অনশনরত দুই শিক্ষার্থীই হাসপাতালে, এবার সহপাঠীরা অনশনে
অনশনরত দুই শিক্ষার্থীই হাসপাতালে, এবার সহপাঠীরা অনশনেবহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের দাবিতে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনে আমরণ অনশনরত দুই শিক্ষার্থীর শারীরিক অবস্থা খারাপ হওয়ায় তাদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এর মধ্যে ইমামুল ইসলামকে গতকাল শনিবার এবং মোবারক হোসেন নোমানকে আজ রোববার রাতে খুলনা মেডিকেল কলেজ ভর্তি করা হয়েছে। তবে দুই শিক্ষার্থীর বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের দাবির প্রতি সমর্থন জানিয়ে তাদের সহপাঠীরা সেখানে অনশন করতে বসেছেন।
এদিকে আজ রোববার খুলনার বাম গণতান্ত্রিক জোটের নেতারা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে গিয়ে দুই শিক্ষার্থীর সঙ্গে দেখা করেছেন এবং তাদের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের পাশাপাশি শিক্ষকদের বরখাস্ত ও অপসারণের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন। নেতারা বলেছেন, কর্তৃপক্ষের এই ধরনের আচরণ ‘সামন্ততান্ত্রিক ও স্বৈরাচারী মানসিকতার বহিঃপ্রকাশ’।
তবে কর্তৃপক্ষ বিশ্ববিদ্যালয়কে ‘রাজনীতিমুক্ত’ উল্লেখ করে রাজনৈতিক নেতাদের সেখানে উপস্থিত হওয়ায় ‘উদ্বেগ’ প্রকাশ করেছে। এতে পরিস্থিতি আরো ‘জটিল আকার’ ধারণ করবে বলে আশঙ্কা করছে কর্তৃপক্ষ।
গত বছরের জানুয়ারিতে ছাত্রদের পাঁচ দফা দাবি আদায়ের সময় শিক্ষকদের সঙ্গে এই দুই ছাত্র অসৌজন্যমূলক আচরণ করেন বলে শিক্ষকেরা অভিযোগ করেছিলেন। সেই অভিযোগের ভিত্তিতে সম্প্রতি এই দুই শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার এবং ছাত্র আন্দোলনে উসকানি দেওয়ার অভিযোগে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
শিক্ষার্থীরা গত ১৬ জানুয়ারি সংবাদ সম্মেলন করে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তাঁদের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের দাবি জানান। এরপর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে ৪৮ ঘণ্টা অবস্থান ধর্মঘট পালন করেন। এরই ধারাবাহিকতায় গত ১৯ জানুয়ারি সন্ধ্যা থেকে একই স্থানে অমরণ অনশন শুরু করেন তাঁরা। শিক্ষার্থীদের সহপাঠীরা বিভিন্ন সময় মোমবাতি প্রজ্জ্বলন এবং দুই শিক্ষার্থীর দাবির সমর্থনে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে। আজ রোববার অনশনের ষষ্ঠ দিন অতিবাহিত হচ্ছে।
এরই মধ্যে গতকাল শনিবার ছাত্রদের আন্দোলনের ‘উসকানি’র দেওয়ার দায়ে বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেটের ২১২তম সভায় বাংলা ডিসিপ্লিনের সহকারী শিক্ষক মো. আবুল ফজলকে বরখাস্ত এবং ইতিহাস ও সভ্যতা ডিসিপ্লিনের প্রভাষক হৈমন্তী শুক্লা কাবেরী ও বাংলা ডিসিপ্লিনের প্রভাষক শাকিলা আলমকে অপসারণ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের মানসিকতা সামন্ততান্ত্রিক : বামনেতারা
বাম গণতান্ত্রিক জোটের নেতারা খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বরখাস্ত ও অপসারণের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন। পাশাপাশি দুজন শিক্ষার্থীর বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের দাবিও জানিয়েছেন তাঁরা। আজ দুপুরে অনশনরত ছাত্রদের প্রতি সংহতি প্রকাশের জন্য বাম গণতান্ত্রিক জোটের নেতারা খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে যান এবং তাদের খোঁজখবর নেন ও আন্দোলনের প্রতি সহানুভূতি প্রকাশ করেন।
