কিছু উদ্যোগ আমরা নিয়েছি। আন্তর্জাতিক ও দেশীও অবস্থার প্রেক্ষিতে গৃহীত উদ্যোগগুলোর মধ্যে আমরা কিছু সফল হয়েছি। কিছু পূরণ হয়নি। আমরা আমাদের প্রেক্ষিতগুলো বলেছি। বিষয়গুলো নিয়ে বিস্তারিত আলোচনার পর উভয়পক্ষ বেশ কিছু বিষয়ে একমত হয়েছি। যেগুলো করতে পারিনি সেগুলো করার ব্যাপারে কী কী উদ্যোগ নিতে হবে সে ব্যাপারেও আমরা ঐক্যমত হয়েছি। এরই পরিপ্রেক্ষিতে আশা করা যায়, আগামী ১১ ডিসেম্বর আইএমএফফের যে বোর্ড সভা আছে সেই বৈঠকে ঋণের দ্বিতীয় কিস্তি ৬৮১ মিলিয়ন ডলার অনুমোদন হবে। এরপর পরই ঋণের টাকা পাব।’
এক প্রশ্নের উত্তরে মুখপাত্র বলেন, আইএমএফ ঋণ অনুমোদনের সময় আমাদের কিছু শর্ত দিয়েছিল। এর মধ্যে বেশকিছু শর্ত পূরণ করা হয়েছে। দু’একটি জায়গায় ব্যর্থতা আছে। রিজার্ভ কিছু কম আছে। রাজস্ব আহরণ কম হয়েছে। তবে অনেক কিছু বাস্তবায়ন করা হয়েছে। ব্যাংকগুলোর আর্থিক স্থিতিশীলতা প্রতিবেদন প্রকাশের কথা ছিল, কেন্দ্রীয় ব্যাংক সেটি প্রকাশ করেছে। বিপিএমসিক্স অনুযায়ী রিজার্ভ হিসাবায়ন করা হচ্ছে। এ ছাড়া মুদ্রার বাজার-নির্ধারিত বিনিময় হার প্রবর্তন করা হয়েছে। সুদহারের নতুন নিয়ম চালু করা হয়েছে।
আইএমএফের শর্ত রয়েছে ডলারের বিনিময় হার বাজারের কাছে ছেড়ে দিতে হবে। এখন পর্যন্ত পুরোপুরি ছেড়ে দেওয়া হয়নি। এ বিষয়ে কোন আলোচনা হয়েছে কি না—এমন প্রশ্নের জবাবে মেজবাউল হক বলেন, ‘আমরা ডলারের একক দামে ইতোমধ্যে এসেছি। বাজারের ওপরও ছেড়ে দেব। তবে, এখনি না। পরিস্থতি বিবেচনা করে আমরা বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার বাজারেরওপর ছেড়ে দেব।
ঋণ পুনঃতফসিলিকরণের যে নীতিগ্রহণ করা হয়েছিল সেটা অকৃতকার্য হয়েছে। খেলাপি ঋণ কমেনি, বরং বেড়েছে—এ বিষয়ে মুখপাত্র বলেন, খেলাপি ঋণ কামানোর একমাত্র পথ ঋণ আদায়। খেলাপি ঋণ আদায়ের শেষ প্রক্রিয়া হলো আইনের আশ্রয় নেওয়া। খেলাপি ঋণ কমাতে আমরা সেদিকেই যাব। ঋণ দেওয়ার সময় সঠিক প্রক্রিয়াতে দেওয়া হয়েছে। তবে, করোনা মহামারীর ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের অভিঘাতে ঋণের কিছু নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে, যে কারণে খেলাপি ঋণ প্রত্যাশা মোতাবেক কমানো যাচ্ছে না।
বাংলাদেশ ব্যাংক সংস্কার কার্যক্রম শুরুর পর সফলতা জানতে চাইলে মেজবাউল হক বলেন, ‘দেশের অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি এখেনো ছয় শতাংশের বেশি। অন্যান্য দেশের তুলনায় আমাদের অর্থনীতি ভাল আছে, এটাই আমাদের অর্জন।’
আইএমএফ বেশকিছু বিষয়ে নির্দিষ্ট শর্ত দিয়ে বাংলাদেশকে ৪৭০ কোটি মার্কিন ডলারের ঋণ প্রস্তাব অনুমোদন করে চলতি বছরের জানুয়ারিতে। এই ঋণের প্রথম কিস্তির ৪৭ কোটি ৬২ লাখ ৭০ হাজার ডলার গত ফেব্রুয়ারিতে পায় বাংলাদেশ।