দ্রুত মূদ্রাস্ফীতি কমে আসবে : গভর্নর
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আবদুর রউফ তালুকদার বলেছেন, মূদ্রাস্ফীতি কমানোর জন্য ব্যাংক ঋণ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এতে খুব দ্রুত মূদ্রাস্ফীতি কমে আসবে। তিনি বলেন, এখন প্রতিদিন প্রায় তিন হাজার দুইশ ঋণপত্র খোলা হচ্ছে।
আজ রোববার (১১ ফেব্রুয়ারি) মতিঝিলে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে আবদুর রউফ তালুকদার এসব কথা বলেন। এ সময় বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজের (বিসিআই) সভাপতি আনোয়ার-উল আলম চৌধুরীর (পারভেজ) নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল গভর্নরের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাত করে। শুরুতে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরকে বিসিআই পরিচালনা পর্ষদের পক্ষ হতে বিসিআই আমার পণ্য আমার দেশ লোগো সম্বলিত একটি ফ্রেম উপহার দেওয়া হয়।
সাক্ষাতের সময় আবদুর রউফ তালুকদার বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক মূদ্রাস্ফীতি কমানোর জন্য বিকল্প সব পদ্ধতি প্রয়োগ করেও মূদ্রাস্ফীতি কমেনি। পরে আমরা মূদ্রাস্ফীতি কমানোর জন্য ব্যাংক ঋণ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। খুব দ্রুত মূদ্রাস্ফীতি কমে আসবে। কারণ, আমাদের এখন প্রধান কাজ মূদ্রাস্ফীতি কমানো।
ঋণপত্র খোলার বিষয়ে গভর্নর বলেন, আমরা কোন ব্যাংকে ঋণপত্র খুলতে না করিনি। এখন প্রতিদিন তিন হাজার থেকে তিন হাজার দুইশ ঋণপত্র খোলা হচ্ছে। আমরা কঠোর হাতে ওভার এবং আন্ডার ইনভয়েসিং বন্ধ করার চেষ্টা করছি।
২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে আর ডলারের স্বল্পতা থাকবে না জানিয়ে গভর্নর বলেন, এসএমই খাতের জন্য ২৫ হাজার কোটি টাকার ফান্ড রয়েছে। যেখান থেকে সাত শতাংশ হারে এবং নারী উদ্যোক্তরা পাঁচ শতাংশ হারে ঋণ নিতে পারে। আপনাদের অনেক কষ্ট হচ্ছে, আমাদের অগ্রাধিকার হচ্ছে খাদ্যপণ্য, সার, জ্বালানি আমদানির পরে অন্য কিছু। অগ্রিম ডলার বুকিংয়ের বিষয়ে ভুলভাবে সংবাদ এসেছিল, আমরা পরবতীতে এর ব্যাখ্য দিয়েছি। এটা পাঁচ শতাংশ সুদে তিন মাস মেয়াদে বুকিং দিতে হবে। সেক্ষেত্রে এক দশমিক ৭৫ শতাংশ সুদ হবে।
সাক্ষাতের সময় বিসিআইয়ের সভাপতি আনোয়ার-উল আলম চৌধুরী বলেন, বিসিআই সমগ্র বাংলাদেশ ভিত্তিক একক এবং একমাত্র জাতীয় শিল্প চেম্বার বিসিআই স্থানীয় সকল শিল্পের উন্নয়নের পথে সর্বপ্রকার প্রতিবন্ধকতা নিরসনে কাজ করে চলেছে। শিল্প মালিকরা অনেক সময় অনেক পত্রিকাসহ বিভিন্ন মাধ্যমে ভুল তথ্য পেয়ে থাকে। যার ফলে অনেক সময় অনেকে ঘাবড়ে যান। আমরা আজ আপনার কাছে কিছু বিষয়ের সঠিক ব্যাখ্যা পাওয়ার জন্য এসেছি। দেশে বর্তমানে উচ্চ মূদ্রাস্ফীতির কারণে সব প্রতিষ্ঠানের সেলস ড্রপ করেছে, ঋণের উচ্চ সুদহার, বিদ্যুৎ ও গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি সবকিছু মিলিয়ে কোনো প্রতিষ্ঠান তার পূর্ণ সক্ষমতায় চলতে পারছে না। ঋণের উচ্চ সুদের সঙ্গে সঙ্গে ব্যাংকগুলোর বন্ডে বিনিয়োগের দিকে ঝুকে যাচ্ছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো টিকে থাকাই এখন চ্যালেঞ্জ।
শিল্পের কাঁচামাল আমদানির ক্ষেত্রে ঋণপত্র খুলতে পারছে না শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো এবং ডলার স্বল্পতার কারণে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্ধারণ করে দেওয়া রেট থেকে অনেক বেশি টাকায় ঋণপত্র খুলতে হচ্ছে জানিয়ে আনোয়ার বলেন, রপ্তানিমুখী শিল্পের উৎসাহিত করতে যে নগদ সহায়তা প্রদান করা হয়, সরকার থেকে সেটা ঠিক সময় মতো পরিশোধ করা হচ্ছে না। যার ফলে শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো সময় মতো তাদের অপারেশন কর মেটানো কষ্ঠসাধ্য হয়ে যাচ্ছে। সময়মতো নগদ সহায়তা ছাড় না করা গেলে সময়মতো প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের কর্মীদের বেতনাদি পরিশোধ করতে পারছে না। আমরা মনে করি, নগদ সহায়তা দ্রুত ও সময়মতো ছাড় করা উচিত।
এ সময় বিসিআইয়ের সহসভাপতি প্রীতি চক্রবর্তী, সহসভাপতি মোহাম্মদ ইউনুস, পবিচালক রঞ্জন চৌধুরী, ড. দেলোয়ার হোসেন রাজা, আবুল কালম ভূঁইয়া, জিয়া হায়দার মিঠু, মিজানুর রহমান, রুসলান নাসির, সোহানা রউফ চৌধুরী, মো. সেলিম জাহান, মো. মাহফুজুর রহমান, বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর আবু ফারাহ মো. নাসের ও নুরুন নাহার ও বৈদেশিক মুদ্রানীতি বিভাগের পরিচালক মো. সারোয়ার হোসেন উপস্থিত ছিলেন।