পরে বিকেলে বাম গণতান্ত্রিক জোটের খুলনার সমন্বয়কারী মুনির চৌধুরী সোহেল গণমাধ্যমের কাছে একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তি পাঠান।
বাম গণতান্ত্রিক জোটের নেতারা বলেন, ‘একটি গণতান্ত্রিক দেশে যেকোনো প্রতিষ্ঠান বা সংগঠন তাদের দাবি-দাওয়া পেশ করার অধিকার রাখে। বিশ্ববিদ্যালয় দেশের একটি সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ; যেখানে নৈতিকতা, আদর্শ, সুস্থ ও মননশীল চিন্তার শিক্ষার একটি স্থান।’
‘খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক এই কর্মকাণ্ডে আমরা বিস্মিত। এটা স্বৈরতান্ত্রিকতার বহিঃপ্রকাশ’, বলা হয় বার্তায়।
বাম নেতারা আরো বলেন, ‘প্রথমত ছাত্ররা তাদের অভাব-অভিযোগ জানাতে পারেন, এটা তো কোনো রাজনীতির মধ্যে পড়ে না। সুতরাং কী করে কর্তৃপক্ষ এটাকে রাজনীতির সংজ্ঞায় সংজ্ঞায়িত করলেন আমরা বুঝতে পারছি না। এটা সম্পূর্ণ সামন্ততান্ত্রিক মানসিকতার কথাই মনে করিয়ে দেয়।’
‘পরিস্থিতি আরো জটিল হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে’
এদিকে আজ সন্ধ্যায় খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ শাখা থেকে গণমাধ্যমে একটি বিবৃতি পাঠানো হয়।
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করছে, অনশনরত দুজন শিক্ষার্থীর এহেন আচরণ সত্ত্বেও বাইরের কয়েকটি রাজনৈতিক দল বা বিভিন্ন মতাদর্শের সংগঠন নিয়মবহির্ভূতভাবে রাজনীতিমুক্ত খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে অনশনরত শিক্ষার্থীদের নানাভাবে সমর্থন দিচ্ছে। তাঁরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বা কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে প্রকৃত ঘটনা অবহিত না হয়েই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বা কর্তৃপক্ষ নিয়ে নানা বিরূপ মন্তব্য করছেন যা বিভিন্ন মিডিয়ায় প্রকাশিত হচ্ছে।’
‘এটা খুবই দুঃখজনক, হতাশা ও উদ্বেগের। এতে পরিস্থিতি আরো জটিল হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। কারণ, আপামর খুলনাবাসী, রাজনৈতিক দলসহ সুশীল সমাজ, বুদ্ধিজীবী ও সামাজিক সংগঠন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়কে রাজনীতিমুক্ত রাখতে বদ্ধপরিকর এবং তারা কখনো কোনো ঘটনায় হস্তক্ষেপ করেননি। এমতাবস্থায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সব মহলের প্রতি খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভূত পরিস্থিতি নিরসনে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধিবিধান সমুন্নত রেখে সমাধানে ভূমিকা রাখার জন্য আহ্বান জানাচ্ছে’, যোগ করা হয় বিবৃতিতে।
এর আগে গত শুক্রবার সকাল ১০টায় খুলনা সিটি করপোরেশনের মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক অনশনরত দুই শিক্ষার্থী কাছে গিয়ে দীর্ঘক্ষণ কথা বলেন। এ সময় তিনি তাঁদের অনশন প্রত্যাহার করে শিক্ষকদের কাছে দুঃখ প্রকাশ করার অনুরোধ জানান। কিন্তু ছাত্ররা আগে বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করার পক্ষে অনড় থাকেন। একইসঙ্গে শিক্ষার্থীরা কোনো চিকিৎসা নিতে হাসপাতালে যেতেও অস্বীকার করেন।
সর্বশেষ সিটি মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক শিক্ষার্থীদের বিকেল ৩টা মধ্যে দুঃখ প্রকাশ করে একটা চিঠি বিশ্ববিদ্যালয়কে দিতে অনুরোধ করেন।