ভোমরা স্থলবন্দরে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম স্বাভাবিক, রাজস্ব আদায় বেড়েছে
সম্প্রতি নানা প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্যেও সাতক্ষীরার ভোমরা স্থল বন্দরের আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম স্বাভাবিক রয়েছে। ভারত থেকে আমদানিকৃত পণ্যবাহী ট্রাকের সঙ্গে বৃদ্ধি পেয়েছে রাজস্ব আদায়। ১ ডিসেম্বর থেকে ৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত গত চার দিনে ভারত থেকে এ বন্দর দিয়ে ৯০০ ট্রাক পণ্য আমদানি হয়েছে। যেখান থেকে সরকার রাজস্ব পেয়েছে ১০ দশমিক ২৯ কোটি টাকা। আর ২০২৩-২৪ অর্থবছরে রাজস্ব আদায় হয়েছিল ৯০৭ দশমিক ৫৮ কোটি টাকা। যেখানে ২০২২-২৩ অর্থবছরে রাজস্ব আদায় হয়েছিল মাত্র ৬৩১ কোটি ৭১ লাখ ৮৭ হাজার ৯৭৩ হাজার টাকা।
জুলাই-আগস্ট ছাত্র-জনতার বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে গণ-অভ্যুত্থানের মধ্যে ব্যবসায়ীরা কিছুটা বিপাকে থাকলেও আমদানি-রপ্তানিতে খুব বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়েনি ভোমরা বন্দরে। এ স্থলবন্দরের ব্যবস্থাপনা ও বন্দরের ব্যবসায়ী সংগঠন সিএন্ডএফ অ্যাসোসিয়েশনের সার্বিক ও সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা ও শ্রমিক সংগঠনের ইতিবাচক ভূমিকার কারণে আগের চেয়ে বন্দরের রাজস্ব আদায় বৃদ্বি পেয়েছে।
ভোমরা স্থলবন্দরের দেওয়া তথ্যমতে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জুলাই থেকে নভেম্বর পর্যন্ত সাত লাখ ৮৭ হাজার ৮৯৬ মেট্রিক টন বিভিন্ন পণ্য আমদানি হয়েছে। আর রাজস্ব এসেছে ৫১৯ দশমিক ৭৮ কোটি টাকা। যেখানে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের ১ জুলাই থেকে ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত ১০ লাখ ৯৮ হাজার ৭০১ মেট্রিক টন পণ্য আমদানি হলেও রাজস্ব আদায় হয় ৩৪১ দশমিক ৯০ কোটি টাকা। এই সময়ের মধ্যে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের চেয়েও ২০২৩-২৪ অর্থবছরে পণ্য আমদানি বেশি হলেও রাজস্ব আদায় বেশি হয়েছে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে। গত পাঁচ মাসে পণ্য আমদানি কম হলেও ১৭৭ দশমিক ৮৭ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় বেশি হয়েছে। আর বাংলাদেশ থেকে এ বন্দর দিয়ে গত নভেম্বর মাসে তিন কোটি সাত লাখ ৫০ হাজার ৯৭৫ মেট্রিক টন পণ্য দুই হাজার ৮৪ ট্রাকে ভারতে রপ্তানি হয়েছে।
সাতক্ষীরা ভোমরা স্থলবন্দর আমদানি-রপ্তানিকারক অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি রহিত ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী রামকৃষ্ণ চক্রবর্তী বলেন, কোভিড ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং পরবর্তী সময়ে মধ্যপ্রাচ্য সংকটের কারণে বিশ্ব অর্থনীতিতে এক ধরনের অস্থিরতা তৈরি হয়েছিল। বিশ্বের অনেক বড় বড় বন্দরের ন্যায় বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম স্থলবন্দর ভোমরা, বেনাপোল ও চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর দেশের বিভিন্ন বন্দরে আমদানি-রপ্তানিতে মন্দা ভাব দেখা দেয় এবং অর্থনীতে কিছুটা ধাক্কা লাগে। এরপর চলতি বছর জুলাই-আগস্টে দেশে শুরু হয় ছাত্র-জনতার বৈষম্যবরোধী আন্দোলন, যা আগস্টেও অব্যাহত ছিল। ওই সময় আন্দোলন, কারফিউ, ব্যারিকেডের কারণে আমদানি-রপ্তানিতে কিছুটা অচলাবস্থা সৃষ্টি হয়। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য।
