সিসিকে প্লাস্টিক বর্জ্য পৃথকীকরণ প্ল্যান্ট উদ্বোধন
সিলেট সিটি করপোরেশনের (সিসিক) প্লাস্টিক ও মিউনিসিপ্যাল সলিড বর্জ্য টেকসই উপায়ে ব্যবস্থাপনার লক্ষ্যে ১৫ কোটি ত্রিশ লাখ টাকা ব্যয়ে একটি বর্জ্য পৃথকীকরণ প্ল্যান্ট বসানো হয়েছে। আজ শনিবার (ফেব্রুয়ারি) সিলেটের লালমাটিয়া ডাম্পিং গ্রাউন্ডে এই প্ল্যান্টের উদ্বোধন করেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম এমপি।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সিলেট-১ আসনের সংসদ সদস্য ড. এ কে আব্দুল মোমেন, সিলেট-৩ আসনের সংসদ সদস্য হাবিুবর রহমান হাবিব, স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব মুহম্মদ ইব্রাহিম, সিসিক মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী, লাফার্জহোলসিম বাংলাদেশের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ ইকবাল চৌধুরী সহ উভয় প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা।
সিলেট সিটি করপোরেশন এবং লাফার্জহোলসিম বাংলাদেশের যৌথ উদ্যোগে এটাই দেশের প্রথম ও একমাত্র প্লাস্টিক বর্জ্য পৃথকীকরণ প্ল্যান্ট। এই প্ল্যান্টের মাধ্যমে পরিবেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর অপচনশীল প্লাস্টিক জাতীয় পণ্য স্বয়ংক্রিয়ভাবে আলাদা করা সম্ভব হবে। এই
প্ল্যান্টটি চালুর ফলে সিলেট নগরী প্লাস্টিক বর্জ্যের হাত থেকে মুক্তি পাবে বলে আশা করছে সিসিক।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম বলেন, “প্লাস্টিক বর্জ্য টেকসই ব্যবস্থাপনা আমাদের দীর্ঘদিনের চ্যালেঞ্জ। পুরো পৃথিবীই এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বিভিন্ন ধরনের টেকসই পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। বাংলাদেশ সরকারও সরকারি পর্যায়ে বিভিন্ন স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদী প্রকল্প গ্রহণের মাধ্যমে প্লাস্টিক দূষণ হ্রাসে কাজ করে যাচ্ছে। সরকারের একার পক্ষে কঠিন এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা সম্ভব নয়, তাই প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানগুলোকে এগিয়ে আসতে হবে। আজ আমি লাফার্জহোলসিম এবং সিলেট সিটি করপোরেশন উভয় প্রতিষ্ঠানকে সাধুবাদ জানাই তাদের এই উদ্যোগের জন্য।”
সিলেটের মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী বলেন, “সিলেট সিটিকে একটি প্লাস্টিক মুক্ত নগরীতে রূপান্তর করা আমার অন্যতম লক্ষ্য। এই উদ্দেশ্যেই আমরা লাফার্জহোলসিমের সাথে কাজ করছি। সিলেটবাসীর কাছে আমার অনুরোধ আপনারাও সচেতন হোন এবং প্লাস্টিক পণ্য ব্যবহার কমান। যেখানে সেখানে প্লাস্টিক পণ্য ফেলে পরিবেশের ক্ষতি করবেন না। আপনাদের সাথে নিয়ে আমরা দেশের প্রথম প্লাস্টিক বর্জ্য মুক্ত নগরী হতে চাই।”
আজকের দিনটিকে মাইলফলক অর্জন উল্লেখ করে লাফার্জহোলসিম বাংলাদেশের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ ইকবাল চৌধুরী বলেন, “লাফার্জহোলসিম ছাতকে দেশের একমাত্র স্বয়ংসম্পূর্ণ প্ল্যান্টে বিভিন্ন ধরনের অপচনশীল পণ্য টেকসই উপায়ে কো-প্রসেস করছে। এই সুবিধা কাজে লাগিয়ে সিলেট সিটি করপোরেশন এর অপচনশীল প্লাস্টিক পণ্যগুলো আমরা কো-প্রসেস শুরু করতে যাচ্ছি। এর আগে পরীক্ষামূলক পর্যায়ে আমরা এক সাথে কাজ করেছি। ভবিষ্যতে সিলেট সিটি করপোরেশনের আশেপাশের পৌরসভাগুলোকেও এই সুবিধা ব্যবহারে আমরা উৎসাহিত করব।”
মোহাম্মদ ইকবাল চৌধুরী জানান, “একটি গবেষণা অনুসারে ২০২৫ সালে বাংলাদেশে মোট বর্জ্যর পরিমাণ বছরে ২০ মিলিয়ন টন ছাড়াবে। গত তিন দশক আগেও এর পরিমাণ ছিল ৫ মিলিয়ন টন। বর্তমানে প্রতি দশ বছরে বর্জ্য দ্বিগুণ হচ্ছে। এটা আমাদের দেশের জন্য একটা বিরাট চ্যালেঞ্জ। এই বর্জ্যর বড় একটা অংশ হলো প্লাস্টিক, যা পরিবেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। ২০২১ সালের রিপোর্ট অনুযায়ী বাংলাদেশে একজন মানুষ প্রতি বছর ৯ কেজি প্লাস্টিক পণ্য ব্যবহার করে, অর্থাৎ ১৭ কোটি জনসংখ্যা হিসাব করলে মোট প্লাস্টিক পণ্য ব্যবহারের পরিমাণ ১৬ লাখ টনেরও বেশি যার পুরোটাই পরিবেশে ফেরত আসছে। এ থেকে পরিত্রাণের একমাত্র উপায় হলো টেকসই উপায়ে এই প্লাস্টিক পণ্যগুলোর ব্যবস্থাপনা করা।”
একটি বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নীতি/আইন প্রণয়ন এবং বাস্তবায়নে মন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে মোহাম্মদ ইকবাল চৌধুরী বলেন, লাফার্জহোলসিমের একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ সিমেন্ট প্ল্যান্ট রয়েছে ছাতকে, যেখানে ক্লিংকার উৎপাদন করা হয়। একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ সিমেন্ট প্ল্যান্টে ক্লিংকার তৈরির সুবিধা থাকায় এই ধরনের প্ল্যান্টে টেকসই উপায়ে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা করা সম্ভব। জিওসাইকেল এমনই একটি টেকসই সমাধান। সারা বিশ্বে প্রায় ৫০টিরও বেশি দেশে হোলসিম গ্রুপ এই সুবিধা প্রদান করছে। বাংলাদেশে জিওসাইকেলের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয় ২০১৭ সালে। বর্তমানে বছরে প্রায় ১ লাখ টন বর্জ্য আমাদের জিওসাইকেল প্ল্যান্টে টেকসই উপায়ে ব্যবস্থাপনা করা সম্ভব। ভবিষ্যতে এর সক্ষমতা বছরে তিন লাখ টনে উন্নীত করতে যাচ্ছে লাফার্জহোলসিম।