বাংলাদেশ থেকে গার্মেন্টসের অর্ডার সরে যাচ্ছে ভারতে
বাংলাদেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর থেকেই দেশের অর্থনীতিতে ব্যাপক প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। এ সংকট দেখা দিয়েছে তৈরি পোশাক শিল্পেও। ইতোমধ্যে আমদানিকারকরা বাংলাদেশের বিকল্প হিসেবে ভারতসহ অন্য দেশকে রপ্তানিকারক হিসেবে অনুসন্ধান করতে উৎসাহিত হচ্ছে।
আজ মঙ্গলবার (১৪ জানুয়ারি) এক প্রতিবেদনে বার্তাসংস্থা রয়টার্স এতথ্য জানিয়েছে। বাংলাদেশে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার কারণে পোশাক আমদানিকারকরা ভারতসহ বিকল্প রপ্তানিকারক খুঁজছে। এদিকে ভারতও এ ব্যাপারে প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করেছে।
ভারতীয় সরকারি সূত্রের বরাত দিয়ে রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তারা আগামী বাজেটে টেক্সটাইল ও পোশাক শিল্পকে চাঙ্গা করার লক্ষ্যে কাজ করছে। তারা আর্থিক সহায়তা বৃদ্ধি করে পোশাক শিল্পের মূল উপকরণের ওপর শুল্ক হ্রাস করার পরিকল্পনা করছে এবং স্থানীয়ভাবে উৎপাদনের জন্য দুটি প্রণোদনা দেওয়ার কথা জানিয়েছে।
রয়টার্সের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, প্রতিবেশি বাংলাদেশের চলমান রাজনৈতিক সংকটের কারণে বিশ্বব্যাপী খুচরা বিক্রেতারা পোশাক আমদানির জন্য ভারতসহ বিকল্প দেশগুলোকে অনুসন্ধান শুরু করেছে।
ভারতের পোশাক রপ্তানি প্রচার কাউন্সিলের মহাসচিব মিথিলেশ্বর ঠাকুর বলেন, ‘মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পোশাক আমদানির জন্য বিকল্প খুঁজছে। এরমধ্যে ভারতও রয়েছে। এদিকে গত কয়েক মাস ধরে ভারত রপ্তানির অর্ডার নিতে হিমশিম খাচ্ছে।
একটি সূত্র জানিয়েছে, ভারতের টেক্সটাইল খাতে প্রায় সাড়ে ৪ কোটি মানুষ কাজ করছেন। আগামী অর্থবছরের দেশটি তার বাজেটে টেক্সটাইল মন্ত্রণালয়ের জন্য ১০ থেকে ১৫ শতাংশ বাড়ানোর চিন্তাভাবনা করছে। বর্তমানে এই মন্ত্রণালয়ে ৪৪ দশমিক ১৭ বিলিয়ন রুপি (৫১১ মিলিয়ন ডলার) বরাদ্দ দেওয়ার কথা বিবেচনা করছে।
সূত্রটি আরও জানিয়েছে, সরকার চলতি অর্থবছরের জন্য টেক্সটাইল খাতের জন্য উৎপাদন-সংযুক্ত প্রণোদনার বরাদ্দ ৪৫০ মিলিয়ন রুপি থেকে বাড়িয়ে প্রায় ৬০ রুপি করতে পারে। এই প্রকল্পের আওতায়, সরকার স্থানীয়ভাবে উৎপাদনকারী কোম্পানিগুলোকে কর প্রণোদনা এবং অন্যান্য ছাড় প্রদান করবে।
ভারত সেদেশের টেক্সটাইল যন্ত্রপাতির পাশাপাশি পলিয়েস্টার এবং ভিসকস স্ট্যাপল ফাইবারের মতো কাঁচামালের ওপর শুল্ক হ্রাসের বিষয়টিও বিবেচনাধীন রেখেছে বলে জানা গেছে।
এদিকে চলতি অর্থবছরের নভেম্বর পর্যন্ত প্রথম আট মাসে ভারতের টেক্সটাইল ও পোশাক রপ্তানিতে ৭ শতাংশের বেশি বৃদ্ধি পেয়ে ২৩ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে। যেখানে মোট পণ্য রপ্তানিতে মাত্র ২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি ছিল।
ভারতের পোশাক রপ্তানি উন্নয়ন কাউন্সিলের মহাসচিব মিথিলেশ্বর ঠাকুর বলেন, তৈরি পোশাক রপ্তানি গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ১১ শতাংশের বেশি বৃদ্ধি পেয়ে প্রায় ১০ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে এবং মার্চের শেষ নাগাদ ১৬ বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করবে বলে আশা করা হচ্ছে।
এদিকে, রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে যুক্তরাষ্ট্রে তুলনামূলকভাবে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি কমেছে। মার্কিন টেক্সটাইল ও পোশাক অফিসের তথ্য অনুসারে, গত বছরের জানুয়ারি মাস থেকে নভেম্বর মাস পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের রপ্তানি ০ দশমিক ৪ শতাংশ কমে ৬ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে। অপরদিকে ভারতের রপ্তানি ৪ দশমিক ২৫ শতাংশ বেড়ে ৪ দশমিক ৪ বিলিয়ন ডলার পৌঁছেছে।
শহিদুল্লাহ আজিম নামের বাংলাদেশের এক কারখানার মালিক রয়টার্সকে বলেছেন, আমার বেশিরভাগ ক্রেতা হলো উত্তর আমেরিকা এবং ইউরোপিয়ান দেশগুলো। কিন্তু বাংলাদেশের চলমান সংকটের কারণে কিছু আমেরিকান ক্রেতা ভারত, ভিয়েতনামসহ অন্য দেশগুলোর দিকে ঝুঁকেছে।