রামকৃষ্ণ চক্রবর্তী আরও বলেন, এত সব প্রতিবন্ধকতার পরও ভোমরা স্থলবন্দরে রাজস্ব আদায় তুলনামূলকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। ভারতের ঘোজাডাঙ্গা বন্দর দিয়ে পণ্য আমদানিতে অর্জন করেছে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি। কিন্তু আগরতলায় বাংলাদেশ হাইকমিশনে হামলা ও পতাকা অবমাননার ঘটনায় নতুন করে অস্থিরতা সৃষ্টি হওয়ায় বেনাপোল বন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরের আমদানি-রপ্তানি ঝুঁকির মধ্যে পড়ে। অনেকস্থানে আমদানি-রপ্তানি বাধাগ্রস্ত হয়। কিন্তু ভোমরা স্থলবন্দরের আওতামুক্ত থাকায় এখনও পর্যন্ত স্বাভাবিক রয়েছে বন্দরের সব কার্যক্রম।
ভোমরা স্থলবন্দরের রাজস্ব কর্মকর্তা মো. শফিউল বাসার ও সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা মো. আব্দুর রাকিব জানান, ভোমরা স্থলবন্দরের আমদানি-রপ্তানি স্বাভাবিক রয়েছে। গত অর্থবছরের চেয়ে পণ্য কম আমদানি হলেও বন্দরের রাজস্ব বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জুলাই থেকে নভেম্বর পর্যন্ত সাত লাখ ৮৭ হাজার ৮৯৬ মেট্রিক টন বিভিন্ন পণ্য আমদানি হয়েছে। সেখান থেকে রাজস্ব এসেছে ৫১৯ দশমিক ৭৮ কোটি টাকা। যেখানে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের ১ জুলাই থেকে ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত ১০ লাখ ৯৮ হাজার ৭০১ মেট্রিক টন পণ্য আমদানি হলেও রাজস্ব আদায় হয় ৩৪১ দশমিক ৯০ কোটি টাকা। এই সময়ের মধ্যে গত ৫ মাসে পণ্য আমদানি কম হলেও ১৭৭ দশমিক ৮৭ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় বেশি হয়েছে। শুধু গত নভেম্বর মাসে ভোমরা বন্দরের আমদানিকৃত পণ্যবাহী ট্রাকের সংখ্যা ছয় হাজার ৫৫২টি। যা থেকে রাজস্ব্য আদায় হয়েছে ১২২ কোটি ১৫ লাখ টাকা। আর ১ ডিসেম্বর থেকে ৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত ভারত থেকে আমদানিকৃত ২২০টি পণ্যবাহী ট্রাক ভোমরা বন্দরে প্রবেশ করেছে। এর মধ্যে পাথর, পেঁয়াজ, চাল, আদা, সরিষাল খৈল, শুকনা মরিচ, ফল, হলুদ ও ডাল উল্লেখযোগ্য।
সাতক্ষীরা ভোমরা স্থলবন্দরের ব্যবসায়ী সংগঠন ভোমরা সিঅ্যান্ডএফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক আবু মুসা বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন ইসুতে ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে বৈরী অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। ফলে দুই দেশের ব্যবসায়ীরা আমদানি-রপ্তানি নিয়ে অনেকটা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে। নানা প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্যেও সাতক্ষীরার ভোমরা স্থল বন্দরের আমদানি-রপ্তানি স্বাভাবিক রয়েছে।