খুলনায় গিভ বাংলাদেশ ফাউন্ডেশনের বৃক্ষরোপণ
গত শনিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলায় বাস্তবায়িত হয়েছে গিভ বাংলাদেশ ফাউন্ডেশনের প্রজেক্ট অক্সিজেন ৪.০। বনায়ন ও সচেতনতার মাধ্যমে বাংলাদেশের উপকূলের সবুজায়ন পুনরুজ্জীবিতকরণের দৃঢ় প্রত্যয় নিয়ে ৫০ হাজার বৃক্ষরোপণ করা হয়।
তিনটি পর্যায়ে প্রজেক্ট অক্সিজেনের বৃক্ষরোপণ বাস্তবায়ন সাজানো হয়- সুন্দরবন থেকে বীজ সংগ্রহ, বীজ থেকে চারা তৈরি এবং ডুমুরিয়ার নির্দিষ্ট এলাকায় চারা রোপণ। শুধু বৃক্ষরোপণই নয়, পরিচর্যাকে প্রাধান্য দিয়ে ও টেকসইকরণের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে “ক্লাইমেট গ্র্যাজুয়েশন প্রোগ্রাম” এর মাধ্যমে জলবায়ু-ঝূকিপুর্ণ অঞ্চলে ‘ক্লাইমেট চ্যাম্পিয়ন’ যুবসমাজ তৈরীতে স্থানীয় ৪টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ৬০০ শিক্ষার্থীর মধ্যে বৃক্ষরোপণের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে প্রাথমিক ওয়ার্কশপ ও প্রাক-মূল্যায়ন এবং আগামী তিন মাস রেগুলার ওয়ার্কশপ, এসেসমেন্ট এবং ফিল্ড ভিজিটের মাধ্যমে দীর্ঘমেয়াদী সচেতনতা সৃষ্টির চেষ্টা করা হবে।
স্থানীয় সম্প্রদায়ের অংশীদারিত্ব করার জন্য স্থানীয় ধর্মীয় নেতাদেরকে সক্রিয়ভাবে এই উদ্যোগের আওতায় আনা হয়েছে, যা জলবায়ু-সচেতন সম্প্রদায় তৈরিতে ভূমিকা পালন করবে। উপকূলীয় সহিষ্ণুতার কথা মাথায় রেখে অধিক অক্সিজেন উৎপাদন এবং কার্বন নিঃসরণে সক্ষম উপযোগী গাছ নির্বাচন করা হয়েছে। নদীর তীর এবং রাস্তার কিনারা ঘেষে ১৪.৬৩ হেক্টর জমিতে ম্যানগ্রোভ বন তৈরির জন্য গেওয়া, সুন্দরী, গোলপাতা, কেওড়া, গড়ান, কাকারা, পশুর, অর্জুন, নিম, বহেড়া, অর্জুন ও হরিতকী গাছের চারা রোপণ করা হয়েছে।
অংশীদার হিসেবে ছিলো পানি উন্নয়ন বোর্ড (বিডব্লুউডিবি) ও খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল শিক্ষার্থী, এবং সহযোগী সংগঠন হিসেবে প্রজেক্টের অর্থায়নে কাজ করেছে কেকে ফাউন্ডেশন ও অপ্ট্রিয়াম, আর বাস্তবায়ন সহযোগী হিসেবে সোনামুখ পরিবার। গিভ বাংলাদেশের ভলান্টিয়াররা “১৫ টাকায় ১টি গাছ” প্রতিপাদ্যে সোশ্যাল মিডিয়া ভিত্তিক গণঅর্থায়ন ক্যাম্পেইনের মাধ্যমে জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত সম্পৃক্ততার দ্বারা আর্থিক অনুদান সংগ্রহ করে। ক্লাইমেট গ্র্যাজুয়েশন প্রোগ্রাম তরুণদের সংযুক্ত করেছে, এক্ষেত্রে গিভ বাংলাদেশের সাথে কাজ করেছে স্থানীয় চারটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। বানীয়াখালী উচ্চ বিদ্যালয় (২০০ জন), জিকেএসকে আইডিয়াল হাই স্কুল (১৫০ জন), সুপার সেনপাড়া বাহারুল উলুম দাখিল মাদ্রাসা (১৫০ জন) এবং শরাফপুর দারুল কুরআন মাদ্রাসার (১৫০ জন) শিক্ষার্থীরা অংশগ্রহণ করছে এই প্রোগ্রামে। এই ৬০০ শিক্ষার্থীকে ৬০ টি দলে বিভক্ত করে গাছের নিয়মিত তত্ত্বাবধায়ন ও পর্যবেক্ষণে সম্পৃক্ত করে সফলতার পুরস্কারস্বরূপ সার্টিফেকেট প্রদান এবং প্রাতিষ্ঠানিক ফ্রেমওয়ার্কে যুক্ত করার মাধ্যমে তাদের জলবায়ু সচেতনতায় উৎসাহিত করা হচ্ছে।
জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত উপকূলীয় এলাকায় পরিকল্পিতভাবে বৃক্ষরোপণের মাধ্যমে ভবিষ্যত প্রাকৃতিক দুর্যোগের বিরুদ্ধে উপকূলকে শক্তিশালী করা এবং পরিবেশ রক্ষার সচেতনতা তৈরির মাধ্যমে স্থানীয় সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীকে ক্ষমতায়ন করা প্রজেক্ট অক্সিজেনের প্রাথমিক উদ্দেশ্য। তবে এ ধাপের উদ্দেশ্য ছিল বনায়নের লক্ষ্য নিয়ে স্থানীয় সম্প্রদায়কে সরাসরি পরিচর্যায়ও যুক্ত করা। রোপণের পর গাছের পরিচর্যা করার দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে স্থানীয়দের। আটটি গ্রামের ৭০০০ মানুষ সরাসরি এই প্রকল্প থেকে সুবিধা পাবে। ২০২০ সালে ইমার্জেন্সি রেস্পন্সের অংশ হিসেবে শুরু হয় প্রজেক্ট অক্সিজেন। বাংলাদেশের উপকূলবর্তী এলাকাগুলোতে প্রাকৃতিক দুর্যোগের বিরুদ্ধে লড়াই করতে খুলনার কয়রায় প্রথম স্বাধীনতার ৪৯তম বছরে ৪৯ মিনিটে ৪৯ হাজার গাছ রোপণ করা হয়।
২০২১ সালে প্রজেক্ট অক্সিজেন ২.০ এর আওতায় খুলনার ডুমুরিয়ায় ১৬০০, এবং ২০২৩ সালে প্রজেক্ট অক্সিজেন ৩.০ এর অধীনে সাতক্ষীরার শ্যামনগরে ৩০০০ গাছের চারা রোপণ করা হয়।
অনুদান এবং স্বেচ্ছাসেবার মাধ্যমে দেশের উন্নয়নে অংশ নেয়ার সুযোগ করে দেওয়ার একটি ভিন্নধর্মী শপথকে উদ্দেশ্য করে ২০১৮ সালে গিভ বাংলাদেশ ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠিত হয়। ইমার্জেন্সি রেসপন্স ছাড়াও গিভ বাংলাদেশের পাঁচটি ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট রয়েছে। সুপেয় পানিসংক্রান্ত বিভিন্ন সমস্যার দীর্ঘমেয়াদী ও সাশ্রয়ী সমাধানের জন্য প্রজেক্ট ‘অম্বু’ কাজ করে। প্রজেক্ট ‘ফলন’ কৃষকদের মূলধনের নিশ্চয়তা ও প্রশিক্ষণ নিয়ে কাজ করে থাকে। প্রজেক্ট ‘পথচলা’ যৌনকর্মীর শিশুদের মূলধারার অংশ হিসেবে তৈরি করার লক্ষ্যে কাজ করে। প্রজেক্ট ‘কন্যা’ বাংলাদেশের শহর ও গ্রামে কিশোরী ও প্রাপ্তবয়স্ক নারীদের নিরাপদ মাসিক স্বাস্থ্যবিধি সম্পর্কে সচেতন করে থাকে। প্রজেক্ট ‘লড়াই’ প্রান্তিক এবং সুবিধাবঞ্চিত নারীদের অর্থনৈতিক উন্নয়নের লক্ষ্যে কাজ করে থাকে। গিভ বাংলাদেশ প্রত্যেক ব্যক্তি এবং প্রতিষ্ঠানকে উন্নয়ন সমস্যা নিরসন করে ইতিবাচক পরিবর্তন আনার আহবান জানায়। প্রজেক্ট অক্সিজেন এবং অন্যান্য উদ্যোগ নিয়ে আরো জানতেঃ [email protected]