ব্যবসায়ীদের মানবিক হওয়ার আহ্বান জানালেন বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী
বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু বলেছেন, রমজানে বিশ্বের বিভিন্ন মুসলিম দেশ নিত্যপণ্য বিক্রির ক্ষেত্রে উদার হয়, আর আমাদের এখানে সুযোগ হিসেবে নেয়। তাই আমি রমজানকে সুযোগ হিসেবে না নিয়ে পণ্য বিক্রির ক্ষেত্রে ব্যবসায়ীদের মানবিক হওয়ার আহ্বান জানাই।
এমসিসিআই আয়োজিত চেম্বারের মতিঝিল অফিসে প্রথম ত্রৈমাসিক মধ্যাহ্নভোজ সভায় আজ বুধবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রতিমন্ত্রী এ কথা বলেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন এমসিসিআইয়ের সভাপতি কামরান টি রহমান।
বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী বলেন, রমজান মাসে পণ্যের চাহিদা বাড়ে। এ জন্য ব্যবসায়ীদেরও মানবিক হতে হবে। ব্যবসার পাশাপাশি সিএসআরের অংশ হিসেবে যেখানে কম আয়ের মানুষের বসবাস বা শ্রমজীবী মানুষের বসবাস, সেসব স্থানে ন্যায্যমূল্যে নিত্যপণ্য বিক্রি করুন। সেটা হতে পারে নিজ কারখানার শ্রমিকদের মাঝে ন্যায্যমূল্যে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য সরবরাহ করা। সারা দিন কারখানায় কাজ করার পর বাসায় ফেরার সময় নিত্যপণ্যগুলো ন্যায্যমূল্যে পেলো, এতে উৎপাদন বাড়বে। তাতে বাজারের ওপরও চাপ কমবে। সারা বিশ্বের মানুষ রমজানে চ্যারিটি করে, আন্তরিক হয়, আপনারাও তা করুন।
প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, ভোক্তা অধিদপ্তর যেন কোনোভাবে ব্যবসায়ীদের জন্য প্রতিবন্ধক না হন। আমাদের নির্দেশ আছে, তারা বাজারে গেলে ওই বাজার সমিতির কাউকে সঙ্গে নিয়ে পর্যবেক্ষণের কাজ করতে হবে। বাজারের ছোট-খাট ব্যবসায়ীকে জরিমানা না করে পণ্যের রুট, চালের যেমন মিলার পর্যায়ে ব্যবস্থা নেব। আমরা সে রকম পেয়েছিও। আমরা ব্যবস্থাও নিচ্ছি। চালের খুচরা বিক্রেতাদের বিরুদ্ধে আমরা কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছি না। আগামী ১ মার্চ থেকে পণ্যের গায়ে মূল্য লেখা থাকবে। এর ফলে বেশি দাম নেওয়ার প্রবণতা আর থাকবে না।
এক মাসেই এনবিআরের সমস্যার সমাধান করেছেন জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, নিত্যপণ্যে শুল্ক ওঠানোর জন্য চিঠি দিয়ে তিন সপ্তাহ অপেক্ষা করতে হয়েছে। এনবিআরের যুক্তি হল, সারা বিশ্বে সবচেয়ে কম রাজস্ব-জিডিপি বাংলাদেশের। এ জন্য তাদের কাজটি করতে হিসাব-নিকাশ করতে হয়। ব্যবসাসহজীকরণে বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ করা হয়েছে। সহজীকরণ করতে আরও কী করণীয় আছে তা করা হবে। এক সময় বিদ্যুৎ নিয়ন্ত্রণের বাইরে ছিল, এখন তা নেই। তবে আন্তর্জাতিক বাজারের কারণে জ্বালানির সমস্যা হচ্ছে। এগুলো আমরা দেখছি।
অনুষ্ঠানে এমসিসিআইয়ের সহ-সভাপতি হাবিবুল্লাহ বাহার বলেন, টিসিবিকে শক্তিশালী করার কাজ চলছে। টিসিবির মাধ্যমে এক কোটি পরিবারকে কম দামে মাসে পাঁচটি খাদ্য সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। রমজান মাসে দুইবার দেওয়া হবে। টিসিবিকে সেই জায়গায় নিয়ে যাওয়া হবে যাতে রপ্তানি করতে পারে।
কৃষিজাত পণ্য রপ্তানিকারক সমিতির সভাপতি সফিকুল ইসলাম ভূঁইয়া বলেন, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে নিত্যপণ্য মানুষের নাগালের মধ্যে নেওয়া প্রধান কাজ। আর তা করতে সরকারের হাতে যে অস্ত্র আছে তা প্রয়োগ করতে হবে। টিসিবির মাধ্যমে মানুষের কাছে নিত্যপণ্য পৌঁছে দিতে হবে। এটা করতে পারলে বাজারে কোনো সিন্ডিকেট কাজ করবে না।
মুক্ত আলোচনায় এমসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি নিহাদ কবীর বলেন, পণ্য বহুমুখীকরণের কথা বলা হচ্ছে। কিন্তু বহুমুখী করতে চামড়া শিল্পের সিটিপির মত পেছনের কাজগুলো নিয়ে কথা বলা হচ্ছে না। এগুলো করতে না পারলে পণ্য বা বাজার বহুমুখী করার কাজটি এগুবে না।
এমসিসিআই সদস্য সৌমিত্র মুত্সুদ্দি বলেন, আমলারা ব্যবসা করেন না, বোঝেন না। এ জন্য বাজারে গিয়ে এমন সব কথা বলেন, যা হাস্যকর হয়। আমাদের সঙ্গে আলোচনার দরজা খোলা রাখেন, যাতে আলোচনা করা যায়। বাজার অস্থিরতার জন্য সবাইকে ঢালাওভাবে দোষ দেবেন না। যারা দোষ করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেন। সরকারকে দুষ্টের দমন আর শিষ্টের পালন করতে হবে।
বর্তমান নিত্যপণ্যের মূল্য বৃদ্ধির বিষয়ে এমসিসিআইর সভাপতি কামরান টি রহমান বলেন, দেশের বাজারে পণ্যমূল্য নির্ভর করে থাকে যোগান ও চাহিদার ভিত্তিতে। পণ্যমূল্য বৃদ্ধির কারণে দেশের সাধারণ মানুষ কষ্টে আছে। এই ব্যাপারে সরকার নিম্নআয়ের মানুষের জন্য ভর্তুকি মূল্যে খোলাবাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য বিক্রির ব্যবস্থা গ্রহণ করলে নিম্নআয়ের মানুষ স্বস্তি পেতে পারে। এছাড়াও সরকার আমদানিনির্ভর পণ্যগুলোতে শুল্ক কমালে আমদানি ব্যয় কমবে। তাহলে হয়তো কিছুটা স্বস্তিদায়ক মূল্যে পণ্যগুলো বাজারে পাওয়া যেতে পারে। অধিকন্তু, অপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র আমদানিতে সরকারকে নিরুৎসাহিত করতে হবে।
এছাড়াও চেম্বারের সাবেক সভাপতিগণ, চেম্বারের সাবেক ও বর্তমান পরিচালকবৃন্দ, চেম্বারের সদস্যবর্গ, ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ ও সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিলেন।