নিষেধাজ্ঞা দিয়ে লুটপাটের তথ্য আড়াল করা যাবে না : শ্যামল দত্ত
বাংলাদেশ ব্যাংকে সাংবাদিক প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দিয়ে লুটপাটের তথ্য আড়াল করা যাবে না জানিয়ে জাতীয় প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক শ্যামল দত্ত বলেছেন, বর্তমান যুগে তথ্য গোপন রাখা সম্ভব নয়। যে কোনো উপায়ে তথ্য বের হবেই।
আজ বুধবার (১৫ মে) রাজধানীর পল্টনে ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরামে (ইআরএফ) অনুষ্ঠিত ‘সাংবাদিকদের প্রবেশাধিকারে বাংলাদেশ ব্যাংকের নিষেধাজ্ঞা আরোপ বিষয়ে সাংবাদিক নেতৃবৃন্দকে অবহিতকরণ’ বিষয়ক সভায় শ্যামল দত্ত এসব কথা বলেন। ইআরএফ সভাপতি রেফায়েত উল্লাহ মীরধার সভাপতিত্বে আয়োজিত অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম।
বাংলাদেশ ব্যাংকে সাংবাদিক প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দিয়ে কোনো লাভ হবে না মন্তব্যে করে শ্যামল দত্ত বলেন, রিজার্ভের যে অর্থ চুরি হয়েছে সে সময় চোরকে কি বাংলাদেশ ব্যাংকে আসতে হয়েছে? চোরকে তো বাংলাদেশের সীমানায় আসতে হয়নি। না এসেও তো চুরি করেঠে। চুরি ঠেকানো যায়নি।
আরও বলেন, একটি গ্রুপ সাত-আটটি ব্যাংকের মালিক হয় কীভাবে? এর মধ্যে আরেকটি ব্যাংক নিয়ে গেছে খুব সুন্দর কায়দা করে। তাই আলোচনায় সমাধান না হলে প্রয়োজনে আন্দোলনের মাধ্যমে অধিকার আদায় করতে হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকে সাংবাদিক প্রবেশে নিষেধাজ্ঞায় ব্যাংক রিপোর্টাররা আজ সমস্যায় পড়েছেন জানিয়ে বিএফউজের সভাপতি রুহুল আমিন গাজী বলেন, এটা সামনে আরও বাড়বে। ধীরে ধীরে সাংবাদিকরা আরও সমস্যার সম্মুখীন হবেন। দল, মতের বাইরে এসে পেশাদারিত্বের জায়গায় আমাদের ঐক্য গড়ে তুলতে হবে। সব সংগঠন সংঘবদ্ধ হয়ে এগুতে হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকে গভর্নরের দুর্বলতা আছে, সেটি ঢাকার জন্য তিনি সাংবাদিক প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন জানিয়ে ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজে) সভাপতি সোহেল হায়দার চৌধুরী বলেন, বর্তমান গভর্নরের আমলে বাংলাদেশ ব্যাংক কোনো সূচকেই সাফল্য অর্জন করতে পারেনি। পূর্ব কোনো ঘোষণা ছাড়াই ডলারের দাম এক লাফে সাত টাকা বাড়িয়ে দিলেন কীসের ভিত্তিতে? কিছু পীর-আউলিয়া-দরবেশদের সুবিধা দিতে গিয়েই সাংবাদিকদের এমন নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে।
সাংবাদিক যদি বাংলাদেশে থাকে তথ্য তাকে দিতেই হবে জানিয়ে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি শুকুর আলী শুভ বলেন, যখনি তথ্য দেবে না তখনি লুকোচুরির বিষয় থাকবে,বলেই আমরা ধরে নেব। আমাদের অধিকার আমাদের আদায় করে নিতে হবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের গেট বন্ধ করে অবস্থান নেব, প্রয়োজনে প্রেস ক্লাবের রাস্তা বন্ধ করে অবস্থান-কর্মসূচি পালন করব।
সাংবাদিকদের নিষেধাজ্ঞা দিয়ে শুধু ব্যাংক রিপোর্টার বা অর্থনীতির রিপোর্টারদের অসম্মান করা হচ্ছে না, এটি পুরো গণমাধ্যমের গলা টিপে ধরা হচ্ছে জানিয়ে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাধারণ সম্পাদক মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, আমাদের সবার উচিত বাংলাদেশ ব্যাংকের সামনে ঐক্যবদ্ধ হয়ে অবস্থান নেওয়া। বাংলাদেশ ব্যাংকের অনেক কর্মকর্তার দুর্নীতির ফাইল জমা হয়ে আছে। এ বিষয়গুলো নিয়ে কাজ করলে তারা নিজেরাই আমাদের কাছে চলে আসবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের অনিয়ম ও দুর্নীতি প্রকাশ করলে তাদের সমস্যা হয় মন্তব্যে করে ইআরএফের প্রতিষ্ঠাতা আহ্বায়ক ও ফিনান্সিয়াল এক্সপ্রেসের সম্পাদক শামসুল হক জাহিদ বলেন, আর এই কারণেই কেন্দ্রীয় ব্যাংকে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। সহকর্মীরাদের ফোন ট্র্যাকিং করা হচ্ছে এমন অভিযোগ উঠেছে জানিয়ে ইআরএফের সভাপতি রেফায়েত উল্লাহ মীরধা বলেন, আমরা অনেক চেষ্টা করেছি, গভর্নরের সঙ্গে কথা বলেছি। উনি বলেছেন ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু দেড় মাস পার হলেও এখনো আমাদের সহকর্মী সাংবাদিক ভাইয়েরা বাংলাদেশ ব্যাংকে প্রবেশ করতে পারছেন না। আগে সাংবাদিকরা যেভাবে সহজে যেকোনো অফিসারের সঙ্গে কথা বলতে পারতেন তা এখন পারছেন না। সহকর্মীরা বলছেন যে তাদের ফোন ট্র্যাকিং করা হচ্ছে। যা ভয়ানক ব্যাপার। এ অবস্থা চলতে থাকলে সবার পরামর্শ ও অংশগ্রহণে বৃহত্তর কর্মসূচি দেওয়া হবে।