আন্তর্জাতিক বাণিজ্য বাড়াতে ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি উন্নয়নের তাগিদ
বন্দরে উন্নত ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা পদ্ধতির না থাকায় পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে একজন ব্যবসায়ীকে একই পণ্য বারবার পরীক্ষা করতে হচ্ছে। এর ফলে সময় ও খরচ উভয়ই বেড়ে যাচ্ছে। যার প্রভাব পড়ছে ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে ভোক্তা পর্যন্ত। তাই আন্তর্জাতিক বাণিজ্য বাড়াতে ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি উন্নয়নের তাগিদ দিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
আজ রোববার (১৯ নভেম্বর) দুপুরে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইতে আয়োজিত আন্তর্জাতিক বাণিজ্য বিষয়ক এক সেমিনারে বক্তারা এ কথা বলেন। এফবিসিসিআইয়ের সাথে যৌথভাবে এই সেমিনারের আয়োজন করে ইউএসডিএ (ইউনাইটেড স্টেট ডিপার্টমেন্ট অফ এগ্রিকালচার) ফান্ডেড বাংলাদেশ ট্রেড ফ্যাসিলিটেশন (বিটিএফ) প্রকল্প।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে কৃষিমন্ত্রী ড. মুহাম্মদ আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘খাদ্যশস্যে আমরা স্বয়ংসম্পূর্ণ। কৃষিকে সাব-সিস্টেম থেকে বাণিজ্যিকীকরণ করতে কৃষি মন্ত্রণালয় সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে। কৃষিখাতের সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে আমরা আধুনিক ও লাভজনক কৃষি উৎপাদনের দিকে মনোনিবেশ করেছি।’
বিগত বছরগুলোতে কৃষিখাতের উন্নয়নের বিভিন্ন চিত্র তুলে ধরে কৃষিমন্ত্রী ড. মুহাম্মদ আব্দুর রাজ্জাক বলেন, “কৃষিখাতের উন্নয়নে প্রধানমন্ত্রী অবকাঠামো দিয়েছেন, দেশও উন্নত হবে। কিন্তু একদল আছে যারা দেশকে অস্থিতিশীল করতে যাচ্ছে। দেশের স্থিতিশীলতা রক্ষায় ব্যবসায়ীদের সহযোগিতা দরকার।”
কৃষিমন্ত্রী আরও বলেন, বন্দর থেকে পণ্য খালাসের জটিলতা কমাতে রাজধানীর পূর্বাচলে কৃষি মন্ত্রণালয়ের জন্য জায়গা বরাদ্দ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী, যেখানে পণ্য টেস্টিং করে সরাসরি কার্গোতে পাঠানো হবে। ফলে ব্যবসায়ীদের সময় ও অর্থ অপচয়; দুটিই কমে আসবে। খুব শিগগিরই এর কাজ শুরু হবে।
এর আগে সভাপতির বক্তব্যে এফবিসিসিআই সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, “বিগত বছরে কৃষিতে বিপ্লব সাধিত হয়েছে। আন্তঃবাণিজ্য সমস্যা কমাতে সরকার কাজ করছে। আন্তঃবাণিজ্য সহজ করতে সরকারে সাথে শিগগিরই আলোচনা করব আমরা। টেকসই খাদ্য ব্যবস্থাপনাই আমাদের মূল লক্ষ্য। আমরা যখন উন্নত দেশে উন্নীত হবো, টেকসই খাদ্য ব্যবস্থাপনা দরকার হবে আমাদের। আর এ জন্য নীতিমালা প্রণয়ন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।”
এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, “২০০৮ সালের ৭০ বিলিয়ন ডলারের অর্থনীতি এখন প্রায় অর্ধ ট্রিলিয়ন ডলারে উন্নীত হয়েছে। কৃষিভিত্তিক শিল্পের বিকাশ ক্রমশ বৃদ্ধির মাধ্যমে জিডিপিতে শিল্পের অবদান বাড়ছে এ খাতে আমাদের অর্জনও অনেক। বাংলাদেশ এখন ২২টি কৃষিপণ্য উৎপাদনে বিশ্বের শীর্ষ ১০ এ রয়েছে। ফলে এ খাতে সর্বাধিক মূল্য সংযোজনের সুযোগ আছে। তৈরি পোশাকশিল্পের পরেই রপ্তানি বহুমুখীকরণের অন্যতম খাত হিসেবে প্রধানমন্ত্রী প্রক্রিয়াজাত কৃষিপণ্যের ওপর গুরুত্ব দেওয়ার পাশাপাশি প্রণোদনার ও সুযোগ বৃদ্ধি করছেন এ খাতে।”
সেমিনারে যৌথভাবে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন অর্থ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব ড. মোহাম্মদ আবু ইউসুফ এবং ইউএসডিএ ফান্ডেড বাংলাদেশ ট্রেড ফ্যাসিলিটেশন প্রজেক্ট (বিটিএফ) এর সিনিয়র টেকনিক্যাল অ্যাডভাইজর এ এ এম আমিনুল এহসান খান। ঝুঁকি ব্যবস্থাপনায় আন্তঃবাণিজ্য চুক্তির গুরুত্ব তুলে ধরেন তারা।
সেমিনারে সমাপনী বক্তব্য দেন এফবিসিসিআই-এর সিনিয়র সহ-সভাপতি মো. আমিন হেলালী। ব্যবসায়ীরা শান্তি ও স্থিতিশীলতার পক্ষেই রয়েছে বলে জানান তিনি।
ইউএসডিএ ফান্ডেড বাংলাদেশ ট্রেড ফ্যাসিলিটেশন প্রজেক্ট (বিটিএফ) এর প্রকল্প পরিচালক মাইকেল জে পার, এফবিসিসিআইর পরিচালকবৃন্দ, প্যানেল উপদেষ্টাবৃন্দসহ বিভিন্ন চেম্বার ও অ্যাসোসিয়েশনের নেতৃবৃন্দ সেমিনারে উপস্থিত ছিলেন।