চালের বাজারে অস্থিরতা কাটেনি
চালের বাজারের পরিস্থিতি সামলাতে মজুতদারদের বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন খাদ্যমন্ত্রী, পাশাপাশি চলছে প্রশাসনের অভিযান। কিন্তু বাজারে এসবের প্রভাব এখনও কম। আছর বানু গৃহকর্মীর কাজ করেন। নিজের পরিবারের জন্য বাজার করতে এসেছিলেন রাজধানী ঢাকার সাতারকুল রোডের গার্মেন্টস বাজারে। ৫৫ টাকা কেজি দরে কিনলেন মোটা চাল। আগের মাসে একই চাল কিনেছিলেন ৫৩ টাকা করে। ‘’চাউলের খরচ বাড়ছে। আয় বাড়ে নাই। চলতে খুব কষ্ট হয়’, বলছিলেন আছর।
জানুয়ারি মাসের প্রথমার্ধে দেশের সব ধরনের চালের দামেই বেড়েছে। তখন কেজিপ্রতি অন্তত পাঁচ টাকা বাড়লেও মাসের শেষদিকে এসে কমেছে এক-দুই টাকা। চালের দাম বৃদ্ধির এই প্রভাব শুধু ঢাকায় নয়, চট্টগ্রামেও বহাল। চট্টগ্রামের কাছে পটিয়ার চালের আড়ৎ রহমান এন্টারপ্রাইজের সত্বাধিকারি লুৎফর রহমান রিমন বললেন, ‘নির্বাচনের পরপর দাম বেড়েছে, কিন্তু এখনও সেভাবে কমেনি।’ ৫০ কেজির এক বস্তা মধ্যমানের মিনিকেট চালের পাইকারি দরে দুই হাজার ৮৫০ টাকায় বিক্রি করছেন।
চালের দাম এখনও বেশি থাকার পেছনে ধানের দাম বেশি থাকার বিষয়টি সামনে আনেন পাবনা ঈশ্বরদীর চাল ব্যবসায়ী মেহেদী হাসান তুষার। তিনি বলেন, এক মণ বা ৪০ কেজি ধানের দাম এক হাজার ৩৯০ টাকা। এটা থেকে কিছুটা মোটা চাল হয়। বর্তমান দামে ধান কিনলে সেটা কেজিপ্রতি খরচ পড়বে অন্তত ৫৫ টাকা। এ পরিস্থিতির কারণে আপাতত ধান কিনছেন না বলেও জানান রাইস ইন্টারন্যাশনালের সত্বাধিকারি তুষার।
মাঝে কিছুটা কমলেও ধানের দাম আবার বাড়তির দিকে বলে জানান বগুড়ার সাংবাদিক হাসিবুর রহমান বিলু। জানালেন, বাজার পরিস্থিতি বুঝতে শুক্রবার (২৬ জানুয়ারি) তিনি দেশের উত্তরাঞ্চলের সবচেয়ে বড় ধানের হাট নন্দীগ্রামে গিয়েছিলেন। ঘুরে এসে বিলু বলেন, মণপ্রতি ধানের দাম অন্তত ২০ টাকা বেড়েছে। এতে চালের দাম আবার বৃদ্ধির শঙ্কা রয়েছে।
হাসিবুর রহমান বিলু জানান, ‘বগুড়ায় খুচরো বাজারে চালের দাম প্রশাসন নির্ধারণ করে দিয়েছে। সেখানে সরু চাল কেজিপ্রতি ৬৫ টাকা, আর মোটা চাল ৫৫ টাকা। নির্ধারিত এই দাম ডিসেম্বরের দামের তুলনায় দুই-তিন টাকা বেশি।’
চাল ও ধানের বাজারের অস্থিরতার জন্য মজুতদাররা দায়ী বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদারও। গত বৃহস্পতিবার (২৫ জানুয়ারি) রাজশাহী বিভাগীয় প্রশাসনের আয়োজনে ‘চালের বাজার নিয়ন্ত্রণে করণীয়’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় তিনি হুঁশিয়ারি দেন, অবৈধভাবে চাল মজুত করলে মজুতদার যে দলেরই হোক, তাকে কোনো ছাড় দেওয়া হবে না।
কোনো প্রকার তদন্তের আগেই ধান ও চালের দাম বৃদ্ধির পেছনে মজুতদারদের ঢালাওভাবে দায়ী করার পক্ষে নন বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দিন। তিনি বলেন, ‘যে অন্যায় করবে, তাকে শাস্তি দেওয়া হোক। কিন্তু আগে সঠিক তদন্ত করতে হবে, কেন দাম বেড়েছে।’ দাম বৃদ্ধির জন্য দোকানিরা দায়ী নন, দাম ক্রেতার ওপর নির্ভর করে—এমন দাবি করেন দোকানিদের নেতা হেলাল।
বৃহস্পতিবার খাদ্যমন্ত্রীর সভায় ছিলেন রাজশাহী জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মো. ওমর ফারুক। রাজশাহীতে অবৈধ মজুতদার পাওয়া গেছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘রাজশাহী জেলায় এমন মজুতদার পাওয়া যায়নি। তবে যারা নিয়ম লঙ্ঘন করছেন, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। অভিযানের কারণে এখন আর চালের দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে না।’ বাজার স্থিতিশীল হয়ে আসছে বলে দাবি করেন তিনি।